ভারতে প্রচলিত বিবাহ আইন ও নিয়ম জানুন {সকল ধর্মের আইন}

বিবাহ একটি মৌলিক অধিকার। প্রতিটি দেশের বিবাহ আইন রয়েছে৷ এক দেশের সাথে অন্য দেশের প্রথা এবং আইনে পার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক। ভারতে বিভিন্ন ধর্ম অনুযায়ী বিবাহ আইন রয়েছে।

একই ধর্মের পাত্র-পাত্রী অথবা ভিন্ন ধর্মের পাত্র-পাত্রীরা বিবাহ করতে চাইলে তাদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন নিয়ম ও প্রথা মেনে বিবাহ করতে হবে। ধর্ম অনুযায়ী বয়স, পণপ্রথা, বহুবিবাহ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।

ভারতে প্রচলিত বিবাহ আইন ও নিয়ম জানুন {সকল ধর্মের আইন}
ভারতে প্রচলিত বিবাহ আইন ও নিয়ম জানুন {সকল ধর্মের আইন}

ভারতে যেসব ধর্মের মানুষ বাস করে তাদের ধর্মীয় আইন সম্পর্কে জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের আজকের আলোচনায়। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।

ভারতে বিবাহ আইন:

বিবাহ হল এমন একটি প্রক্রিয়া বা চুক্তি যা চিরকালের জন্য দুজন মানুষকে একসাথে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ করে, এবং একসাথে থাকার সামাজিক ও ধর্মীয় অনুমতি প্রদান করে।

ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যেখানে মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনও ধর্ম অনুসরণ করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। ভারতে বিবাহ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধর্মীয় আইন রয়েছে।

আসুন আমরা ভারতে বিবাহ এবং বিবাহ নিবন্ধকরণ সম্পর্কিত স্ব স্ব ধর্মীয় আইনগুলি সম্পর্কে জেনে নেই।

ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে? ডিভোর্স দিতে কি লাগে? আইন-নিয়ম

হিন্দু বিবাহ আইন- ১৯৫৫

হিন্দু বিবাহ আইন
হিন্দু বিবাহ আইন

হিন্দু বিবাহ এবং আদালত বিবাহ বিধি অনুসারে ভারতে বিবাহ বৈধ হওয়ার আগে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়।
বিবাহ করতে চান এমন পাত্র-পাত্রীদের অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে এবং তাদের পূর্ববর্তী বিবাহ যদি থেকে থাকে তবে পুরুষের স্ত্রী জীবিত থাকতে সে দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবে না। মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

বিবাহ করতে ইচ্ছুক পাত্রীর বয়স ১৮ বছর, এবং একজন পুরুষের ২১ বছর বয়স হতে হবে। এর আগে অপ্রাপ্ত বয়সে কোন পুরুষ বা নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে বিবাহের জন্য রাজী হতে হবে। কোন পক্ষের জোর জবরদস্তিতে বিবাহ করা যাবেনা।

মানসিকভাবে উভয়পক্ষকে বিবাহের জন্য রাজী হতে হবে। কোন প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত অবস্থায় কেউ বিবাহ করতে পারবে না। মানসিকভাবেও উভয়কেই সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে হবে। উভয়কেই সারাজীবন একে অন্যের জীবনসঙ্গী হয়ে থাকার ওয়াদা করতে হবে।

বৈবাহিক সমস্যার সমাধান করুন বিবাহ পরামর্শ দিয়ে – জানুন কিভাবে?

খ্রিস্টান বিবাহ আইন

খ্রিস্টান বিবাহ আইন
খ্রিস্টান বিবাহ আইন

ভারতীয় খ্রিস্টান বিবাহ আইন, ১৮৭২ আইন অনুসারে, একটি গির্জার পুরোহিত,বা যাজকের উপস্থিতিতে এবং ভারতীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নির্ধারিত বিধি অনুসারে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা অনুষ্ঠিত হয়।

খ্রিস্টান বিবাহ আইন অনুযায়ী বৈধ বিবাহের জন্য যে শর্তগুলি পূরণ করতে হবে তা হল-বর ও কনের বয়স যথাক্রমে ২১ বছর এবং ১৮ বছর হতে হবে। বর ও কনে উভয়কেই স্বেচ্ছায় এবং কোনও বাধ্যবাধকতা ছাড়াই বিবাহে সম্মতি দিতে হবে।

বিয়ের সময় উভয় পক্ষের কোন পূর্ব বিবাহ আছে কিনা তা স্বীকার করতে হবে।বিবাহবিচ্ছেদ না হলে আগের স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকতে কেউ নতুন করে বিবাহ করতে পারবেন না। পাত্র-পাত্রী উভয়কেই মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। কমপক্ষে ২ জন বিশ্বস্ত সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

একজন রেজিস্ট্রারের কাছে বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা আবশ্যক, যিনি ভারতে বিবাহ নিবন্ধন করার এবং বিবাহের সনদপত্র দেওয়ার লাইসেন্স ও অধিকার রাখেন।

হিন্দু মহিলাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন ও নিয়ম এবং অধিকার

