2023 নাসপাতি চাষের পদ্ধতি | 2023 Pyrus Cultivation Method in Bengali

নাসপাতি একটি রসালো মিষ্টি জাতীয় ফল। আমাদের দেশে এটি বিদেশী ফল হিসেবে পরিচিত। এর ইংরেজী নাম pear এ গাছ সাধারণত শীত প্রধান দেশে হয়ে থাকে।

কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশেও এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ ফল থেকে জ্যাম, জেলি তৈরি করা হয়, আবার সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়। বিশ্বে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনায় বানিজ্যিক ভাবে এর চাষ হচ্ছে।

দারুন মজাদার এ ফলটিতে আছে ভটামিন-বি-১, বি-২ এবং ই। এছাড়াও এতে রয়েছে ফলিকএসিড, ম্যাগনেশিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম।

নাসপাতি চাষের পদ্ধতি - Pears Cultivation Method in Bengali
নাসপাতি চাষের পদ্ধতি – Pears Cultivation Method in Bengali

এটি একটি উচ্চফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী একটি পুষ্টিগুন সম্পন্ন ফল। এ আকর্ষনীয় ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ হলেও পাকলে লালচে আভা দেখা যায় আবার খয়েরী রঙেরও হয়।

আজ আমরা আপনাদের সাথে নাসপাতি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই নাসপাতি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। আসুন আজ আমরা জেনে নি, এই ব্যপক সম্ভাবনাময় এ ফলটি সম্পর্কে

খেজুর চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি

লিচু চাষের সঠিক এবং সহজ পদ্ধতি

আনারস চাষের বিস্তারিত এবং কার্যকর পদ্ধতি

আলু বোখারা ফল চাষের পদ্ধতি

আঙ্গুর চাষের সঠিক পদ্ধতিঃ দারুণ ফলন

ড্রাগন ফল চাষের পদ্ধতি

সফেদা চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি

মাটি ও আবহাওয়া

পৃথিবীতে অনেক ধরনের জাত রয়েছে কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় বারি-১ জাতই চাষ করা হয়ে থাকে। উর্বর দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়ি মাটিতেও এ ফল সফল ভাবে চাষ করা যায়।

যদিও এটি শীত প্রধান দেশের ফল তবুও জাত ভেদে এটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও হয়। এটি একটি পর্নমোচি ধরনের উদ্ভিদ। শীতে পাতা ঝরে আবার গৃষ্মকালে পাতা গজায়।

এ গাছ খাড়া ও অল্প ঝোপ আকারে হয়ে থাকে। জল নিষ্কাশন হয় এমন জায়গায় এ গাছ রোপন করতে হবে। মাটির পিএইচ মান ৫.৫ থেকে ৭.৫ হতে হবে।

প্রচুর আলো-বাতাস আসে এমন জায়গায় এ গাছ রোপন করতে হয়। এতে ফলন ভাল হয়।

নাসপাতি চাষের পদ্ধতি - Pears Cultivation Method in Bengali
নাসপাতি চাষের পদ্ধতি – Pears Cultivation Method in Bengali

চারা বা কলম পদ্ধতি

গুটি কলম বা শাখা কুঁড়ির মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। বর্ষাকাল কলম করার উত্তম সময়।

চারা রোপন করার আগে মাটিতে জৈব সার দিয়ে পঁচিয়ে নিতে হবে,

এছাড়া গোবর সার ১৫-২০ কেজি,

খৈল পচা ১ কেজি,

টিএসপি -৫০০ গ্রাম,

এমপি-২৫০ গ্রাম দিয়ে গর্তের মাটি তৈরি করে ৭-১০ দিন পর্যন্ত রেখে দিতে হবে।

এছাড়া গাছ লাগানোর ১ মাস পরে ইউরিয়া সার ১০০ গ্রাম ছিটিয়ে দিলে গাছ স্বাস্থ্যবান হবে।

