2023 দারুচিনি চাষের পদ্ধতি, সঠিক ও সরল | 2023 Cinnamon Cultivation Method in Bangla

দারুচিনি একটি মসলা জাতীয় দ্রব্য। এর প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এ গাছের বাকল মসলা হিসেবে পরিচিত। পাতার তেল সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এটি বিভিন্ন খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া ও ওষুধ শিল্পে, সাবান ও দাতের মাজন তৈরিতে ও এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

Cinnamon Cultivation Method in Bangla
Cinnamon Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে দারুচিনি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই দারুচিনি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন দারুচিনি চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ

 

জলবায়ু ও মাটিঃ

দারুচিনি চাষের জন্য উষ্ণ বা অল্প উষ্ণ আবহাওয়া উপযোগী। এর জন্য বর্ষাকাল বা বর্ষাকালের শেষ সময়ে এটি রোপন করা হয়ে থাকে।

দারুচিনি চাষের জন্য উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। এ ধরনের মাটিতে এটি চাষ করলে এর গুনগত মান ভালো হয়। জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে।

দারুচিনি গাছ একটানা বেশিদিন খরা সহ্য করতে পারে না। এটি এমন স্থানে চাষ করতে হবে যেখানে সূর্যের আলো পর্যাপ্ত ও আলো বাতাস চলাচল করে।

 

জমি তৈরিঃ

যেসব জমিতে অন্য কোনো ফসল ভালো জন্মে না সেসব জমি দারুচিনি চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

সাধারনত বসত বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়ে ও এটি চাষ করা যেতে পারে। জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে নিতে হবে।

মাটি সমতল করে নিতে হবে ও ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। জমি যেন আগাছা মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

চারা তৈরিঃ

দারুচিনি সাধারনত বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে কলমের মাধ্যমে ও এর চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। কলমের ক্ষেত্রে গুটি কলম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

দারুচিনি গাছে সাধারনত জানুয়ারি মাসে ফুল আসে। জুলাই মাস থেকে আগস্ট মাসে ফসল আসা শুরু করে।

সে সময় ই গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং দ্রুত তা মাটিতে বপন করতে হবে। বীজ প্রথমে একটু উচু বীজ তলা তৈরি করে সেখানে বপন করতে হবে।

চারা গাছ একটু বড় হলে অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।

 

রোপন পদ্ধতিঃ

দারুচিনি চাষ করতে জমিতে বর্গাকারে বা ষড়ভূজ আকারে গর্ত তৈরি করতে হবে। তারপর গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিটি গর্তে গোবর, ছাই ও টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার দেয়ার পর তা মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপন করতে হবে।

মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে চারা রোপন করার সময়। বীজ থেকে যখন কচি চারা হয় তখন এর রং থাকে অনেকটা লাল রঙের।

এ সময় চারা তোলা উচিত নয়। তখন চারা মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই চারার পাতা যখন সবুজ রং ধারন করবে তখন চারা তুলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাগাতে হবে।

বর্ষাকালে চারা রোপন করা উত্তম। চারা সারি করে লাগাতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে তিন মিটার।

 

পরিচর্যাঃ

চারা রোপন করার আগে সুস্থ সবল চারা বাছাই করতে হবে। গর্ত তৈরি করার পর সেখানে সাবধানে চারা লাগাতে হবে। চারার গোড়া যেন সোজা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

চারা লাগানোর পর গোড়ার মাটি কিছুটা চেপে দিতে হবে। চারার গোড়ায় একটি খুটি বেধে দিতে হবে। প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।

 

সার প্রয়োগঃ

উন্নত ও ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।

একটি গাছের জন্য ৪-৫ কেজি গোবর সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, প্রয়োগ করতে হবে।

বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস এবং ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জমিতে সার দেওয়া ভালো।

গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমান বাড়বে। সার প্রয়োগ করার পর জল সেচ দিতে হবে।

 

আগাছা দমনঃ

জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছের গোড়া সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আগাছা থাকলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়।

 

সেচঃ

জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারা যখন ছোট থাকে তখন ঘন ঘন সেচ দেওয়া ভালো । গাছ একটু বড় হলে এত সেচ দিতে হয় না।

জমিতে যেন জল জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।

 

ছাটাইঃ

গাছের আকৃতি সুন্দর রাখার জন্য মরা ডাল পাতা কেটে ছাটাই করে দিতে হবে।

রোগাক্রান্ত ডাল ও দুর্বল ডাল ছাটাই করে দিলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

রোগ বালাই ও পোকা মাকড় দমনঃ

দারুচিনি গাছে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ হতে পারে। যেমন গোলাপি রোগ, চারা ধ্বসা রোগ, মরচে ধরা রোগ ইত্যাদি।

এছাড়া প্রজাপতি, লেদা পোকা ও লাল পিপড়া দেখা দিতে পারে। এসব রোগ ও পোকা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে।

Cinnamon Plantation Method in Bangla
Cinnamon Harvesting Method in Bangla

ফসল সংগ্রহঃ

দারুচিনি গাছ সাধারনত ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের বয়স ৫ বছর হলে সেখান থেকে বাকল সংগ্রহ করা যাবে।

বিশেষ ধরনের একটি ছুরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে বাকল উঠানোর জন্য। এগুলো প্রথমে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হয় তারপর রোদে শুকাতে হয়।

 

ফলন:

উপযুক্ত উপায়ে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমি থেকে এক বছরে প্রায় ২০০-৩০০ কেজি বাকল পাওয়া যেতে পারে।

 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top