ভারতে অনলাইনে বিবাহ সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন? জানুন এখানে

বিবাহ সার্টিফিকেট অনলাইন: উন্নত অনলাইন সেবার মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান আর লো উন্নত করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহুবিধ পরিসেবা সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৫ সালে ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশন শুরু করেছে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশকে ডিজিটালভাবে ক্ষমতাবান করার জন্য এই মিশন শুরু করা হয়েছিল। বিবাহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। বিবাহকে আইনত বৈধ করতে এবং কোন আইনী জটিলতা এড়াতে, কোন প্রয়োজনীয় দলিলপত্রে বিবাহিত বা ডিভোর্সি এই তথ্য প্রমাণ করতে বিবাহ সনদের প্রয়োজন হয়।

সবসময় এই সনদ সংশ্লিষ্ট অফিস হতে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। তাই এই সমস্যা দূরীকরণে বিবাহ সনদ অনলাইনের মাধ্যমে ডাউনলোড করার সুবিধা চালু করা হয়েছে এই জাতীয় উদ্যোগের ফলে অনেক রাজ্য এবং শহরগুলি অনলাইনে বিবাহের সনদপত্র পাওয়ার সুবিধা ভোগ করছে।

ভারতে অনলাইনে বিবাহ সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন? জানুন এখানে
ভারতে অনলাইনে বিবাহ সার্টিফিকেট কিভাবে পাবেন? জানুন এখানে

সুপ্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে বিবাহ সনদ কিভাবে অনলাইনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য।

ভারতে প্রচলিত বিবাহ আইন ও নিয়ম জানুন {সকল ধর্মের আইন}

ভারতে অনলাইনে বিবাহ সনদ পাওয়ার উপায় জেনে নিনঃ

বিবাহ নিবন্ধন সনদ কি?

পুরুষ এবং নারী এই দুটি পক্ষের মধ্যে বিবাহ নামক পবিত্র বন্ধন স্থাপিত হয়েছে বিবাহের নিবন্ধন সনদ এর প্রমাণ হিসাবে কাজ করে। বর-কনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলেও তা আইনত প্রমাণ করতে গেলে বিবাহ নিবন্ধনকরণ সনদপত্রের প্রয়োজন।

প্যান, পাসপোর্ট এবং ভিসার গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্রে এবং অনেক সরকারী নথির জন্য আবেদন করার সময় এটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। হিন্দুদের মধ্যে বিবাহ নিবন্ধন সনদ হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ এর অধীনে পরিচালিত হয়, যদিও বিশেষ বিবাহ আইন ভারতের সকল নাগরিকের জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রযোজ্য।

বিভিন্ন চাকরি, পাসপোর্ট বা অন্যান্য ক্ষেত্রে নাগরিক বিবাহিত নাকি অবিবাহিত নাকি ডিভোর্সী এই তথ্যটি প্রয়োজনীয় বিধায় তা যেকোন সময় প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তা অনলাইনের মাধ্যমে পেতে হলে আগে বিবাহ নিবন্ধিত হতে হবে।

আইনত প্রমাণ বা নিবন্ধিত না হলে তার কোন লিখিত বা অনলাইন রেকর্ড পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আগে বৈধ বিবাহ এবং বিবাহ নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক।

ভারতে পুত্রবধুর অধিকার কি? মহিলাদের বিয়ের আগে জানা দরকার সবকিছু

বিবাহ নিবন্ধনের জন্য কোথায় কাছে যেতে হবে?

যে সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে পাত্র-পাত্রী বিবাহ করেছিলেন বা বিবাহবন্ধনের আগে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কেউ অন্তত ছয় মাস যার কাছে অবস্থান করেছিলেন তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন হবে বিবাহ নিবন্ধন করতে।

বিবাহ নিবন্ধনের কিছু আবশ্যকীয় শর্তাবলি রয়েছে, এগুলো হচ্ছে- বরের বয়স নূন্যতম ২১ বছর হতে হবে এবং কনের বয়স ১৮ বছর হতে হবে দুই জন সাক্ষী (বিশেষ বিবাহ আইনের মাধ্যমে বিয়ের ক্ষেত্রে তিনজন) কে উপস্থিত থাকতে হবে, এবং হলফনামা তৈরি করতে হবে যেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।

হলফনামায় পাত্র-পাত্রীর বয়স, পিতা-মাতার নাম, বৈবাহিক অবস্থা, সাক্ষর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যদ্বারা ফর্ম পূরণ করতে হবে।

প্রেমিক বা প্রেমিকা ব্ল্যাকমেল করলে কি করবেন? আইনি নিয়ম ও পদক্ষেপ

বিবাহ নিবন্ধনের জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজনীয়

বিবাহের আবেদন ফর্ম যথাযথ স্বামী এবং স্ত্রী দ্বারা পূরণ করতে হবে এবং সেখানে তাদের ছবিসহ স্বাক্ষর থাকতে হবে।
উভয় পক্ষের জন্ম তারিখের প্রমাণস্বরুপ জন্মসনদের কপি, অথবা স্মার্ট আইডি কার্ড,পাসপোর্ট ইত্যাদি নথির কপি প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতে হবে (এই নথিটি ম্যাট্রিকের সনদপত্র / পাসপোর্ট / জন্ম সনদপত্রের কপিও হতে পারে)।

