ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে হয়? কি কি লাগে? সবকিছু এখানে

ট্রেডমার্ক হল এক ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক অদৃশ্য সম্পত্তি। ব্র্যান্ডের নাম এবং লোগোকে অযাচিত ব্যবহার বা কপির হাত থেকে সুরক্ষিত করতে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ট্রেডমার্কের নিরাপত্তা বিধান করা আবশ্যক।

ভারতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা হয় ট্রেডমার্ক আইন, ১৯৯৯ অনুসারে যা ট্রেডমার্কের আইনী সুরক্ষা দেয় এবং যাতে অন্য কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক নকল অথবা অবৈধভাবে ব্যবহার না করতে পারে।

ট্রেডমার্কের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়, পরিচালনা ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিল্প নীতি ও প্রচার অধিদফতরের (ডিআইপিপি) নামক সরকারী সংস্থা পেটেন্টস, ডিজাইনস এবং ট্রেডমার্কের নিয়ন্ত্রক কতৃক। সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে কীভাবে ভারতে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে হয়? কি কি লাগে? সবকিছু এখানে
ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন কিভাবে হয়? কি কি লাগে? সবকিছু এখানে

এছাড়াও থাকবে ট্রেডমার্ক নিবন্ধকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে তথ্য। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। কথা বলব যেমন ট্রেডমার্ক নিবন্ধন না করে আপনি অন্য ব্যক্তি এবং সংঘের বিরুদ্ধে আপনার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।

ভারতে অনলাইন কোর্ট ম্যারেজ প্রক্রিয়া ও আইনি নিয়ম কানুন

ভারতে ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন সম্পর্কে জেনে নিন:

ট্রেড মার্ক কি?

ট্রেডমার্ক বলতে কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা, প্রতীক বা চিহ্নকে বোঝায় যা গ্রাফিকাল উপায়ে তৈরি এবং ব্যবহার করা যায়। কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের কোনও উদ্যোগের দ্বারা সরবরাহিত পণ্য এবং পরিষেবাদির মধ্যে পার্থক্য করতে ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে থাকে।

“ট্রেডমার্ক” শব্দ অর্থ একটি ভিজ্যুয়াল প্রতীক যা শব্দ বা নাম হতে পারে বা সংখ্যা, লেবেল, রঙ সমন্বয় ইত্যাদি হতে পারে যা কোনও ব্যবসায়কে তাদের পণ্যের থেকে বাজারে বিদ্যমান পণ্যগুলোকে আলাদাভাবে চিনতে এবং ব্র‍্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে।

ট্রেডমার্ক হিসেবে নির্দিষ্ট শব্দ, ছবি, প্রতীক, শ্লোগান, রেকর্ড, গ্রাফিক্স, লোগো, রঙ, সাউন্ড ইত্যাদি ব্যবহার করা হতে পারে।

গাড়ি চালানোর ট্রাফিক আইন ও শাস্তি নতুন নিয়ম গুলি জানুন

ট্রেডমার্কের জন্য যারা আবেদন করতে পারবে এবং নিবন্ধন ফি

ট্রেডমার্ক পাওয়ার অ্যাপ্লিকেশন সহজেই যেকোন বেসরকারী সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এনজিও অথবা কোম্পানি করতে পারবে।

তবে এনজিও, এলএলপি বা সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে, ট্রেডমার্কটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ের নামে নিবন্ধনের জন্য আইনে উল্লেখ রয়েছে।

ফর্ম টিএম-এ এর অধীনে ভারতে ট্রেডমার্ক ফাইল করার আনুমানিক বেসিক ফি,স্বতন্ত্র প্রারম্ভিক সংস্থা বা ছোট এন্টারপ্রাইজের ক্ষেত্রে-ই-ফাইলিং – ৪,৫০০ টাকা। ম্যানুয়াল ফাইলিং – ৫০০০ টাকা। অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে- ই-ফাইলিং – ৯,০০০ টাকা।ম্যানুয়াল ফাইলিং – ১০,০০০ টাকা।

বন্টননামা কি? বন্টননামা কিভাবে তৈরি করা হয়? জানুন সবকিছু

ট্রেড মার্ক নিবন্ধনের সুবিধা

ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হওয়ার অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক ব্যবহার করা হয় তারা গ্রাহকের কাছে তাদের একটি পৃথক পরিচয় গড়ে তুলতে পারেন। গ্রাহকরা যেহেতু কোনও ব্র্যান্ডের নাম অনুসারে কোনও একক পণ্য বা পরিসেবা সনাক্ত করে থাকেন তাই তাদের কাছে ট্রেডমার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্য কোন কোম্পানি যার ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নিশ্চিত করা হয়েছে সে কোম্পানির ট্রেডমার্ক অন্য প্রতিযোগীরা নকল করতে পারবে না এবং এটি কোম্পানির পৃথক পরিচয় ও অদৃশ্য সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হবে।

