পয়লা বৈশাখ 2024: ইতিহাস ও কেন পালন করা হয়? | Pohela Baisakh 2024: History and Significance

পয়লা বৈশাখ 2024 (Pohela Baisakh 2024 Date Time and Significance) 2024 পয়লা বৈশাখের ইতিহাস এবং জানুন পয়লা বৈশাখ কেন পালন করা হয়? পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আমরা সকলেই জানি। এই দিনটিতে নতুন করে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নিজেদেরকে সাজানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের পদ রান্না করা হয় যা প্রতিটি ঘরে কম বেশি হয়। আর এই দিন থেকে বাংলার নতুন খাতা, নতুন বছরের সূচনা হয়ে থাকে।

ছোটবেলা থেকেই পহেলা বৈশাখের দিনটি শৈশবকে অনেক বেশি আনন্দ মুখর করে তুলতো। তার পাশাপাশি বড়দেরও খুশির আমেজ কম থাকতো না। এই পয়লা বৈশাখ নতুন বছরের শুরু তার সাথে সাথে বাঙালির বড় উৎসব বলা যেতে পারে।

পয়লা বৈশাখ ইতিহাস ও তাৎপর্য - Pohela Baisakh History and Significance
পয়লা বৈশাখ 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Pohela Baisakh 2024 History and Significance

খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে নানান ধরনের পোশাক পরে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। কবে থেকে এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে অনেক, তবে আজকে জানা যাক, কিভাবে এই পুয়লা বৈশাখের মতো উৎসব আরম্ভ হয়েছিল।

অক্ষয় তৃতীয়া ইতিহাস ও তাৎপর্য

পহেলা বৈশাখের সূচনা: 

অনেকদিন আগের কথা, তখন খাজনা আদায় বিষয়টি বেশ গুরুতর ভূমিকা পালন করতো। আর সেই কারণে শৈশবের একটি কবিতাও এই খাজনা বিষয়ক, যে গান / কবিতা প্রতিটি মায়ের মুখেই থাকত,  “খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে ‘খাজনা’ দেবো কিসে ?” এই খাজনা বিষয়টা তখনকার দিনে সাধারণ মানুষের কাছে বেশ চিন্তার বিষয়। খাজনা আদায়ের সমস্যা হওয়া নিয়ে বাংলায় প্রথম সন গণনা শুরু হয়। সেই সময়ে চৈত্র মাসের শেষের দিন খাজনা আদায় করার দিন বলে মনে করা হতো।

সেই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন, নতুন হালখাতা নিয়ে নতুন ভাবে খাজনা আদায়ের হিসেব তুলে রাখা হতো। সম্রাট আকবর হয়তো প্রথম বাংলায় নতুন ক্যালেন্ডার তৈরির কথা ভেবেছিলেন। আর এই তথ্যটি অনেক ক্ষেত্রে সত্যি বলে মনে করা হয়, যেটা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

2024 শুভ পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বার্তা

পয়লা বৈশাখের ইতিহাস 2024: 

ঐতিহাসিকদের মত অনুসারে পয়লা বৈশাখ অথবা পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত ভাবে হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সঙ্গে সম্পর্কিত। যা বৈশাখী ও অন্য নামেও পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়।

দেশ-বিদেশের নানা সমস্ত বাঙালি এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করে থাকেন বাংলার শুভ নববর্ষ হিসাবে। যেটা আমরা পয়লা বৈশাখ হিসেবে চিনি। মনে করা হয় যে, এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দের বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে।

ভারতের গ্রামীণ বাঙালি সম্প্রদায়ের ভারতের অনেক অঞ্চল ও নেপালের মতো বিক্রমাদিত্যকে বাংলা দিনপঞ্জির আবির্ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু এই অঞ্চল গুলোর মতো বাংলায় বঙ্গাব্দের সূচনা ৫৭ খ্রিষ্টপূর্বে হয়নি, বরং ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল মনে করা হয়, শশাঙ্কের শাসন আমল থেকেই এর পরিবর্তে শুরু হয়।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ অনেকদিন আগে থেকেই পালিত হতো বাংলার উৎসব সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, মনিপুর, কেরল ,বঙ্গ / পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, নেপাল, পাঞ্জাব, ত্রিপুরা, তামিলনাড়ু এই সমস্ত জায়গার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হতো। তখন পয়লা বৈশাখ ঋতু ধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হতো। এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। কারণ প্রযুক্তিগত প্রয়োগের যুগ তখন শুরুই হয়নি, তাই কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হতো।

জগন্নাথ রথযাত্রা ইতিহাস ও তাৎপর্য

বাঙালির ঘরে ঘরে পয়লা বৈশাখ উদযাপন: 

গরিব হোক অথবা ধনী, প্রতিটি ঘরে ছোট থেকে বড় সকলেই এই পুয়লা বৈশাখ উৎসবের দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কোন ঘরে খুবই ধুমধাম ভাবে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয়, আবার যারা অনেকটাই গরীব তারা বেশি সাড়ম্বর না করতে পারলেও পয়লা বৈশাখ টাকে খুশির সাথেই উদযাপন করেন।

