“ব্রোকলি হচ্ছে একধরনের সবুজ ফুলকপি। এ সবজি নতুন ও অপ্রচলিত একটি সবজি। দিন দিন ফুলকপির চাইতে ব্রোকলির পুষ্টিগুণ বেশি থাকায়, এটি একটি লাভজনক সবজি হয়ে উঠছে ।
এর গুনাগুন ও স্বাদের জন্য এটি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে । এ সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ।
আজ আমরা আপনাদের সাথে ব্রোকলি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই ব্রোকলি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমাদের সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজেনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
চলুন দেখে নেই ব্রোকলি চাষের বিস্তারিত
এতে রয়েছে প্রতি ১০০ গ্রামে রয়েছে প্রোটিন -৩.৩ গ্রাম , শ্বেতসার -৩৫০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিনএ -২০০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি প্রচুর পরিমানে রয়েছে, সাথে ক্যালসিয়াম, লৌহও আছে । তাই এ সবজি অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে যেমনঃ মেয়েদের স্তন ক্যান্সার, রাতকানা রোগ ।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সান্টা বারবার জানিয়েছেন ব্রোকলিতে আইসোথিয়োসায়ানেটস নামে বিশেষ ধরনের যৌগিক পদার্থ রয়েছে যাতে করে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
আমাদের দেশে মানুষ এ সবজিকে আগে বিদেশি সবজি বলতো। আজ এ অপরিচিত ফসলটি হয়ে উঠেছে দারুন লাভজন একটি ফসল।কারন সাধারণ ফুলকপির চাইতে এর বাজার মূল্য বেশি এবং বেশ কয়েকবার সংগ্রহ করা যায়।
জলবায়ু
ব্রোকলি চাষের জন্য নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ূ প্রয়োজন। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও খরচ সহিঞ্চু একটি ফসল। সাধারনত ১৫-২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় এ ফসল ভালো জন্মে।
তবে আমাদের দেশে শীতকালই শ্রেয় ,এটি উৎপাদনের জন্য। এর অনেক গুলো জাত রয়েছে তার মধ্যে ডিসিক্কো, এল-সেনট্রো, প্রিমিয়াম এ্যাপ, গ্রীন-ডিউক, গ্রীন কমেট, ক্রসেডার, টপার ৪৩, ডান্ডি, ইটালিয়ান , গ্রীন,স্প্রডিটি, টেক্রাম ১০৭, ওয়াল আম ২৯ ইত্যাদি।
বীজ বপন ও চারা রোপন
বাংলামাসের ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য অক্টোবর-আগস্ট) থাকে কার্তিক পর্যন্ত (মধ্য নভেম্বর) রোপন করা যায়। তবে সেপ্টেম্বরে শেষেও রপন করা যায়। হেক্টর প্রতি ১৫০ গ্রাম বীজ লাগে।
ব্রোকলি চাষে সব থেকে বেশি প্রয়োজন মিহী মাটির। আশ-পাশে ভালো জলের উৎস থাকলে খুবই ভালো হয়। দো-আঁশ মাটি ছাড়াও এঁটেল মাটি ও ভিটি মাটিতেও এর চাষ করা যায়।
মাটি তৈরি করার পর বীজ ছিটিয়ে দিয়ে প্রথমে চারা উঠাতে হয়।
তারপর ১০-১২ দিনের চারা গুলো দ্বিতীয় বেডে স্থানান্তর করতে হয় এবং প্রতিটি বেড ৫-০ সেমি দুরত্বে সারি করে, ২.৫ সেন্টিমিটার দূরে রোপন করতে হয়। চারা রোপনের পর পরিমান মত জল সেচ দিতে হবে।
এখানে যে চারা গুলো দ্বিতীয় বেডে স্থানান্তর করতে হবে তার জন্য সার প্রদানের বিবরণ
টিএসপি – ১৫০ গ্রাম
ইউরিয়া – ১০০গ্রাম
এমপিও – ১০০ গ্রাম
সার একসাথে মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে মাটি অবশ্যই রসযুক্ত হতে হবে।
