2023 স্ট্রবেরী চাষের সঠিক ও সরল পদ্ধতি | 2023 Strawberry Cultivation Method in Bangla

স্ট্রবেরী অতি পরিচিত একটি ফল। দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। তবে লিচুর মতো এতে কোনো খোসা থাকে না। লাল রঙের এ ফল টির চাহিদা অনেক।

পুষ্টিগুনে ভরপুর এ ফলটির রঙ আকর্ষনীয় এবং গন্ধ ও ভালো। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়া ও এটি বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে খাবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। সুগন্ধি তৈরিতে ও এর ভূমিকা অনেক।

Strawberry Cultivation Method in Bangla
Strawberry Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে স্ট্রবেরী চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই স্ট্রবেরী চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নেই স্ট্রবেরী চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ

 

মাটি ও জলবায়ুঃ

স্ট্রবেরী সাধারনত শীতপ্রধান এলাকায় ভালো জন্মে থাকে। এটি চাষে আবহাওয়া শুকনা হলে ভালো হয়।

স্ট্রবেরী চাষে মাটি উর্বর দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী। জমি যেন উচু হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

কারন যে জমিতে জল জমে থাকে সেখানে স্ট্রবেরী চাষ করা সম্ভব নয়।

 

জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ

স্ট্রবেরী চাষে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ১ ফুট গভীর করে চাষ দিতে হবে। প্রয়োজনে সার প্রয়োগ করতে হবে।

 

রোপনের সময়ঃ

স্ট্রবেরী চারা রোপন করার উপযুক্ত সময় হলো আশ্বিন মাস। তবে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ও স্ট্রবেরী চারা রোপন করা যায়।

 

চারা তৈরিঃ

স্ট্রবেরী গাছ সাধারনত রানারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। রানার হলো কচুর লতির মতো দেখতে এক ধরনের লতা।

আগের বছরের একটি সুন্দর গাছ তুলে নিয়ে তাকে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে রোপন করে তা থেকে রানারের শিকড় সংগ্রহ করতে হবে।

সেই শিকড় ৫০ ভাগ গোবর ও ৫০ ভাগ পলিমাটি যুক্ত মাটিতে নিয়ে একটি পলিথিনে রোপন করতে হবে।

তারপর চারা টি হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে লাগাতে হবে। চারাটিকে বৃষ্টির জল থেকে বাচানোর জন্য প্রয়োজনে ছাউনি দিয়ে দিতে হবে।

Easy Strawberry Cultivation Method in Bangla
Easy Strawberry Cultivation Method in Bangla

বেড তৈরিঃ

চারা রোপন করার জন্য আগে জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি বেড ৩ ফুট প্রশস্ত করে তৈরি করতে হবে।

দুইটি বেডের মাঝখানে ১-১.৫ ফুট চওড়া করে নালা রাখতে হবে। প্রতি বেডে এক লাইন থেকে আরেক লাইনের দূরত্ব হবে ১.৫-২ ফুট।

এক লাইন থেকে আর এক লাইনে চারা রোপন করার দূরত্ব হবে ১-১.৫ ফুট। প্রতি শতকে প্রায় ১৫০ টি চারা রোপন করা যেতে পারে।

 

সার প্রয়োগঃ

উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে জমির মাটি পরীক্ষা করে নিলে ভালো হয়।

প্রতি শতকে গোবর সার ১০০-১২০ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, ইউরিয়া ১ কেজি, এমওপি সার ৯০০ গ্রাম , জিপসাম ৬০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

জমিতে শেষ বার চাষ দেয়ার সময় গোবর , টিএসপি ও জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে ।

অর্ধেক পরিমান এমওপি সার চার রোপন করার ১৫ দিন পর দিতে হবে। তারাপর বাকি সার চারা রোপন করার ১৫-২০ দি পর পর কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

 

সেচঃ

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিতে সেচ দিতে হবে। জমিতে রসের অভাব দেখা দিলেই সেচ দিতে হবে।

স্ট্রবেরী গাছ জলাবদ্ধতা একবারে সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রয়োজনে এক বা একাধিক নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।

Strawberry Farming Method in Bangla
Strawberry Farming Method in Bangla

আগাছা দমনঃ

জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আগাছা ফসলের অনেক ক্ষতি করে থাকে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বের হবে ।

এগুলো জমি ঢেকে ফেলে তাই ফলন বাধাগ্রস্ত হয়। এগুলো ১০-১৫ দিন পর পর ছাটাই করে দিতে হবে।

 

অন্যান্য পরিচর্যাঃ

স্ট্রবেরী গাছ সরাসরি মাটির সংস্পর্শে আসলে ফল পচে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই চারা রোপন করার ২০-২৫ দিন পর স্ট্রবেরীর বেড কালো পলিথিন দিয়ে বা খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার আগে খড় শোধন করে নিতে হবে। নয়তো খড় থেকে উইপোকার আক্রমন হতে পারে।

এই জন্য ব্যাভিস্টিন ডি এফ ২ গ্রাম নিয়ে তা এক লিটার জলের সাথে মিশিয়ে খড় শোধন করে নিতে হবে তাহলে আর উইপোকার আক্রমন হয় না।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ

স্ট্রবেরী গাছে সাধারনত এর পাতায় দাগ পড়া রোগ হয় ও ফল পচা রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

আর পোকার হাত থেকে বাচার জন্য বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে। পাখির হাত থেকে ফল রক্ষা করতে হলে জমিতে জাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে গাছ।

Easy Strawberry Farming Method in Bangla
Easy Strawberry Farming Method in Bangla

ফল সংগ্রহঃ

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে যে চারা গাছ রোপন করা হয়ে থাকে সেগুলে পৌষ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ফল দিতে থাকে।

ফল পরিপক্ক হলে তা লাল বর্ণ ধারন করে তখন সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

এর সংরক্ষণ কাল খুব কম তাই ফল সংগ্রহ করার সাথে সাথেই তা টিস্যু দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে এবং খুব ভালোভাবে তা সংরক্ষন করতে হবে। ফল গাদাগাদি করে রাখা যাবে না।

 

ফলনঃ

উপযুক্ত ও সঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে প্রতি গাছে গড়ে প্রায় ৩০-৩২ টি ফল ধরতে পারে। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ১০-১২ টন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top