2023 ছোলা চাষের পদ্ধতি ও ছোলার উপকারিতা

ছোলা একটি ডাল জাতীয় খাদ্য। এটি অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য। একটু কালচে রঙের এই শক্ত খাবার পেটে অনেকক্ষণ থাকে বলে দেহে বেশিক্ষণ শক্তি সরবরাহ হয়। আজ আমরা এই ছোলা সম্পর্কে জানবো। প্রথমে জেনে নেই ছোলা চাষ নিয়ে কিছু কথা। 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিতভাবে আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা জমি, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকেন। জীবনের নানা প্রয়োজনের সময়ে এসকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ছোলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এতে করে আপনারা সহজেই ছোলা চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এতে করে আপনারা সহজেই ছোলা চাষ করে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পারবেন এবং সেই সাথে বানিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। 

ছোলা চাষের জন্য জমি নির্বাচন

ছোলা চাষে ভালো ফলন পেতে ছোলার উপযুক্ত মাটি নির্বাচন করতে হবে। ছোলা ডালজাতীয় ফসল হওয়ায় ছোলা চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। এসব মাটিতে ছোলা ভালো জন্মায়। বাড়ির কাছে এই ধরনের মাটির জমি থাকলে সেখানে কুপিয়ে-কাপিয়ে ছোলার চাষ শুরু করা যেতে পারে। 

বীজ নির্বাচন

ছোলার কয়েকটি বিখ্যাত জাত আছে। বারি ছোলা-২ বা বড়াল, বারি ছোলা-৩ বা বরেন্দ্র, বারি ছোলা-৪ বা জোড়াফুল, বারি ছোলা-৫, বারি ছোলা-৬ বা নাভারুন। ছোলার এই জাতগুলো থেকে দুই মাস বা ১২০-১৩০ দিনের মাথায় ফসল সংগ্রহ করা যায়।

তাছাড়া ছোলার এসকল জাত ফসলকে আক্রান্তকারী ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এই রোগে ফসলের গাছ নুইয়ে পড়ে যায়। বারি ছোলা-২ বা বড়াল জাতের বীজের আকার বড় হওয়ায় এই জাত কৃষক ও ক্রেতারা বেশি পছন্দ করে। হালকা বাদামি এই ছোলা ৩০-৩৫ মিনিটের মাঝেই রান্না করে ফেলা যায়।

বীজ বপন

ছোলা চাষের ক্ষেত্রে বীজ দুইভাবেই বপন করা যায়। ছিটিয়েও বপন করা যায়, আবার সারিবদ্ধভাবেও বপন করা যায়। সারিবদ্ধভাবে বপন করতে চাইলে এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।

তখন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন পড়বে। আর ছিটিয়ে বপন করতে চাইলে বীজের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০-৬০ কেজি প্রতি হেক্টরে নিয়ে আসতে হবে। ছোলা চাষ করতে চাইলে অক্টোবরের শেষের দিক থেকে বীজ বপন শুরু করতে হবে। আবার অঞ্চলভেদে ডিসেম্বরের শুরুর দিকেও চাষ শুরু করা হয়। এ ছোলা হেক্টর প্রতি ১.৮-২.০ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। 

সার প্রয়োগ

জমি এবং ফসলকে হেলদি রাখার জন্য জমিতে যথাযথ সার প্রয়োগ করতে হবে। ছোলা চাষের জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু উন্নত সারের কথা বলেছেন। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, বোরিক এসিড আর অণুজীব সার উল্লেখযোগ্য।

প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া দিতে হবে ৪০-৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৮০-৯০ কেজি, এমওপি দিতে হবে ৩০-৪০ কেজি, বোরিক এসিড ১০-১২ কেজি এবং অণুজীব সার দিতে হবে ৫-৬ কেজি। অণুজীব সার গাছে নাইট্রোজেনের যোগান দেয়। গাছের শিকড়ে একধরনের গুটি সৃষ্টি করে, যা বাতাসের নাইট্রোজেন গাছে সাপ্লাই করে। 

সেচ ও আগাছা নির্মূলঃ 

ফসল যেটাই চাষ করা হোক, জমির পরিচর্যা করতে হবে। জমির পরিচর্যার জন্য জমির আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। বীজ বপনের একমাস পর জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। বৃষ্টির জল জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এছাড়াও লক্ষ্য রাখতে হবে জমির রস কমে যাচ্ছে কি না। জমির রস কমে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল সেচের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এভাবে পরিচর্যা চললে দুই থেকে আড়াই মাসের মাথায় ফসল ঘরে তোলা যাবে।

পোকামাকড়ের আক্রমণ দমন

ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণ হবে অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। পড বোরা নামে একধরনের পোকা আছে। শুককীট টাইপের পোকা। এরা ফল ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে ফেলে। পাশাপাশি গাছের নরম আগাও নষ্ট করে ফেলে।

এই পোকার আক্রমণ বেশি হলে ডেসিস, রিপকর্ড, সিমবুস, ফেসম থেকে যেকোনো একটি এক মিলিলিটার প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। জমিতে গাছ ঘন থাকলে বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগ হয় ছোলায়। এই রোগ হলে গাছের কান্ড, পাতা, ফুল, ফলে ধূসর রংয়ের ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়।

ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলে বা বাভিস্টিন প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ছোলার চারা গাছে একধরনের রোগ দেখা যায়, গাছের গোড়া পচন রোগ। এই রোগ হলে হালকা টান দিলেই গাছ মাটি থেকে উঠে চলে আসে। আক্রান্ত গাছ হলদে হয়ে যায়। গাছের হলদে অংশ পুড়িয়ে ফেলে এবং সুষম সার প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ছোলার গুদামজাত করণ

দুই থেকে আড়াই মাসের মাথায় ফসল ঘরে তোলা যায়। সাধারণত মার্চের মাঝামাঝি ফসল সংগ্রহ করতে হয়। ক্ষেতে যেমন পোকা ফসল নষ্ট করে, গুদামেও নষ্ট করে। ছোলার ভেতরে খেয়ে ফাঁকা করে ফেলে। এতে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

ছোলার সুষ্ঠু গুদামজাত করার ক্ষেত্রে ছোলার জল ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। তাছাড়া বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। 

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা একটি উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। কাঁচা বা ভুনা দুই অবস্থাতেই ছোলা খাওয়া যায়। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। যারা শরীরের ওজন কম নিয়ে টেনশনে আছেন তাদের জন্য কাঁচা ছোলা আশীর্বাদ। ছোলা শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এর জন্য ছোলা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা কাঁচা অবস্থায় খেতে হয়। ছোলা সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখা আবশ্যক। এতে ছোলার গায়ের অন্যান্য জীবাণু বা ছত্রাক সরে যায়। আর ছোলা খাওয়ার উপযুক্ত হয়।

তাছাড়া কাঁচা ছোলা সরাসরি খেতে সমস্যা হলে সামান্য সিদ্ধ করে নেয়া যেতে পারে। তবে কাঁচা ছোলার সাথে কাঁচা আদা খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক যাবে। আর অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা করে।

আজ আমরা আপনাদের সাথে ছোলা চাষ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে এই ছোলা চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে ছোলা চাষ করে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে। 

1 thought on “2023 ছোলা চাষের পদ্ধতি ও ছোলার উপকারিতা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top