রসুন আমাদের রন্ধনশীল্পে একটি উল্ল্যেখযোগ্য মসলা এবং অর্থকারি ফসল হিসেবেও পরিচিত। ঔষধশীল্পে এর ভেষজ গুণাবলী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। রসুনে আমিষ, ক্যালসিয়াম ও অল্প পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় এটি হ্রদরোগ, অর্শ, ক্রিমি, সর্দি, কাশি, টাইফয়েড, বাতরোগ, চর্মরোগ, নিরোধে সহায়তা করে থাকে। ফুসফুসের রোগ,হুপিংকাশি, অন্ত্রের রোগে রসুন ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর প্রায় ৬৬ হাজার একর জমিতে এর ফলন হয়ে থাকে যার মোট উৎপাদন ১০২ হাজার মেট্রিকটন।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে রসুন চাষ পদ্ধতি ও রোগবালাই প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই রসুন চাষ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এতে করে আপনারা সহজেই নিজের বাড়িতে রসুন চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারবেন। আসুন আমরা জেনে নি রসুন চাষ নিয়ে বিস্তারিত।
রসুনের জন্য উপযুক্ত জমি ও বীজ বপনঃ
বাংলা মাসের আশ্বিনের শেষ থেকে কার্তিকের শুরুর ১০ থেকে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে রসুনের চারা রোপন করতে হয়। এরপরে হলে রসুনের ফলন কমে যায়। সাধারনত উর্বর দোঁআশ মাটি অথবা জল ধরে রাখেনা এমন গুড়ো মাটিতে রসুনের ফলন ভালো হয়।এছাড়াও এঁটেল-দোঁ-আশ মাটিতেও রসুন হয়ে থাকে। কিন্তু এর ফলন ভালো হয় না।
রসুনের বীজ বপনের জন্য এর উপরিভাগের কোয়ার অংশ ভালো হয়ে থাকে। কোয়ার ওজন যদি ০.৭৫ গ্রাম থেকে ১.০০ গ্রামের হয় তাহলে এটি একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও ভালো বীজ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি রসুন বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
রসুন চাষের পদ্ধতিঃ
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
জমি তৈরি করার সময় ১০ থেকে ১৫ সে.মি. দুরত্বে সারি করতে হয়, প্রতি সারিতে ১০ সে.মি. দুরত্ব বজায় রেখে, ৩ থেকে ৪ সে.মি. গভীরে বীজ বপন করতে হয়।
বীজ বপন করার পর সারিগুলো শুকনো খড় দিয়ে ৭ সে.মি. পুরো করে ঢেকে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেনো মাটি শুকিয়ে না যায়, আবার অতিরিক্ত জল যেনো না জমে। কারণ রসুন চাষের জন্য মাটি আদ্র-উষ্ণ থাকতে হয়।
সার ব্যবস্থাপনা ও আগাছা দমনঃ
রসুন চাষের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে সারের পরিমাণ নিচে বর্ণনা করা হলো।
ইউরিয়া ২০০ কেজি, গোবর ১০ টন, এমওপি ১০০ কেজি, টিএসপি ১২৫ কেজি, বোরাক্স ১০ কেজি, জিংক সালফেট ২০ কেজি ও জিপসাম ১০০ কেজি।
জমি তৈরির সময় সকল টিএসপি, গোবর, বোরাক্স, জিংক সালফেট ও জিপসাম ভালো করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সাধারণত রসুন লাগানোর ৩০ ও ৬০ দিন পর যথাক্রমে ১ম ও ২য় কিস্তির সার প্রয়োগ করা হয়। প্রতিবারে সার প্রয়োগের সময় হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি ইউরিয়া ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়।
রসুন লাগানোর ১৫ দিন পর আগাছা বেশি হলে পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং প্রতি বিঘাতে ৫০ মি.লি. রনষ্টার বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমান জল না থাকলে সেচ দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যখন রসুনের কন্দ তৈরি হচ্ছে, তখন অবশ্যই পর্যাপ্ত জল থাকতে হবে মাটিতে, তবেই রসুনের কোয়া পুরুষ্ট হবে। জল বেশি হলে যেনো নালা দিয়ে জল বের হতে পারে সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে ।
পোকার আক্রমন ও দমনঃ
পার্পল বস্নচ বা বস্নাইট এই রোগ যেকোন বয়সে গাছের পাতা ও কান্ড আক্রমন করতে পারে। অল্টারনারিয়া পোরি ও স্টেমফাইলিয়াম বট্রাইওসাম নামক ছত্রাকদ্বয় দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। কান্ডে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলভেজা হালকা বেগুনী রংয়ের দাগের দেখা দেয়। দাগগুলি বৃদ্ধি পেয়ে ধীরে ধীরে বড় দাগে পরিণত হয় এবং আক্রান্ত স্থান খড়ের মত শুকিয়ে যায়।
আক্রান্ত পাতা ক্রমান্বয়ে উপরের দিক হতে মরতে শুরু করে। পাতা বা কান্ডের গোড়ায় আক্রান্ত স্থানের দাগ বৃদ্ধি পেয়ে হঠাৎ পাতা বা বীজবাহী কান্ড ভেঙ্গে পড়ে এতে বীজ অপুষ্ট হয় ও ফলন কম হয়ে থাকে। বৃষ্টি হলে এ রোগের দ্রুত বিস্তার করতে দেখা দেয়। স্ক্লেরোসিয়াম রলফসি ও ফিউজারিয়াম নামক ছত্রাক এ রোগের কারণ।
যে কোন বয়সের গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। রসুনের কন্দ ও শিকড়ে এই রোগের আক্রমণ দেখা যায়। এই রোগের কারণে আক্রান্ত কন্দে পচন ধরে এবং আক্রান্ত কন্দ গুদামজাত করে বেশি দিন রাখা যায় না।
রসুন চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- রোগ প্রতিরোধী বা সহনশীল জাত ব্যবহার।
- রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার ।
- ফসল পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করা অর্থাৎ একই জমিতে পর পর কমপক্ষে ৪ বছর একই ফসল না করা।
- নিয়মিত আগাছা ধ্বংস করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংশ করতে হবে।
- মাটি সব সময় স্যাঁত স্যাঁতে রাখা যাবে না।
- আক্রান্ত জমিতে প্রতি বছর রসুন চাষ করা যাবে না।
- ম্যানকোজেব গ্রুপের এগ্রিজে ডাইথেনএম-৪৫ অথবা ব্যাভিষ্টিন (কার্ববোন্ডাজিম) ছত্রাকনাশক ১ কেজি বীজে জন্য ১০০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধণ করে ভালোভাবে বপন করতে হবে।
বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
যখন রসুন গাছের পাতা শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ করে ঢলে পড়ে, তখন রসুন তোলার উপযোগী হয়ে উঠে। গাছসহ সম্পুর্ণ রসুন তুলে ফেলা হয় এবং ঐ ভাবেই রসুনগাছ ছায়াতে ভালভাবে শুকিয়ে নিয়ে শুকনো পাতা কেটে সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও রসুন উত্তোলনের পর পাতা ও শিকড় কেটে ব্যাগে এবং বাঁশের র্যাক, মাচায় এবং চটের বস্তাতেও সংরক্ষণ করা যায়। বীজের জন্য ভাল রসুন বাছাই করে বপন করলে ,হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে রসুন চাষের নানাদিক নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে এই রসুন চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে রসুন চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।
খুব ভাল। এ বছর আমিও রসুন চাষ করতে ইচ্ছুক।