“চালতা নাম শুনলেই মনে হয়, আচারটা খেতে কেমন? টক নাকি মিষ্টি ! হ্যাঁ এটাই সত্যি! চালতা ফল হিসেবে যতটা পরিচিত-তার থেকেও বেশি পরিচিত আচার হিসেবে। আজ আমরা আলোচনা করবো চালতার একাল-সেকাল নিয়ে।
চালতা একটি টক জাতীয় ফল। তেমন প্রচলিত না হলেও আমরা ঘরে টক রান্নাকরে বা আচার বানিয়ে খেয়ে থাকি।
আমাদের এ বাঙালি সমাজে এর আধিপত্য আচার হিসেবেই রয়ে গেছে সেই প্রাচীণ কাল থেকে ।
কিন্তু চালতার ঔষধিগুনও চমৎকার, চালতার টক খেলে সর্দি-জ্বর সেরে যায়, এছাড়া এটি শক্তি-বর্ধক, রক্ত-আমাশয় নিরাময়েও বেশ কার্যকরী।
আমরা আমাদের বাংলাভূমি ওয়েব সাইটে নিয়মিত, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এতে করে আপনারা কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি আরও নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। আমাদের এ তথ্যগুলো আপনারা আপনাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হয়ে থাকেন ।
আজ আমরা চালতা চাষ নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি খুব সহজেই চালতা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নেই চালতা চাষের বিস্তারিত
মাটি ও জলবায়ুঃ
চালতা চাষ সাধারণত ভেজা স্যাঁত-স্যাঁতে মাটিতে ভালো হয়। এছাড়া পাহাড়ী ও সমতল মাটিতেও ভালো হয়। চালতা চাষে তেমন কোন সার লাগেনা। আবার জলাবদ্ধতা কিংবা প্রখর রোদেও তেমন প্রভাব ফেলে না এ গাছের উপর। তাই এটি অনেক লাভজনক ফলন হিসেবে গণ্য।
বীজ বা চারা রোপণ পদ্ধতিঃ
চালতার বীজ থেকে চারা করা যায়, আবার গুটি কলমের মাধ্যমেও চারা তৈরী করা যায়। তবে কলমের চারায় ফলন তাড়াতাড়ি আসে এবং ভালো মানের ফলন পাওয়া যায়।
চারা তৈরী করার পর যথাস্থানে রোপন করার পূর্বে গর্তে জৈব সার ১৫-২০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, এমওপি ২৫০ গ্রাম দিয়ে মাদা তৈরী করে ১৫-২০ দিন রেখে তারপর, সেখানে গাছ রোপণ করতে হবে এবং গাছগুলো ১৫-২০ ফিট দূরত্বে রোপণ করতে হবে ।
কারণ চালতা গাছগুলো সাধারণত ২০-২৫ ফিট উঁচু হয়ে থাকে আর দূরত্ব ঠিক হলে গাছের ফলন ভালো হবে। চারা রোপণ করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিতে হবে। তাহলে গাছ সোজাভাবে বড় হবে ।
পরবর্তী পরিচর্যাঃ
এ গাছে তেমন কোন সার কিংবা বালাইনাশক লাগে না। তবে এ গাছ বর্ষা কালে রোপণ করলে ভালো । গাছ রোপণ করার পর গাছ বড় হতে থাকলে সে সময় ডালপালা ছেঁটে নির্দিষ্ট আকৃতি দেয়া যায়। আর আগাছা জন্মালে তা পরিষ্কার করে দিতে হয়। তাহলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় ।
রোগবালাই দমনঃ
চালতা গাছে তেমন কোন রোগ বালাইর আক্রমন হয় না। তারপরও এক ধরনের ফল ছিদ্রকারী পোঁকার আক্রমন হয়, সেক্ষেত্রে সুমিথিয়ন ২ মিলি. ১ লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ২-৩ বার স্প্রে করলে, এ রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে।
ফল সংগ্রহঃ
চালতা দেখতে সবুজ প্রকৃতির হলেও পাকলে কিন্তু হালকা হলুদ ও ফ্যাঁকাসে সবুজাভ দেখা যায়। সাধারণত শীতের শুরুতে চালতা পাকতে আরম্ভ করে। পাকার পর গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করা যেতে পারে।
যেহেতু চালতা সহজে পঁচনশীল ফল নয় তাই কিছুদিন রেখেও খাওয়া যায়। আবার দুরবর্তী স্থানেও নেয়া যায়। একটি ২০-২৫ ফিট গাছ থেকে, বছরে ৩০০০ থেকে ৪০০০ হাজার চালতা পাওয়া যায়। তাই এটি অনেক লাভজনক একটি ফসল।
চালতা যেহেতু সহজেই কোন কষ্ট ছাড়া ফলানো যায় তাই আমরা বসত-বাড়ির আশে পাশে কিংবা পতিত জমিতে এর চাষ করতে পারি । এছাড়াও সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চালতার আচার বাজারজাত করা যেতে পারে, আর এটি লাভজনক ব্যাবসায় বটে ।
আসুন আমরা বিনা পরিশ্রমে চালতা চাষ করে লাভবান হই। আমাদের লেখা ভালোলেগে থকলে যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুকে জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।