2023 মিষ্টি কুমড়া চাষের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি | 2023 Pumpkin Cultivation Method in Bangla

মিষ্টি কুমড়া একটি লতা জাতীয় সবজি। এটি বহুল পরিচিত একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ খুবই পুষ্টিকর। এটি ড্রাই ফ্রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই বীজ কাচা বা ভাজা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া হয়ে থাকে।

Pumpkin Cultivation Method in Bangla
Pumpkin Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ

জলবায়ু ও মাটিঃ

মিষ্টি ‍কুমড়া চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাপমাত্রা কমে গেলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলন কম হয়।

সাধারনত দো আঁশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।

চাষের মৌসুমঃ

সারা বছরই মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়। তবে যদি শীতকালীন ফসল হিসেবে চাষ করতে চায় তাহলে অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।

আর গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসেবে চাষ করতে হলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।

উন্নত ফলন পেতে হলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বপন করা উচিত।

বীজের হারঃ

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য সাধারনত এক বিঘা জমিতে ৬৫০-৮০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে। এক হেক্টর জমিতে ৫-৬ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।

জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ

পারিবারিক ভাবে আঙিনায় চাষ করতে হলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদায় তৈরি করে তাতে বীজ বপন করতে হবে। তারপর চারা বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে বা কোন গাছের সাথে তুলে দিতে হবে।

জমিতে চাষ করতে হলে বীজ বপন করার আগে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমির মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে।

মাটি সমান করে নিতে হবে। তারপর জমিতে মাদা তৈরি করতে হবে। এতে বীজ বপন করতে হবে।

Pumpkin Cultivation
Pumpkin Cultivation

চারা উৎপাদনঃ

চারা সাধারনত পলিব্যাগে তৈরি করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে চারা তৈরি করা ভালো। পলিব্যাগের আকার ৩-৪ ইঞ্চি হতে হবে। পলিব্যাগ থেকে জল নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে এজন্য পলিব্যাগের নিচে ছিদ্র করে দিতে হবে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করার আগে ১৫-২০ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ জলে ভিজিয়ে রাখতে বীজের অঙ্কুরোদগম দ্রুত হয়।

বীজ থেকে চারা দ্রুত গজায়। একটি পলি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বপন করতে হবে। একটু গভীর করে বীজ বপন করতে হবে।

চারা রোপনঃ

বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার ১৫-১৬ দিন পর চারা জমিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়। ব্লেড দিয়ে পলিব্যাগে কেটে তারপর চারা বের করা হয়।

মাটির দলা সহ চারা টি গর্তে বসিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর সময় খেয়াল করতে হবে চারার শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

চারা গাছটি যেন গর্তের ঠিক মাঝখানে থাকে। চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। ফসলের ফলন হ্রাস পাবে।

চারা রোপন করার পর গর্তে জল সেচ দিতে হবে।

সার প্রয়োগঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির উর্বরতার উপর ভিত্তি করে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।

জমিতে জৈব সারের পরিমান বেশি থাকা ভালো তাহলে ফসলের ফলন ভালো হয়। সার প্রয়োগ করার আগে মাটির গুনাগুন যাচাই করতে হবে।

বীজ বপন করার ১০-১৫ দিন আগে প্রতিটি প্লটে গোবর সার দিতে হবে ১০-১৫ কেজি।

এবং প্রতি পিটে টিএসপি ৫০ গ্রাম, এমপি ৪০ গ্রাম, জিপসাম ৪০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

বীজ অঙ্কুরিত হবার পর জমিতে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।

Pumpkin Harvesting Method in Bangla
Pumpkin Harvesting Method in Bangla

সেচ ব্যবস্থাঃ

মাটিতে জলের আধিক্য দেখা গেলে জমিতে সেচ দিতে হবে। শুকনা মৌসুমে এক মাস পর পর জমিতে সেচ দেওয়া ভালো।

জমিতে যেন জল জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।

আগাছা দমনঃ

জমিতে আগাছা জমলে তা দমন করে দিতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং মাটি থেকে পুষ্টি শোষন করে নেয়।

তাই জমিতে আগাছা দমন করতে হবে।

অন্য পরিচর্যাঃ

সেচ দেয়ার পর মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে অতিরিক্ত শাখা বের হলে সেগুলো কেটে দিতে হবে। এসব শাখা ফলন কমিয়ে দেয়।

গাছ একটু বড় হলে মাচা তৈরি করে দিতে হবে। মাচা তৈরি করে দিলে ফসলের ফলন ভালো হয়।

রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ

গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

Pumpkin Cultivation Method
Pumpkin Cultivation Method

ফসল সংগ্রহঃ

বীজ বপন করার দুই মাস পর গাছে ফল ধারন শুরু হয়। গাছে পরাগায়ন হওয়ার ১০-১৫ দিনের মধ্যেই সবজি খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। বাজারজাত করার উদ্দেশ্য অনুযায়ী কম পরিপক্ক ও বেশি পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

গাছ থেকে যত বেশি ফল সংগ্রহ করা হবে ফলন তত বেশি হবে।

ফলনঃ

সবজি হিসেবে সংগ্রহ করলে এক হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২০ টন ফসল পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top