বুদ্ধ পূর্ণিমা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Buddha Purnima 2024: History and Significance

বুদ্ধ পূর্ণিমা 2024 (Buddha Purnima 2024 Date Time and Significance) 2024 বুদ্ধ পূর্ণিমার ইতিহাস এবং জানুন বুদ্ধ পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়? বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য বুদ্ধ পূর্ণিমার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাছাড়া বাঙালি ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে প্রতিনিয়ত কোন না কোন দেবদেবীর পূজা অর্চনা করা হয়। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল বুদ্ধ পূর্ণিমা, যা কিনা সুখ-সমৃদ্ধি পাওয়ার জন্য নারায়ণের পূজাও করা হয়।

এই দিন বৌদ্ধ মন্দিরগুলিতে যেমন দিন রাত উপাসনা চলে। তেমনি বাড়িতে বাড়িতে হয় নারায়ণের পুজো। আর আমরা সবাই জানি যে নারায়ণের পূজোতে সিন্নি, দুধ, কেশর এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নৈবেদ্য। যেগুলি ছাড়া পূজা অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়।

বুদ্ধ পূর্ণিমা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Buddha Purnima History and Significance
বুদ্ধ পূর্ণিমা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Buddha Purnima 2024 History and Significance

বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা হল বুদ্ধ পূর্ণিমা, বুদ্ধ পূর্ণিমা বুদ্ধ জয়ন্তী নামেও পরিচিত। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। এই তিথিতে বুদ্ধদেবের আবির্ভাব হয়েছিল বলে ইতিহাসে জানা যায়। বৈদিক সাহিত্য মতে ভগবান বুদ্ধ বিষ্ণুর আরেকটি অবতারও। বৈদিক সাহিত্য মতে পৃথিবী থেকে হিংসা ও সহিষ্ণুতা চিরতরে মুছে দেওয়ার জন্যই বুদ্ধের আবির্ভাব হয়েছিল। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে সেই কথা পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নরসিংহ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বুদ্ধ পূর্ণিমাতে পূজা অর্চনা ও তাৎপর্য:

পূজার পাশাপাশি এদিন অনেকেই তুলসী মঞ্চেও পূজা অর্চনা করেন। এছাড়া যে সমস্ত বাড়িতে নারায়ণ ঠাকুর রয়েছে, সে সমস্ত বাড়িতে এই দিনটিতে বিশেষভাবে নারায়ণের পূজা করা হয়। অনেক ভক্তরা এই তিথিতে বুদ্ধর মন্দিরে গিয়ে বিশেষভাবে পূজা অর্চনা ও উপাসনা করে থাকেন।

2024 বুদ্ধ পূর্ণিমা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

অনেকে গরিব দুঃখীদের খাইয়ে থাকেন, অনেক কিছু দানও করে থাকেন। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে হয় পূর্ণিমার পূজা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটির যেমন বিশেষ বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি হিন্দু মতে এই বৈশাখী পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে।

আর তাই এই দিনটি বৌদ্ধের পাশাপাশি আরো যাদের আরাধনা করা যায় তারা হলেন বিশেষ করে নারায়নের পূজা, সেইসঙ্গে চন্দ্র দেবের ও পূজা করা হয়। হিন্দু ধর্ম অনুসারে বিষ্ণু, গৌতম বুদ্ধ এবং চন্দ্র দেবের পূজা একসাথে করলে সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন কাঁচা দুধ, মধু মিশিয়ে শিবলিঙ্গ কে স্নান করিয়ে আকন্দ ফুলের মালা আর ফল দিয়ে পুজো দেওয়ার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ করা আছে। বলা যায় যে এইভাবে পূজা করলে গৃহস্থের মঙ্গল হয়। এছাড়াও বাড়িতে অশত্থ গাছ থাকলে তাতে লাল চেলি দিয়ে মুড়ে ফুল ধুপ দিয়ে পূজা করতে হয়।

তাছাড়া এদিন বাড়িতে আগমন হয় মা লক্ষ্মীর, তাই তুলসী গাছেও ফুল, জল দিয়ে পূজা করতে পারেন। সদর দরজাতে আম পাতা দিয়ে মালা তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখলে দাম্পত্য সুখ বজায় থাকে বলে মনে করা হয়।

হিন্দু ধর্ম অনুসারে বৈশাখী পূর্ণিমার দিন এর বিশেষ গুরুত্ব অর্থাৎ বুদ্ধ পূর্ণিমার বিশেষ গুরুত্ব: 

বৈশাখ মাস যা কিনা একটি নতুন বছরের সূচনার মাস। এই মাসটি খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এই মাসে অনেকে অনেক কিছু কিনে থাকেন, দান, ধ্যান করে থাকেন। যাতে তাদের সম্পূর্ণ বছরটা খুবই ভালোভাবে কাটে।

এই বৈশাখ মাসে তুলসীর সঙ্গে নারায়ণের বিবাহ হয়েছিল, তাই বৈশাখ মাসে বিয়ে হলে কিংবা বিয়ের প্রস্তুতি করলে সে ক্ষেত্রে বিবাহিত সেই দম্পতিদের দাম্পত্য সুখ বজায় থাকে আজীবন

গীতা জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বুদ্ধ পূর্ণিমা উৎসবের ইতিহাস 2024:

ভগবান বুদ্ধ অথবা গৌতম বুদ্ধ নেপালের লুম্বিনী তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধোধন এবং মাতা ছিলেন মায়া দেবী। জন্মের পর তার নাম ছিল সিদ্ধার্থ গৌতম। তার জন্মের পর একজন সাধু তাকে দেখে ভবিষ্যৎবাণী করে বলেছিলেন যে এই শিশু পরবর্তীকালে একজন রাজচক্রবর্তী অথবা একজন সিদ্ধ সাধক হবেন।

সেইমতো তিনি সংসারের সমস্ত মায়া ছেড়ে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। বৌদ্ধ পুঁথি গুলি অনুসারে পিতা শুদ্ধোধন তার জীবনে বিলাসিতার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও সিদ্ধার্থ বস্তুগত ঐশ্বর্য যে জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আর সেই কারণে মোক্ষ লাভের জন্য তিনি সন্যাস গ্রহণ করেন।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ২৯ বছর বয়সে রাজকুমার সিদ্ধার্থ তার বিলাসবহুল প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসলে একজন বৃদ্ধ মানুষ, একজন অসুস্থ মানুষ এবং একজন মৃত মানুষ ও একজন সন্ন্যাসীকে তিনি দেখতে পান। এই দৃশ্যগুলি দেখে সিদ্ধার্থ তার রাজ জীবন ত্যাগ করে একজন সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করার সিদ্ধান্ত নেন।

যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। সিদ্ধার্থ একটি রাতে তার পরিবারকে নিঃশব্দে বিদায় জানিয়ে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি আধ্যাত্মিকতার পথে চলেন এবং খুব তাড়াতাড়ি তিনি বিহারের বুদ্ধ গয়াতে বোধি গাছের নিচে সত্য জ্ঞান অর্জন করেন।

জন্মাষ্টমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

বুদ্ধ পূর্ণিমা তে পূজার আচার ও অনুষ্ঠান: 

  • ভগবান বুদ্ধের ভক্তরা এদিন অন্যান্য পূজার মতো খুবই ভোরে ওঠে স্নান সেরে বুদ্ধদেবের জন্মবার্ষিকী পালন শুরু করে দেন।
  • এই দিনে ঘর পরিষ্কার করা হয় এবং চারিদিকে গঙ্গা নদীর পবিত্র জল ছিটিয়ে চারিদিক শুদ্ধ করা হয়।
  • ফুল এবং আম পাতা দিয়ে বাড়িটিকে সাজানো হয়।
  • সুন্দর করে বাড়ির প্রবেশপথে হলুদ, রোলি এবং গঙ্গা জল দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা হয়। যা কিনা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র চিহ্ন হিসাবে পরিচিত।
  • তার সাথে সাথে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ গুলি পাঠ করা এবং বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণকারীরা এই দিনে বৌদ্ধ গয়াতে ও গিয়ে থাকবেন।
  • যদিও তিনি বোধি গাছের নিচে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন, সেই কারণে এই দিন বোধি গাছের উপাসনাও করা হয়।
  • বিভিন্ন রঙের ফুলের মালা গাছে দেওয়া হয় এবং ভক্তরা গাছের গোড়ায় দুধ ও জল ঢালেন।

কঠোর ধ্যানমগ্নে যখন সিদ্ধান্ত অথবা বুদ্ধদেব ছিলেন, তখন তাঁর সমস্ত  শরীর একটি চর্মাবৃত কঙ্কালে পরিণত হয়েছিল। এতেও তার অভিষ্ট লক্ষ্য সিদ্ধ হচ্ছিল না। তখন তিনি মধ্যপন্থা অবলম্বন করে আবার ধ্যানরত হলেন।

সিদ্ধার্থ অভিনব সাধনা পদ্ধতি অবলম্বন করে আবার তার পুরানো স্বাস্থ্য ফিরে পান। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে চাঁদ যতই বাড়তে শুরু করলো, ততই তিনি সিদ্ধি লাভ করতে লাগলেন, আর সেদিনটা ছিল বৈশাখী পূর্ণিমার চতুর্দশ তিথি।

অন্নপূর্ণা পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য 2024: 

প্রতিটি উৎসবের যেমন তাৎপর্য থাকে, তেমনি বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য রয়েছে খুবই সুন্দর:-

  • ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন ভোরবেলা স্নান করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • এই দিনে অনেকেই অনেক কিছু দান, ধ্যান করেন। যারা দরিদ্র তাদেরকে খাওয়ানো হয় এবং তাদের বস্ত্র ও আরো অন্যান্য সরঞ্জাম দান করা হয়।
  • প্রতিবছর এই বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় বুদ্ধগয়াতে।

মোক্ষ লাভের জন্য সংসারের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে এক বস্ত্রে রাজপ্রাসাদের সমস্ত বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ত্যাগ করে তিনি সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে যান, তারপর বোধী জ্ঞান অর্জন করেন। যার কারণে তিনি সকলের মনের মধ্যে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছেন।

এছাড়া বৌদ্ধ মন্দির গুলি ছাড়াও অনেকেই বাড়িতে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন অন্যান্য দেব-দেবীদেরও পূজা-অর্চনা করে থাকেন। সংসারের সমস্ত কালিমা মুছে দিয়ে সুখ, সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ বৃদ্ধি এবং সকল কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য বুদ্ধ পূর্ণিমা অনেকেই নিষ্ঠাভরে পালন করে থাকেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top