যেসব কোম্পানির ট্রেডমার্ক গ্রাহকদের কাছে পরিচিত নয় অথবা ট্রেডমার্ক নেই সেসব প্রতিষ্ঠানকে গ্রাহকরা আস্থাভাজন মনে করে না। আমরা যখন কোন পণ্য বা সেবা গ্রহন করব বলে স্থির করি তখন আগে ব্র‍্যান্ড নির্ধারণ করি, কারণ তাদের ট্রেডমার্কের কারণে তাদের পণ্যমান বা সেবার উপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।

এতে করে ট্রেডমার্ক নিবন্ধনকৃত কোম্পানি বাজারে তাদের অবস্থান সৃষ্টি ও বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারে। যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা হয় তাদের ট্রেডমার্ক আইনী সুরক্ষা পায়।

কেউ যদি তাদের ট্রেডমার্কের কোন চিহ্ন, প্রতীক বা কোন অংশ নকল করার চেষ্টা করে তবে প্রতিষ্ঠান চাইলে উক্ত নকলকারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। কিন্তু যেসব কোম্পানি তাদের ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করেনি তারা এ ধরনের আইনী সহায়তা পায়না।

দাদুর সম্পত্তিতে নাতি-নাতনিদের অধিকার আছে কি? জানুন অধিকার আইন

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া

একটি ট্রেডমার্ক ফাইল করার প্রক্রিয়া নিম্নলিখিত ৩ টি পদক্ষেপ নিয়ে গঠিত। ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের প্রথম পদক্ষেপ ট্রেডমার্কের শ্রেণী বা ধরণ নির্বাচন করা। সব প্রতিষ্ঠান এক ধরনের সেবা বা পণ্য নিয়ে কাজ করেনা। তাই ট্রেডমার্কের ধরণ সব প্রতিষ্ঠানের এক নয়।

এজন্য ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে আগে কোম্পানির সেবা অথবা পণ্য কোন ধরনের কোম্পানি, প্রাইভেট না পাবলিক, সেবা নাকি পণ্য, পণ্য কি ধরনের ইত্যাদি বিষয়গুলো আগে নির্দিষ্ট করতে হবে। একটি চিকিৎসা প্রদানের ক্লিনিকের ট্রেডমার্ক আর একটি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্কের মধ্যে শ্রেণিবিভাজন রয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে ট্রেডমার্ক যাচাইকরণ, যে ট্রেডমার্কটি ব্যবহার করার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে স্র‍্যা এর আগে কেউ ব্যবহার করেছে কিনা, তা যাচাই করে অতঃপর ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়। ট্রেডমার্কের জন্য নির্দিষ্ট প্রতীক, চিহ্ন, শব্দ, চিত্র, ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে অনুমোদনের উদ্দেশ্য জমা,দেওয়া হয়।

এটা,যাচাই-বাছায়ের পর জানানো হয় যে ট্রেডমার্কটি ব্যবহার করা যাবে নাকি যাবেনা। আর এটা নিশ্চিত করার জন্য ট্রেডমার্কের জন্য নির্বাচিত ব্র্যান্ড নামের পাশাপাশি ট্রেডমার্ক লোগো এবং প্রতীক যাচাই করা হয়। পরীক্ষা এবং যাচাইকরণের পর এটি সবার চেয়ে ভিন্ন হলেএটি নিবন্ধনভুক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়।

লোগো বা ব্র্যান্ডের নামটি ইতিমধ্যে নিবন্ধনভুক্ত থাকলে ট্রেডমার্ক বিধি লঙ্ঘন করার জন্য এটি আরও সংশোধন করে পুনরায় যাচাইয়ের জন্য জমা দিতে বলা হয়।

তৃতীয় ধাপে রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করা। যখন নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নির্বাচিত ব্র্যান্ডের নাম বা লোগোটি অনন্য এবং নিবন্ধনভুক্ত হওয়ার অনুমতি পেয়েছে, নথি এবং প্রয়োজনীয় দলিলপত্র সংগ্রহের মাধ্যমে প্রস্তুতিটি সম্পন্ন করা হয়।

আবেদন ফর্মটি যথাযথভাবে পূরণ করা হয় এবং নিবন্ধনকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং নির্দিষ্ট অর্থ ফি হিসেবে প্রদান করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বিবাহ বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয় বিবাহ কবে ও কীভাবে করা যেতে পারে?

শেষ কথা

যেকোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের ট্রেডমার্ক থাকা আবশ্যক। কারণ ট্রেডমার্কই একটি কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিকে আলাদা করে। ট্রেডমার্ক আছে যেসব কোম্পানির তাদের সুনাম অন্য যেকোন কোম্পানি থেকে বেশী এবং গ্রাহকদের কাছে সেসব কোম্পানিগুলো বেশী আস্থা অর্জন করে থাকে। এজন্য ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক।

ট্রেডমার্ক থাকলে কোম্পানির নিজস্বতা বজায় থাকে এবং আইনত কোন সমস্যা হলে বা উক্ত ট্রেডমার্ক নকল করে কেউ পণ্য বা সেবার নামে প্রতারণা করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। এজন্য কোম্পানি গঠনের সময় ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করায় দেরী করা উচিত নয়।

আশা করি ভারতে ট্রেডমার্ক রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top