সকাল থেকে হলুদ মাখা, গৃহপালিত পশুদের স্নান করানো, নিজেরাও সকাল সকাল স্নান করে নতুন কাপড় জামা পরা, তার সাথে সাথে মায়ের হাতের বিভিন্ন রকমের রান্নার পদ, মন জুড়িয়ে যাওয়ার মত পরিবেশ, সবকিছু মিলিয়ে পয়লা বৈশাখ যেন এক উৎসব। বড়দের আশীর্বাদ নেওয়া, মিষ্টিমুখ করা সবকিছু ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরকেও অনেকখানি আনন্দ প্রদান করে।

নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে বাংলার গ্রামের এবং শহরের জীবনের মেলবন্ধন যেন এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে। শুধুমাত্র গ্রামেই নয় শহরেও পয়লা বৈশাখ বাঙ্গালির মনে অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে, গোটা চৈত্র মাস ধরে চলে বর্ষবরণের প্রস্তুতি।

রাম নবমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য 2024: 

আগেই বলা হয়েছে যে, খাজনা আদায়ের তারিখ নিয়ে অনেক সমস্যা থাকার কারণে এই দিনটিতে সবকিছু দেনা পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার একটা অবকাশ দেওয়া হয়। তার সাথে সাথে প্রতিটি দোকানে নতুন খাতা উদযাপন হয়, এই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে।

তার সাথে সাথে আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজনের সাথে সময় কাটানো আর নিজেদের আর বসবাসের জায়গাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নতুন বছরের স্বাগত জানানোর এই উৎসবটি বেশ অনেকখানি তাৎপর্য বহন করে। তাছাড়া প্রতিটি ঘরে ঘরে পূজা পার্বন রয়েছে। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে চড়ক পূজা, শিবের উপাসনা এবং আরো অন্যান্য দেবদেবীর পূজা করা হয় নিজেদের এবং সংসারের মঙ্গল কামনায়।

হনুমান জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামীণ উৎসব: 

চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে শিবের পূজা, শিবের উপাসনা করা হয়, বিভিন্ন অঞ্চলে চরক মেলা অনুষ্ঠিত হয়, এই মেলায় অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসী ও ভক্তগণ বিভিন্ন শারীরিক কষ্ট করে আরাধ্য দেবতার সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন, তার সাথে সাথে সাধারণ মানুষেরও মনোরঞ্জন হয়ে যায়।

তাছাড়া বর্তমানে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে অনেক জায়গায় ছোটখাটো মেলা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়। যাতে দিনটিকে আরও বেশি করে উপভোগ করার জন্য অনেকখানি সুযোগ পাওয়া যায়।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের রীতিনীতি: 

যেকোনো উৎসবের কিছু না কিছু রীতিনীতি থাকেই। এছাড়া বহু পরিবারে বছরের শেষ দিন টক এবং তেতো খেয়ে সম্পর্কের সকল তীর্থতা আর অম্লতা বর্জন করার একটা প্রথা অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছে। পরের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ প্রতিটি পরিবারে সকাল সকাল স্নান সেরে বড়দের প্রণাম করার রীতি প্রচলিত রয়েছে।

বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন অর্থাৎ এই দিনটি মিষ্টিমুখ ছাড়া কোন মতেই চলবে না। এই দিনটিকেই শুভ বলে মনে করা হয় আর নতুন খাতার উদ্বোধন করা হয়। যার চলতি ভাষায় নাম হলো হালখাতা, এই নামের সাথে আমরা ভালোভাবেই পরিচিত। এই দিন সংসারের ধন সম্পত্তির  জন্য লক্ষ্মী এবং গণেশের পূজা করা হয়।

জামাই ষষ্ঠী ইতিহাস ও তাৎপর্য

মিষ্টি বিতরণ: 

পয়লা বৈশাখ, আর মিষ্টি বিতরণ হবে না !  তা কি করে হয়? আত্মীয় স্বজনের বাড়ি মাটির হাড়িতে করে মিষ্টি পাঠানো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিষ্টিমুখ, মিষ্টি বিতরণ সবকিছু মিলিয়ে পয়লা বৈশাখের দিনটি সবার মনে আরো বেশি দাগ কেটে যায়। অনেক জায়গায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেটি সারা বৈশাখ মাস ধরে চলে।

এছাড়া এটি একটি সামাজিক উৎসবের পরিণত হয়েছে। এই দিনটিতে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে তাদের দোকানে আহবান করতেন। এই প্রথা এখনো পর্যন্ত রয়েছে, যার মধ্যে দিয়ে একজন ব্যবসায়ী আর একজন ক্রেতার মধ্যে সুন্দর মিষ্টি সম্পর্ক তৈরি হয়।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে বাঙালির এই পয়লা বৈশাখ উৎসবটি সব দিক থেকে আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করে। পূজা পার্বণ, বিভিন্ন রকমের খাবার, গৃহপালিত পশুদের স্নান করিয়ে সাজানো, হলুদ মাখা, বড়দের প্রণাম করা সবমিলিয়ে যেন শুধুই খুশি আর খুশি। এখানে কোনরকম দুঃখের স্থান যেন নেই। তাছাড়া পহেলা বৈশাখ মানেই তো ভুরিভোজ, কি থাকবে না পাতে ? তাছাড়া বাঙালি সবসময়ই খাদ্যরসিক, কি বলেন !

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top