জমি কেনার জন্য সেরা ১১ টি পরামর্শ

জমি কেনার স্বপ্ন আমাদের সবার মনেই থাকে। জমিতে একটা সুন্দর বাড়ি হবে বা খামার হবে অথবা বানিজ্যিক কোন ভবন। এভাবই আমাদের স্বপ্নের বীজ বুনতে থাকি। যাই করি না কেন সবার আগের প্রদক্ষেপ হলো জমি কেনা। এই জমি কেনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। সঠিক জায়গায় জমি কিনতে না পারলে আপনার পরিকল্পনা মত কিছুই সফল হবে না।


তাই আমাদের জমি কেনার আগেই অনেক কিছু বিবেচনা করে জমি কিনতে হবে। দেখে নিতে হবে এই জমির ভবিষ্যতে আমাদের কি দিতে পারে। এই জমির আশেপাশের এলাকাই বা ভবিষ্যতে কি হবে। এসব অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। 

 

আমরা আমাদের সাইটে নিয়মিতভাবে জমি নিয়ে নানা তথ্য ও পরামর্শ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা জমি কেনা নিয়ে কিছু পরামর্শ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। আশা করি এই লেখা হতে আপনারা উপকৃত হবেন এবং সেই সাথে ভবিষ্যতে জমি কেনার সময় এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে ভালো কিছু জমি কিনতে পারবেন। এভাবে আপনারা ভালো জমি কিনে লাভবান হতে পারবেন। আসুন দেখে নি জমি কেনা নিয়ে কিছু পরামর্শ। 

 

জমি কেনার জন্য ১১ পরামর্শ জেনে নিন

নিচে আমরা জমি কেনা নিয়ে কিছু পরামর্শ বর্ণনা করছি। 

 

১. জমিটি রাস্তার পাশে হতে হবে

আপনার প্রস্তাবিত জমিটি গ্রামে বা শহরে যেখানেই হোক না কেন সে জমিটি অবশ্যই রাস্তার পাশে হতে হবে। আপনার জমিতে যাবার রাস্তা না থাকলে আপনি সেখানে আপনার পরিকল্পনা মত অনেক কিছুই করতে পারেবেন না। কোন বানিজ্যিক স্থাপনা করতে গেলে রাস্তার পাশের জমিতেই করতে হবে। রাস্তার পাশে না হলে আপনার জমিতে আপনি ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে ও পারবেন না। তাই আপনার জমিটি রাস্তার পাশে অবস্থিত হতে হবে।

 

২. জমির উচ্চতা কেমন দেখতে হবে

জমি কেনার আগেই আপনাকে দেখতে হবে জমির উচ্চতা কেমন। জমি খুব গভীর হলে আপনার জন্য খুব একটা লাভজনক হবে না। অন্যদিকে জমি উচু হলে আপনি খুব সহজেই সেখানে আপনার পছন্দমত অনেক কিছুই করতে পারবেন। তাই জমির উচ্চতা খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়। 

 

৩. জমিটি যেকোন কাজ করার উপযুক্ত কিনা

অনেক সময় আপনার কেনা জমিতে অনেক পুরোনো গাছ থাকতে পারে। আপনি আপনার প্রয়োজনে ঐ গাছ কেটে দালান বানাতে গেলে পরিবেশবাদী বা স্থানীয় আইনের কারনে হয়তো ঐ গাছ কেটে দালান বানাতে বাধার সম্মুখিন হতে হবে। এজন্য জমি কেনার আগে জমিতে কি আছে তা দেখে নিতে হবে। 

 

৪. জমিটি জলাভূমিটি অবস্থিত কিনা ? 