হিন্দু বিবাহ আইন এবং বিশেষ বিবাহ আইন উভয়ের অধীনেই পাত্র-পাত্রীর বয়স হতে হবে পুরুষদের জন্য সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং নারীদের জন্য ১৮ বছর।

স্বামী ও স্ত্রীর নাগরিকত্বের প্রমাণ (রেশন কার্ড, আধার কার্ড, নির্বাচন ভোটার আইডি, প্যান কার্ড, বা বিদ্যুত বিলের কপি ইত্যাদি) প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। উভয় পক্ষের দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং বিবাহের পর একটি যুগল ছবি প্রয়োজন হবে।

ব্যাংক একাউন্ট থেকে ঠকিয়ে টাকা বের করে নিলে কিভাবে ফেরত পাবেন?

অনলাইনে বিবাহ সনদ নেওয়ার প্রক্রিয়া

অনলাইনে বিবাহের সনদপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করুন নিচের লিংকে গিয়ে-
Http://edistrict.delhigovt.nic.in/ এই লিংকে প্রবেশ করুন। ‘ডিএম অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন’ এ ক্লিক করুন এবং নিবন্ধন করুন।

আপনার জেলা নির্বাচন করুন এবং পরবর্তী ধাপে যান। ফর্মে চাওয়া তথ্যগুলোর বিশদ পূরণ করুন এবং ‘বিবাহের সনদপত্রের নিবন্ধনকরণ’ নির্বাচন করুন।বিবাহের সনদপত্রের ফর্ম পূরণ করুন এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ নির্বাচন করুন।

আবেদন জমা দিন’ এই ট্যাবটিতে ক্লিক করুন এরপর আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্টের বিবরণ এবং নির্দেশাবলীর সাথে একটি অনুমোদনের স্বীকৃতি স্বরুপ একটি কপি পাবেন। এই কপিটি প্রিন্ট করে নিন।

বিবাহ নিবন্ধন সনদপত্রের জন্য নির্ধারিত ফি রয়েছে। দিল্লিতে বিবাহ নিবন্ধনের সনদপত্রের জন্য ফি প্রদান করতে হবে। হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হলে বিবাহ সনদের নিবন্ধন ফি ১০০ রুপি। বিশেষ বিবাহ আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পাদন হয়ে থাকলে বিবাহ নিবন্ধন ফি ১৫০ রুপি। জেলা ক্যাশিয়ার আবেদন ফর্মের সাথে প্রাপ্ত রসিদের এবং নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।

অন্যান্য রাজ্যে বিবাহের সনদপত্র নিতে হলে অনলাইনে রাজ্য অনুযায়ী দেওয়া লিঙ্কগুলিতে প্রবেশ করে নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য প্রদান করে নিবন্ধনের কপি নিতে হবে। আপনি বিভিন্ন রাজ্যের বিবাহ নিবন্ধন ফর্ম এবং বিবাহের সনদপত্র ফর্মটি ডাউনলোড করতে ব্যবহার করতে পারেন।

রাজ্য অনুযায়ী অনলাইন সনদ এবং সনদ পাওয়ার ফি এর সামান্য তারতম্য হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিটি এখন অনেক সময় আর ঝামেলা হ্রাস করেছে। সরকারী দপ্তরে যেকোন স্থান থেকে যেকোন সময় যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে অনলাইনে বিবাহ সনদ পাওয়ায় বিভিন্ন ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।

চাকরি থেকে অবৈধ ভাবে বের করলে শেষ সেলারি কিভাবে পাবেন?

শেষ কথা

ডিজিটাল ভারত গঠনের ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তারমধ্যে জনগণের অতি প্রয়োজনীয় সনদ, নথি, পরিচয়পত্র এগুলো যাতে অনলাইনের মাধ্যমেই দেশের যেকোন স্থান থেকে পাওয়া সম্ভব হয়, এগুলো অন্যতম। সব বিষয়ে রাজ্য, শহর এবং সরকারী দপ্তরভিত্তিক সেবাতে কালবিলম্ব ঘটে।

অনেকেই সময় এবং ঝামেলার জন্য অনেক সেবা গ্রহণে ভয় পান বা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সেবা গ্রহণে আগ্রহী হন না। আর এইভাবেই দেশ পিছিয়ে পড়ে অনেকক্ষেত্রে। এসব সমস্যা দূর করতে এবং যেকোন আইনী প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে অনলাইনে বিবাহ নিবন্ধন সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আশা করি এ বিষয়টি বিস্তারিত জানানোর আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top