ভারতে বিবাহ নিবন্ধন

বিবাহ নিবন্ধন ২ জন পুরুষ ও মহিলার বিবাহকে বৈধতা দেয়। ভবিষ্যতে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে কোনও বিরোধের ক্ষেত্রে বিবাহের সনদপত্র বিয়ের আইনী প্রমাণ হিসাবেও কাজ করে।

ভারতে কোর্ট ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন
ভারতে কোর্ট ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন

পারিবারিক আইনজীবী কোন সমস্যা হলে পারিবারিক আদালতে মামলাও দায়ের করতে পারেন যাতে করে স্বামী,স্ত্রীর মধ্যে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা যায়। আর এজন্য বিবাহ রেজিষ্ট্রি হওয়া বাধ্যতামূলক। যেসব বিবাহ ধর্মীয় আইনে শুধু রীতিনীতি মেনে বা মৌখিক বিবাহ হয় সেসব বিবাহের আইনত কোন ভিত্তি বা প্রমাণ থাকেনা।

তাই কোন সমস্যা হলে দেশের প্রচলিত নিয়মে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হয়না। ভারতে বিবাহ নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং বিয়ের জন্য নেওয়া সময় প্রতিটি রাজ্যে অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে।

ভারতে বিবাহ নিবন্ধনে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তাতে প্রয়োজনীয় সংযুক্তি, ডকুমেন্টস, ছবি, সনদ এবং নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি সহ পারিবারিক আইনজীবীর সহায়তায় দায়ের করা যথাযথভাবে পূর্ণ বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আবেদন জমা দেওয়ার জন্য স্বামীদের বিবাহের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যেতে হবে।

যাচাই করার জন্য সমস্ত জমাদানকৃত দলিল দস্তাবেজগুলির অবশ্যই দুটি সেট থাকতে হবে। মূলকপি এবং পাশাপাশি তাদের সত্যায়িত অনুলিপি থাকতে হবে।

বাবার সম্পত্তিতে ছেলে মেয়েদের আইনি অধিকার কি? জেনে নিন

বিবাহের রেজিস্ট্রার অফিসে বিবাহের আগে স্বামী, স্ত্রী দুজনকেই যেতে হবে এবং বিবাহ রেজিষ্ট্রির আবেদন ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।

ভারতে বিবাহ নিবন্ধনকরণের আবেদনে স্বামী, স্ত্রী দুজনের পূর্ণ সম্মতি, প্রয়োজনীয় ছবি, দলিল, সনদ এবং তাদের পূর্বের বিবাহ ছিল কিনা তা সম্পর্কিত সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য অবশ্যই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অন্যথায় বিবাহ রেজিষ্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবেনা। জমাকৃত সমস্ত নথি যাচাইয়ের পরে, বিবাহ রেজিষ্ট্রি অফিস বিবাহের সনদপত্র দেওয়ার তারিখ নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেয়।

বিবাহ নিবন্ধনের নির্ধারিত তারিখে বিবাহিত দম্পতিকে নিবন্ধকের সামনে হাজির হতে হবে। ভারতে বিবাহ নিবন্ধনকরণ এবং বিবাহের সনদপত্র ইস্যু করার মোট সময় হচ্ছে ১৫ দিন।

ভারতে কোর্ট ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি

নির্ধারিত ফরমে একটি নোটিশ জেলার বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেওয়া হয় যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দুজন অথবা কমপক্ষে একজন উপস্থিত থাকেন বা নিবন্ধককে নোটিশ দেওয়ার তারিখ থেকে কমপক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিষ্ট্রির কাজ সম্পন্ন হয়।

আদালত বিবাহের জন্য বিবাহের ফি এবং নির্ধারিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নোটিশ জমা দিতে হবে। আপনি আদালত বিবাহ নিবন্ধকরণ শুরু করার আগে, আপনার বিবাহ নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি মসৃণ এবং কার্যকর করার জন্য আপনাকে বিবাহ সম্পর্কিত আইনজীবিদের সাথে পরামর্শ করার সবিশেষ অনুরোধ রইল। কারণ তারা আপনাকে সঠিক তথ্য এবং পরামর্শ সরবরাহ করবে।

ব্যাংকে চেক বাউন্স হলে কি করবেন? জানুন আপনার আইনি অধিকার

শেষ কথা

বিবাহ সব ধর্ম এবং সমাজেই বৈধ এবং মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্রভেদে বিবাহের নিয়ম-নীতি আচার-অনুষ্ঠানে পার্থক্য থাকে। কিন্তু নীতিগত বিষয়ে সব ধর্মেই সাদৃশ্য লক্ষণীয়।

বিবাহের উদ্দেশ্য থাকে দুজন নর-নারী স্বেচ্ছায় তাদের সারাজীবন একত্রে কাটাতে চায়। সমাজ বিবাহের মাধ্যমে তাদের একত্রে আজীবন থাকার ধর্মীয় ও সামাজিক অনুমতি প্রদান করে থাকে। উপরিউক্ত আলোচনায় ভারতে প্রচলিত ধর্ম অনুযায়ী বিবাহ আইনগুলো বর্ননা করা হয়েছে যার মাধ্যমে আপনারা সহজেই সকল ধর্মের বিবাহ আইন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা পাবেন আশা করি।

সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top