2023 গাজর চাষের সহজ পদ্ধতি | 2023 Carrot Cultivation Method in Bangla

গাজর একটি অতি পরিচিত ও পুষ্টিকর সবজি। এটি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন খনিজ লবন ও রয়েছে। গাজর সাধারনত সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়ে থাকে।

তবে অনেকে তরকারি হিসেবে ও ব্যবহার করে থাকেন। গাজর দিয়ে হালুয়া ও তৈরি করা হয়ে থাকে। গাজরের হালুয়া অনেকের প্রিয় একটি খাবার। বাজারে গাজরের অনেক চাহিদা রয়েছে।

আমাদের সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন।

গাজর চাষের পদ্ধতি - Carrot Cultivation Method in Bangla
গাজর চাষের পদ্ধতি – Carrot Cultivation Method in Bangla

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন। আজ আমরা আপনাদের সাথে গাজর চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

এতে করে আপনারা সহজেই গাজর চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।চলুন দেখে নেই গাজর চাষের বিস্তারিত ঃ

মাটি ও জলবায়ু ঃ

গাজর সাধারনত একটু ঠান্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে। গাজর চাষে মাটি একটু গভীর হতে হবে।

সাধারনত দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। জমি উঁচু হতে হবে।  জমিতে পর্যাপ্ত রোদ থাকতে হবে।

মিষ্টি কুমড়া চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি

শসা চাষের সরল পদ্ধতি, দারুণ ফলন

দারুচিনি চাষের পদ্ধতি, সঠিক ও সরল

স্ট্রবেরী চাষের সঠিক ও সরল পদ্ধতি

তেজপাতা চাষের পদ্ধতি

বপনের সময় ঃ

সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গাজর চাষের উপযুক্ত সময়।

জমি তৈরি ঃ

জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ৪-৫ টি চাষ দিতে হবে। মাটিতে কোন ঢেলা থাকলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।

মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। ৮-১০ ইঞ্চি গভীর করে জমি চাষ করতে হবে। গাজর মাটির নিচে হয় তাই শিকড় যেন খুব ভালোভাবে মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বীজ বপন পদ্ধতি ঃ

বীজ বপন করার আগে বীজ ভিজিয়ে নিতে হবে। গাজরের বীজের আকার খুব ছোট হয়ে থাকে তাই বীজ বপন করার আগে এর সাথে মাটি বা ছাই মিশিয়ে নিতে হবে।

তাহলে সব বীজ এক ভাবে জমিতে পড়ে।  বীজ সারিতে বপন করা যায় আবার ছিটিয়ে ও বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করাই ভালো।

এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৮-১০ ইঞ্চি। এক বীজ থেকে আরেক বীজের দূরত্ব হবে ২-৩ ইঞ্চি।

বীজের পরিমান ঃ

সাধারনত এক একর জমিতে বীজ প্রয়োজন হয় ১.৫-২ কেজি।

সার প্রয়োগ ঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে বেশি পরিমান জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

কারন জৈব সার প্রয়োগ করলে জমিতে ফলন ভালো হয়। গাজর চাষে জমিতে মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।

সাধারনত এক হেক্টর জমির জন্য গোবর সার দিতে হবে ১০ টন, ইউরিয়া দিতে হবে ১৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১২৫ কেজি, এমপি দিতে হবে ২০০ কেজি।

গাজর চাষের পদ্ধতি - Carrot Cultivation Method in Bengali
গাজর চাষের পদ্ধতি – Carrot Cultivation Method in Bengali

সার প্রয়োগ পদ্ধতি ঃ

সবটুকু গোবর সার ও টিএসপি এবং ইউরিয়া সারের অর্ধেক ও এমপি সার জমি তৈরি করার সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের বাকি অর্ধেক দুই্ কিস্তিতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

এক কিস্তি দিতে হবে ১০-১২ দিন পর এবং বাকি কিস্তি দিতে হবে ৩৫-৪০ দিন পর। সবশেষে বাকি অর্ধেক  এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে ৩৫-৪০ দিন পর।

প্রয়োজনে সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর জমিতে প্রয়োজনে সেচ প্রদান করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ প্রদান করতে হবে। মাটিতে জো বুজে দুই সপ্তাহ পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে।

সাধারনত গাজর চাষের জন্য জমিতে ৩-৪ টি সেচ দেওয়া উচিত। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।

আগাছা দমন ঃ

জমিতে যেন আগাছা না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।  আগাছা যে কোন গাছের জন্যই ক্ষতিকর। নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা ঃ

গাজরের বীজ বপন করার আগে ১৮-২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয় তাহলে চারা দ্রুত হয়। চারা গজানোর পর ৮-১০ সেমি পর পর একটি করে চারা রেখে বাকি সব চারা তুলে ফেলতে হবে।

Carrot Cultivation Method in Bangla
গাজর চাষের পদ্ধতি – Carrot Cultivation Method in Bangla

রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা ঃ

গাজর চাষে  সাধারনত জাব পোকা, হলুদ ভাইরাস ও মূল পচা রোগ দেখা দিতে পারে। জাব পোকা গাছের কচি অংশের রস খেয়ে ফেলে।  এই পোকা দমনে ইমিটাক্লোপিড প্রয়োগ করতে হবে।

এক লিটার জলের সাথে ০.২৫ গ্রাম মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া হলুদ ভাইরাসের কারণে কচি পাতাগুলো হলুদ হয়ে যায়। এই রোগ হলে আক্রান্ত ডাল পাতা ফেলে দিতে হবে।

এছাড়া সবিক্রন ৪২৫ ইসি প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি লিটার জলে ২ মিলি ওষুধ মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার কারণে মূল পচা রোগ দেখা দিতে পারে।

এই রোগ দমন করতে জমিতে ইউরিয়া সার অতিরিক্ত প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া জমিতে অন্য রোগ ও পোকা আক্রমন করে থাকলে প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

গাজর চাষের পদ্ধতি - Carrot Cultivation Method in Bangla
গাজর চাষের পদ্ধতি – Carrot Cultivation Method in Bangla

ফসল সংগ্রহঃ

ফসল পরিপক্ক হবার পর জমি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। জমিতে চারা গজানোর ৭০-৮০ দিন পর গাজর পরিপক্ক হয়ে থাকে। তখন খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে একটু ভালো মানের সবজি পেতে হলে বীজ বপন করার ১০০-১২৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

ফলনঃ

সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করতে পারলে এক হেক্টর জমিতে প্রায় ২০-২৫ টন গাজর হয়ে থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top