রোদ পায় এমন জমি ৪-৫ বার আড়াআড়ি ভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হবে। বেডের পানি নিষ্কাশনের নালা ৩০ সেমি. প্রশস্ত হতে হবে। নালা ১০-১৫ সেমি. গভীর নালা হতে হবে।
নালার মাটি তুলে বেড উঁচু করতে হবে। এক্ষেত্রে মাটির অম্লক্ষারক যদি ৫.৫ এর নিচে হলে প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি চুন দিতে হবে।
রোপনের পরর্বতী রক্ষনাবেক্ষন
চারা রোপনের ৭ দিন পরপর হালকা জল সেচ দিতে হবে। সেচের পর মাটিতে জো আসার পর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য, মাটির চাকা ভেঙে দিতে হবে, সেই সাথে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে আর পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা যেন থাকে সে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও বিশেষ ভাবে নালা পরিষ্কারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, কারন নালায় জল জমে গেলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ১ বিঘা জমিতে ৪-১.৫ ফিট দুরত্বে বেডগুলো সাজাতে হবে, ২১ টনের মত গোবর দিয়ে ২-৩ বার চাষ করতে হবে ।
তারপর বিঘাপ্রতি ১০:২৬:২৬ বা ২৫:৩০ ও ৫ কিলোগ্রাম ইউরিয়া পুরো জমিতে দিয়ে ভালো করে চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে।
পোকার আক্রমন ও রোগবালাই দমন
এ ফসলে ডিবিএম (ডায়মন্ড বাগ মথ ) পাতার পিছনে ডিম পাড়ে এবং এ পোকা পাতা ঝাঁঝরা করে দেয়। এ পোকা দমনে নিম জল স্প্রে করা যায়, আবার নোভালিউরন ১০% ইসি/ রিমন- প্রতি ১ লিটার জলে ১ মিলিগ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা মরে যাবে।
এছাড়াও জাত পোকা রয়েছে যার জন্য নিমজল ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা কালমেঘ প্রতি ১ লিটার জলে ৩ মিলিগ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা যায়। বড় বাগ পোকার জন্য কিং ডোনা ১০ লিটার জলে ৮ মিলিগ্রাম মিশিইয়ে স্প্রে করা যেতে পারে ।
ব্রোকলিতে সাধারণত গোঁড়া পচা রোগ দেখা যায়, আবার কখনও কখনও গাছ ঢলে পরে । এ ধরনের রোগও দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে থান্ডার্স ১ লিটার জলে ৬ গ্রাম মিশিয়ে গোঁড়ায় স্প্রে করতে হবে। আর একান্তই যদি কোন রাসায়নিক সার না দিতে চান তাহলে ১০ গ্রাম হলুদের গুরো জলে ভিজিয়ে গাছের গোরায় স্প্রে কতে হবে।
কাস্তের পাতা ছোট হওয়া রোগ আছে – এ রোগে ব্রোকলির পাতা গুলো প্রসারিত না হয়ে চিকন লম্বা লম্বা হইয়ে যায়। এক্ষেত্রে সোডিয়াম মলিবডেট ১.৫ মিলিগ্রাম লিটার ১ জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ভাল ফসল পাওয়ার জন্য খৈল পচানো জল , রাসায়নিক সার ১০ লিটার জলে ৫০ গ্রাম মিশিয়ে ৭ দিনে ১ বার স্প্রে করলে ফলন বেড়ে যাবে। এছাড়া ডিএপি সার ১ রাত ভিজিয়ে ৫/৭ গ্রাম, ১ লিটার জলে মিশিয়ে বিকালের দিকে স্পে করতে পারেন।
যেহেতু ব্রোকলির চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আর এর বাজার মূল্যও বেশি তাই এ সবজি চাষ ভালো প্রভাব ফেলছে আমাদের কাঁচা বাজার গুলোতে। আর এর বৈদেশিক বানিজ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।