পরবর্তী পরিচর্যা

কলম করে লাগালে ২ বছর পর থেকেই গাছে ফল আসা শুরু করবে। যেহেতু এ গাছ সরু প্রকৃতির হয়ে থাকে তাই এ গাছের গড় উচ্চতা ৪০-৫০ সেমি. হলে শাখা গুলো ভেঙে দিতে হবে বা দড়ি দিয়ে শাখা নিচের দিকে নুইয়ে দিতে হবে তাতে করে নতুন শাখা গজাবে, এবং গাছে অনেক ফল আসবে।

ফল আসার শুরুতেই গাছে ব্যাগ দিয়ে দিতে হবে। ব্যাগ ফলকে সুরক্ষিত করে পোকামাকড়, রোগবালাই ও কাঠবিড়ালীর উপদ্রব থেকে। এ গাছের গড় উচ্চতা ৪০-৫০ সেমি হয়।

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ থেকে ৭-৮ টন ফল পাওয়া সম্ভব। এ গাছ পাহাড়ী এলাকায় ও টিলাতে ভালো জন্মে। তবে ঢালু জমিতেও জন্মে। মাটি শুকিয়ে গেলে গ্রীষ্মকালে জমিতে জল সেচ দিতে হয়।

নাসপাতি চাষের পদ্ধতি - Pears Cultivation Method in Bengali
নাসপাতি চাষের পদ্ধতি – Pears Cultivation Method in Bengali

পোকামাকড় ও রোগবালাই

এ গাছে তেমন কোন রোগবালাই নেই বললেই চলে। তবে একধরনের পাতা ছিদ্রকারী পোকা গাছের ক্ষতি করে থাকে, এধরণের পোকার আক্রমন হলে ম্যালাথিন জাতীয় কীটনাশক জলে মিষিয়ে স্প্রে করলে পোকা দমন করা সম্ভব। ফলের ক্ষতি নিরোধ করা সম্ভব।

একটি আদর্শ নাসপাতির আকার দৈর্ঘ্যে ১৮ সেমি. এবং প্রস্থে ৮ সেমি. পর্যন্ত হয়, যা চাষের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি ফলের আদর্শ ওজন হবে ১৩৫ গ্রামের মতো।

ফল সংরক্ষন পদ্ধতি

বীজ থেকে ফল আসতে ৭/৮ বছর লাগে কিন্তু কলম পদ্ধতি মাধ্যমে গাছে ২-২.৫ বছরে ফল আসা শুরু করে। সাধারণত একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছে গড়ে ১৫০ থেকে ২৫০ টি করে ফল আসতে পারে।

Pyrus Cultivation Method in Bangla
নাসপাতি চাষের পদ্ধতি – Pyrus Cultivation Method in Bangla

আর বছরে হেক্টর প্রতি ৭-৮ টনের মতো হয়ে থাকে। এ গাছে সাধারণত চৈত্রে ফুল আসে আর শ্রাবন-ভাদ্র মাসে ফল তোলার উপোযোগী হয়।

নাসপাতি ফল পাকার প্রায় ১৫-২০ দিন আগে গাছ থেকে পেরে প্যাকিং সহ বাজার-জাত করতে হয়। আর মনে রাখতে হবে এটি দ্রুত পচনশীল একটি ফল, তাই ১৫ দিনের বেশি সাধারণ অবস্থায় রাখা যায় না।

তবে যদি কোল্ড স্টোরে সংরক্ষন করে রাখা যায়, তবে ৫-৬ মাস পর্যন্ত রেখে সুবিধে-মতো বাজারজাত করা যাবে। এতে কৃষকের লাভের পরিমান বেড়ে যাবে।

পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় যেহেতু নাসপাতির ফলন ভালো হচ্ছে, আর এর চাহিদাও দিনকে দিন বাড়ছে, এর স্বাদ ও মানের দিক থেকে এর বাজারমুল্যও ভালো তাই আমরা একে নতুন একটি ফল হিসেবে বাজারে নিয়ে আসতে পারি।

তাই এ ফল বানিজ্যক ভাবে চাষাবাদ করলে, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানীও করা যাবে। এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভপর হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top