শসা একটি বহুল পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত একটি সবজি। সালাদ হিসেবে এর পরিচিত সর্বাধিক। বাজারে এর চাহিদা প্রচুর।
তরকারি হিসেবে ও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে সালাদ হিসেবে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এর পুষ্টিগুন ও প্রচুর।
আজ আমরা আপনাদের সাথে শসা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই শসা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন শসা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
শসা চাষের জন্য দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। জমি উচু বা মাঝারি উচু হতে হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। শসা জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
বীজের হারঃ
উন্নত, পরিপুষ্ট, রোগ মু্ক্ত বীজ বাছাই করতে হবে। এক শতক জমিতে সাধারনত ১.৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সময়ঃ
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শসার বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়। এ সময় বীজ বপন করলে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
চারা তৈরিঃ
শসার চারা তৈরি করে লাগালে ফলন ভালো হয় এবং চারার গুনগত মান ও ভালো থাকে। শসার চারা বীজতলায় তৈরি করতে হবে।
চারা তৈরি হলে তারপর তা জমিতে বপন করে দিতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করা যায় ।
ব্যাগে মাটি ও জৈব সার একত্রে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটি ও সারের পরিমান সমান সমান হতে হবে। একটি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বপন করা যাবে।
জমি ও মাদা তৈরিঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে ও সমতল করে নিতে হবে। তারপর মাদা তৈরি করতে হবে।
এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৬-৭ ফুট। মাদার গভীরতা হবে ১ ফুট। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ১.৫-২ মিটার।
চারা রোপনঃ
চারা রোপন করার ১৬-২০ দিন পর পলিব্যাগ থেকে চারা তুলে মাদায় রোপন করতে হবে।
জমিতে চারা লাগানোর পর প্রতি দুইটি চারা থেকে একটি দূর্বল চারা বাছাই করে সেটি তুলে ফেলে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধি ও ফলন বাড়ানোর জন্য সার ব্যবহার করা জরুরি।
প্রতি মাদায় গোবর সার, কচুরি পানা, জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে ৫-৬ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১০০ গ্রাম. এমওপি দিতে হবে ৬০-৭০ গ্রাম।
মাদায় সার প্রয়োগ করে জমির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর মাদায় ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে ৫০ গ্রাম করে। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
শসা চাষে জমিতে নিয়মিত জল সেচ দিতে হবে। মাটিতে জলের ঘাটতি থাকলে শসা চাষে সমস্যা দেখা দেয়। জমিতে জলের ঘাটতি দেখা দিলে ফুল ঝরে পড়ে যায় এবং গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।
শুকনা মৌসুমে ৪-৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়। জমিতে জল জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে।
আগাছা ও নিড়ানিঃ
জমিতে নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। প্রতিবার সার দেওয়ার পর জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। জমিতে প্রয়োজনে হালকা ভাবে নিড়ানি দিয়ে নিতে হবে।
শসার শিকড় মাটির খুব বেশি গভীরে যায় না তাই নিড়ানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শিকড়ের কোন ক্ষতি না হয়।
প্রয়োজনে মাটি কোদাল দিয়ে হালকা কুপিয়ে দিতে হবে।
বাউনি দেয়াঃ
জমিতে প্রয়োজনে বাউনি দিতে হবে। বাউনি দিলে ফলন ভালো হয়।
বাউনির জন্য তারের নেট বা সুতলী ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
শসা গাছে সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো ডাউনি মিলডিউ রোগ। এ রোগে পাতা নিচে দাগ দেখা যায়। পরে দাগ শুকিয়ে বাদামি হয়ে যায়।
তারপর এই রোগ পাতা শুকিয়ে ফেলে। এই রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। ফলের মাছি দ্বারা ও জমি আক্রান্ত হতে পারে।
এই পোকা কচি শসা নষ্ট করে দেয়। এই পোকা দমন করার জন্য জমিতে বিষ টোপ ব্যবহার করতে হবে। শসার আরেকটি রোগ দেখা দেয় সেটি হলো গিট রোগ।
এ রোগ দেখা দিলে গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্ত হয়। এই জন্য ফুরাডান নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
জাত ভেদে শসায় ফল ফুল আসতে একটু ভিন্নতা দেখা দেয়। সাধারনত বীজ বপন করার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসা শুরু হয়।
ফুল ফোটার ১৫-২০ দিন পর গাছ ফল দেখা দেয়। এবং শসা আহরন করার সময় হয়। ফল কচি ও পুষ্ট অবস্থায় আহরন করা হয়ে থাকে।
সাধারনত ফল ধরার ৩-৪ দিন পর শসা আহরন করা আবশ্যক। শসা আহরন করার সময় সামান্য বোটা সহ কাটতে হবে বা বোটা ভেঙে তুলতে হবে।
ফলনঃ
সঠিক ভাবে চাষ করতে পারলে প্রতি হেক্টরে ১০-২০ টন শসা আহরন করা যেতে পারে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।