তুলা একটি অতি পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ আশ জাতীয় ফসল। তুলা থেকে সুতা হয়। তুলা দিয়ে বালিশ তৈরি করা হয়ে থাকে।
আমাদের সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
আজ আমরা আপনাদের সাথে তুলাচাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই তুলা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন তুলা চাষের বিস্তারিতঃ
জমি ও মাটি ঃ
তুলা চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। তবে মাটিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে জৈব পদাথ থাকে তাহলে যে কোন মাটিতেই তুলা চাষ করা সম্ভব।
মাটিতে যেন অতিরিক্ত পরিমানে বালি বা কাদা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাটি বেশি অম্লীয় হলে তাতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের সময় ঃ
শীত প্রবন এলাকায় শ্রাবন মাস থেকে ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ বপন করা যায়। আর শুকনা মৌসুমে জৈষ্ঠ্য মাসে থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে বীজ বপন করা যায়।
সমতল এলাকায় ভাদ্র মাসে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়।
জমি তৈরি ঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমি অবশ্যই চাষ দিতে হবে। জমিতে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। মাটিতে জো থাকা অবস্থায় ৩-৪ টি চাষ ও মই দিতে হবে।
বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ঃ
বীজ বপন করার আগে বীজ কে কিছুক্ষন জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ ৩-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর ঝুরঝুরা মাটি বা ছাই বা শুকনো গোবর দিয়ে ঘষে নিতে হবে।
তাহলে খুব সহজেই এক বীজ থেকে অন্য বীজ আলাদা করা যাবে। তাছাড়া বীজকে লঘু সালফিউরিক এসিড দিয়ে ও শোধন করা যাবে। তাহলে বীজের রোগ জীবাণু বা পোকার ডিম নষ্ট হয়ে যাবে।
বীজের হার ঃ
জাত অনুযায়ী এক একর জমিতে প্রায় ১.৫-১.৮ কেজি বীজ বপন করা যায়।
বপন পদ্ধতিঃ
তুলা চাষ করতে হলে জমিতে সারি করে বীজ বপন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ১০০ সেমি। এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ৫০-৬০ সেমি।
সারি তৈরি করে জমিতে ভালো ভাবে সার প্রয়োগ করে দিতে হবে। তারপর বীজ বপন করতে হবে। তবে কখনো যদি জমিতে বীজ বপন করা সম্ভব না হয় তবে পলিথিনে চারা উৎপাদন করা যাবে।
সার প্রয়োগ ঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমি উর্বর হতে হবে। মাটির উর্বরতা অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। উর্বরতা কম হলে জমিতে প্রতি হেক্টরে গোবর সার দিতে হবে ৫-৬ টন।
জৈব সার বেশি প্রয়োগ করলে জমিতে রাসায়নিক সার কম প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে যদি পিএইচ কম হয় তবে চুন প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরি করার প্রথম দিকে জমিতে সব জৈব সার মিশিয়ে দিতে হবে।
তুলা চাষে জমিতে সাধারনত এক হেক্টর জমিতে ইউরিয়া দিতে হবে ২০০-২৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১৫০-১৭৫ কেজি, পটাশ সার দিতে হবে ১০০-১৫০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ২৫-৩০ কেজি।
সম্পূর্ণ পটাশ সার , টিএসপি ও জিপসাম জমি তৈরি করার শেষ দিকে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের চার ভাগের এক ভাগ প্রয়োগ করতে হবে জমিতে বীজ বপন করার আগে।
সারিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর তা মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ ঃ
শুকনা মৌসুমে মাটির ধরন বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে। মাটিতে প্রয়োজনীয় রস আছে কিনা তা বুঝে জমিতে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে যেন জমিতে জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জল জমে থাকলে তা নিষ্কাশেনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
নিড়ানি ঃ
জমিতে নিয়মিত নিড়ানি দিতে হবে। মাটি যদি শক্ত হয়ে যায় তাহলে তা নিড়ানি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া জমিতে যদি আগাছা জমে থাকে তাহলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
গাছ পাতলাকরণ ঃ
গাছ বেশি ঘন হয়ে গেলে তা পাতলা করে দিতে হবে। চারা গজানোর ১০ দিন পর একটা গর্তে সুস্থ সবল ২টি চারা রেখে বাকি সব চারা তুলে ফেলতে হবে। তারপর চারার বয়স যদি ২০-২৫ দিন হয় তখন একটি ভালো চারা রেখে বাকি টা তুলে ফেলতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
তুলা গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বোল ওয়ার্ম পোকা। এই পোকা গাছের কচি কান্ড খেয়ে ফেলে তাই গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। বেশি আক্রমন হলে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে যায়।
এই পোকা আক্রমন করলে এক হেক্টর জমিতে সিমবুশ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২০-২৫ লিটার জলের সাথে ৩০০ মিলি হারে সিমবুশ মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
এছাড়া ও জাব পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ইত্যাদি পোকা দেখা যায়। তুলা গাছে পাতা ঝলসানো, পাতা নেতিয়ে পড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়।
গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ঃ
তুলা গাছের বোল ফেটে বের হলে তুলা বের করতে হবে। তুলা বের করার দিন শুকনা হতে হবে। এক বারে তুলা উঠানো যায় না। দুই তিন বারে তুলা তুলতে হয়। সাধারনত প্রথমবার তুলা ভালো হয়।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমিতে ১২-১৫ কুইন্টাল তুলা পাওয়া যায়।