জলাভূমির ক্ষেত্রেও পরিবেশের ব্যপারটি প্রযোজ্য হয়। অনেক জলাভূমি ভরাটে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই আপনার ইচ্ছামত ঐ জমি বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই জলাভূমি কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে যে এখানে চাইলেও ভরাট করতে পারবেন না। 

 

৫. বন্যার জল আসে এমন এলাকায় জমি

আমাদের দেশের অনেক এলাকায় নিয়মিত বন্যা হয়। প্রায় প্রতিবছর এখানকার জমি বন্যার জলেতে ডুবে যায়। তাই ঐ সকল এলাকায় জমি কিনলে বন্যার সময় আপনার সম্পদের অনেক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব এলাকায় জমি না কেনাই ভালো। 

 

৬. ইউটিলিটি সার্ভিস আছে কিনা 

নাগরিকের জীবনের সুবিধার জন্য অনেক কিছুর দরকার হয়। যেমনঃ বিদ্যুত, পানি, ড্রেইনেজ্জ সিস্টেম ইত্যাদি। আপনার জমিতে এসব সকল সুবিধা থাকলে আপনি সহজেই সেখানে আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। অন্যদিকে আপনার জমিতে বিদ্যুত, পানি সুবিধা না থাকলে আপনি সেখানে অনেক সমস্যায় পড়বেন। তাই আপনার জমি কেনার আগে অবশ্যই ইউটিলিটি সার্ভিস আসে কিনা দেখে নিতে হবে। 

 

৭. যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন আছে ? 

যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আমাদের জমিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন আছে তা দেখে নিতে হবে। সামনের রাস্তা কত ফুট চওড়া? এই রাস্তায় বড় ট্রাক ঢুকতে পারে কিনা? সামনের নদীটি কিভাবে পার হতে হয়, নৌকা নাকি ব্রিজ হয়েছে? এখানে টেলিফোন ব্যবস্থা কেমন? মোবাইন নেটওয়ার্ক ভালো কিনা বা ইন্টারনেট সংযোগ আছে কিনা। এসব বিষয় দেখে নিতে হবে। 

 

৮. প্রতিবেশি কারা, আশেপাশে ক্ষতিকর কিছু আছে কিনা? 

আপনার জমির আশেপাশের কারা আছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আপনার জমির পাশেই পাথর ভাঙ্গার মেশিন থাকলে আপনি শব্দের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আপনার জমির পাশে কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থাকলেও আপানার জমিতে সারাক্ষন বাজে গন্ধ আসার সম্ভাবনা থাকবে। তাই প্রতিবেশি কারা কি করছে সেটাও গুরুত্বপূর্ন।

৯. কোন বিরল প্রানী আছে কিনা ? 

আপনার জমিতে হয়তো কোন বিরল গাছ আছে বা কোন বিরল প্রাণী বাসা বেধে আছে। সেখানে আপনি পরিবেশ আইনের কারণে ঐ গাছ কাটতে পারবেন না। তাই জমি কেনার আগে জমিতে এমন কিছু আছে কিনা দেখতে হবে । 

 

১০. সরকারে কোন বিধি নিষেধ আছে কিনা ? 

অনেক এলাকার জমিতে সরকারতে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকে। যেমন বিমান বন্দরের আশেপাশে আপনি উচু দালান করতে পারবেন না। অনেক সংরক্ষিত বন এলাকায় আপনি কলকারখানা করতে পারবেন না। তাই জমি কেনার আগেই এসব খোজ খবর নিতে হবে। 

 

১১. প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন ? 

অনেক এলাকায় মাঝে মাঝে ঘূর্নিঝড় হয় । সেখানকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে হয়। আপনার জমি যেখানে, সেখানে এমন সমস্যা আছে কিনা বা সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র আছে কিনা সেটা জানতে হবে। নিকটবর্তী হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস কত দূরে সেটাও দেখে নিতে হবে। 

 

আজ আমরা আপনাদের সাথে জমি কেনার জন্য ১১ টি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে আরো কিছু এলাকা নিয়ে আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে জমি থেকে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে। 

 

জমি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলি দেখুন। আমাদের লেখা ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মন্তব্যের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। 

1 thought on “জমি কেনার জন্য সেরা ১১ টি পরামর্শ”

  1. পরামর্শ গুলো অনেক কাজে দিবে আশা করি। এমন সুন্দর টিপস যারা এসব বিষয়ে কম জানে তাদের কাজে আসবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top