সরিষা এক ধরনের তেল জাতীয় ফসল। খাবার রান্নায় সয়াবিন তেলের পরেই এর অবস্থান। তবে এখন অনেকেই সয়াবিন তেলের পরিবর্তে রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকে।
তাছাড়া সরিষা বীজ থেকে তেল বের হবার পর যে খৈল পাওয়া যায় তা পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে সরিষা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই সরিষা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জমি ও মাটিঃ
সরিষা চাষের জন্য জমি উচু বা মাঝারি উচু হতে হবে। জমিতে জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সরিষা চাষে জমি এমন হতে হবে যেন জমিতে সারাদিন রোদ থাকে।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
জমি খোলা স্থানে হতে হবে। সরিষা চাষে সাধারনত উর্বর দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। মাটিতে কাকড় যুক্ত থাকলে বা লাল মাটি হলে সরিষার চাষ ভালো হয়ে থাকে।
তবে লোনা মাটি বা বেশি শুকনা মাটিতে সরিষা ভালো হয় না । বর্ষাকালে পলি মাটিতে সরিষা ভালো হয়ে থাকে।
বীজ বপনের সময় ঃ
সাধারনত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করা উত্তম।
জমি তৈরি ঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। জমিতে ৪-৬ টি চাষ দিতে হবে। জমিতে চাষ কম দেওয়া যাবে না।
কারন চাষ কম হলে সরিষ বীজের অঙ্কুরোদগম দেরিতে হয়। মাটিতে যেন ঢেলা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে যেন পর্যাপ্ত রোদ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বীজ শোধনঃ
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ শোধন করে নিলে বীজ বাহিত রোদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ
বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় আবার সারি করে ও বপন করা যায়। তবে বীজ সারি করে বপন করলে গাছের পরিচর্যা করা সহজ হয়ে থাকে।
তবে সারিতে বীজ বপন করলে কিছু অতিরিক্ত খরচ হয়। সারিতে বপন করলে এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ২০-২৫ সেমি। ছিটিয়ে বীজ বপন করলে মই দিয়ে বীজ ভালো করে ঢেকে দিতে হবে।
বীজের হার ঃ
ছিটিয়ে বপন করলে সাধারনত এক হেক্টর জমিতে সাধারনত ৭-৮ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আর যদি সারিতে বপন করা হয়ে থাকে তাহলে ৪-৬ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। জমির মাটির প্রকৃতি অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে ইউরিয়া দিতে হবে ২৬৫-২৮০ কেজি,
টিএসপি দিতে হবে ১৭৫-১৮০ কেজি,
পটাশ দিতে হবে ৫০-৬৫ কেজি,
জিপসাম দিতে হবে ২৫০-২৯০ কেজি।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি ঃ
ইউরিয়া সারের অর্ধেক ও বাকি সব সার জমি তৈরি করার সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে বীজ বপন করার ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে ।
প্রয়োজনে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ কতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
জমিতে প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। চারা গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর জমিতে এক বার সেচ দিতে হবে। তাহলে ফলন ভালো হয়।
মাটি বেশি শুকনা হয়ে গেলে সরিষার ফলন ভালো হয় না। তাই জমিতে রস বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
আগাছা দমন ঃ
জমিতে আগাছা জমলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। বীজ বপন করার ১৫-২০ দিন পর জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
ফুল আসার সময় জমি নিড়ানি দিতে হবে। জমিতে আগাছা জমলে তা ফসলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। তাই জমিতে আগাছা জমতে দেয়া যাবে না।
এছাড়া চারা যদি খুব বেশি ঘন হয়ে যায় তাহলে তা পাতলা করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা ঃ
সরিষা গাছে অল্টারনারিয়া নামক এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এই রোগ দেখা দিলে ডাইথেন এম ৪৫ প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া সরিষা গাছে জাব পোকার আক্রমন দেখা দেয়। জাব পোকা আক্রমন করলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া জমিতে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক বা বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
সরিষা গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেলে বুঝতে হবে ফসল পরিপক্ক হয়েছে। তখন ফসল সংগ্রহ করতে হবে। তবে ফসল পরিপক্ক হয়ে গেলে বেশি দিন জমিতে ফেলে রাখা যাবে না তাহলে বীজ ফেটে মাটিতে পড়ে যাবে।
ফসল সাধারনত সকালে তুলতে হয়। সরিষা গাছ শিকড় সহ টেনে তুলতে হবে বা কাচি দিয়ে গাছ মাটির সমান করে কেটে নিতে হবে। জমি থেকে ফসল তোলার পর তা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
তারপর তা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে সংগ্রহ করতে হবে। তারপর তা আবার রোদে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলনঃ
উন্নত উপায়ে চাষ করলে বা সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমিতে ৬০০-১৫০০ কেজি সরিষার ফলন হতে পারে।