জগন্নাথ রথযাত্রা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Jagannath Rath Yatra 2024: History and Significance

জগন্নাথ রথযাত্রা 2024 (Jagannath Rath Yatra 2024 Date Time and Significance) 2024 রথযাত্রার ইতিহাস এবং জানুন রথযাত্রা কেন পালন করা হয়? রথযাত্রার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য রথযাত্রার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব। হিন্দু ধর্মের অন্যান্য উৎসবের মতোই রথযাত্রা হলো একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই রথযাত্রা প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয় তিথিতে পালিত হয়ে থাকে।

ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় যেমন বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এই সমস্ত জায়গায় বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। তাছাড়া উড়িষ্যার পুরীর রথ সারা পৃথিবী বিখ্যাত। তবে শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই নয়, মস্কো এবং নিউইয়র্কেও রথযাত্রা পালিত হয়।

জগন্নাথ রথযাত্রা ইতিহাস ও তাৎপর্য - Jagannath Rath Yatra History and Significance
জগন্নাথ রথযাত্রা 2024 ইতিহাস ও তাৎপর্য – Jagannath Rath Yatra 2024 History and Significance

বিদেশেও সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের থাকার কারণে সেখানেও হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন রকম উৎসব, আচার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বলে জানা যায়। তবে সেখানেও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা লক্ষ্য করা যায়।

উল্টো রথযাত্রা ইতিহাস ও তাৎপর্য

“রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধুমধাম ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম। পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী।”

রথ শব্দের আভিধানিক অর্থ যুদ্ধ যান, বা চাকাযুক্ত ঘোড়ায় টানা হালকা যাত্রীবাহী গাড়ি হলেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে রথ শব্দের অর্থ কিন্তু অন্যরকম। রথ একটি কাঠের তৈরি যানবাহন যার উপরে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা বসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমন করেন।

ভগবানের এই রথযাত্রা অর্থাৎ রথে চড়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গমন করার এই বিষয়টিকে রথযাত্রা বলে মনে করা হয় অনেক দিন আগে থেকেই আর তা থেকেই রথযাত্রা নামটি চলে আসছে।।

তবে মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে যে, এই রথযাত্রা কিভাবে শুরু হয়েছিল ? তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রথ যাত্রার ইতিহাস সম্পর্কে।

রাখি পূর্ণিমা ইতিহাস ও তাৎপর্য

জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার ইতিহাস 2024: 

রথ যাত্রার এই কাহিনীর সঙ্গে জড়িত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম, আর জগন্নাথ হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি রূপ। ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুযায়ী এই রথ যাত্রার প্রচলন হয়েছিল সেই সত্য যুগে। তখন উড়িষ্যা মালব দেশ নামে পরিচিত ছিল। উড়িষ্যার রাজা ইন্দ্রদুম্ন ছিলেন পরম বিষ্ণু ভক্ত। তিনি স্বপ্নে আদেশ পেয়েছিলেন যে ভগবান বিষ্ণুর জগন্নাথ রুপে মূর্তি নির্মাণ করার এবং রথ যাত্রার বিষয়ও তিনি স্বপ্ন দেখেন।

এছাড়া লোক মুখে শোনা যায় যে, রাজা ইন্দ্রদুম্ন স্বপ্নে আদেশ পান যে, পুরীর সমুদ্র তটে ভেসে আসা একটি কাঠের খন্ড দিয়ে জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণ করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী মূর্তি নির্মাণের জন্য যখন রাজা উপযুক্ত শিল্পীর সন্ধান করছিলেন ঠিক তখনই একজন বৃদ্ধ তার সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিলেন। যে তিনিই একমাত্র এই মূর্তি তৈরি করবেন এবং এর পাশাপাশি সেই বৃদ্ধ বলেন যে, সেই মূর্তি নির্মাণ করার সময় কেউ যেন তার কাজে বাধা না দেয়।

আর সেই মতো কথা অনুসারে দরজার আড়ালে শুরু হয় সেই কাঠ দিয়ে মূর্তি নির্মাণ এর কাজ। রাজা, রানী সহ সকলে এই মূর্তি নির্মাণ কাজের ব্যাপারে খুবই কৌতুহলী হয়ে পড়েন বন্ধ দরজার বাইরে থেকে কান পেতে আওয়াজ শুনতেন।

একদিন আওয়াজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। রানী কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে রাজা কে জানাতেই রাজা ইন্দ্রদুম্ন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। দেখেন যে সেই মূর্তিটি অর্ধ সমাপ্ত আর তার পাশাপাশি সেই শিল্পী ও একেবারে উধাও। আর জানা যায় যে, এই রহস্যময় কাঠের শিল্পী ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা

কিন্তু এদিকে দেখা যায় সেই মূর্তি একেবারে অর্ধ সমাপ্ত মানে মূর্তির হাত ও পা নির্মাণ করা হয়নি। তা দেখে রাজা একেবারে ভেঙে পড়েন। কেননা তার এই কাজে বাধা প্রদান করার জন্য রাজা খুবই অনুতাপ করেন। তখন তাকে স্বপ্ন দিয়ে জগন্নাথ দেব বলেন যে, এমন ঘটনা ঘটবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।

তিনি এই রূপেই পূজিত হতে চান। এভাবেই আবির্ভাব ঘটে জগন্নাথ দেবের এবং সেই থেকেই শুরু হয় তার পুজো। রাজা ইন্দ্রদুম্ন জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ, রথযাত্রার প্রচলন করেছিলেন। সেই থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে রয়ে গিয়েছে।

কার্তিক পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রথ যাত্রার রথের বিশেষত্ব 2024: 

পুরীর রথযাত্রা আমাদের সকলের মনে বিশেষ ভাবে জায়গা করে নিয়েছে। রথযাত্রাতে যে তিনটি রথ ব্যবহার করা হয়, সেটির ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। জগন্নাথ দেবের রথের নাম হলো নান্দী ঘোষ, বলরামের রথের নাম হল তালধবজ এবং সুভদ্র রথের নাম হলো দর্পদলন। এই তিনটি রথের উচ্চতা, রঙ এবং আকৃতি সবকিছুই কিন্তু আলাদা আলাদা। সে হিসেবে কোনটি ফোন দেবতার রথ সেটা ভালোভাবেই জানা যায়।

এছাড়া জগন্নাথ দেবের রথে যে চাকা আছে সেটি ১৮ টি চাকা, বলরামের রথের চাকা ১৬ টি, জগন্নাথ এবং বলরামের বোন সুভদ্রার রথে থাকে ১২ টি চাকা। তাছাড়া বর্তমানে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা বিশ্ব বিখ্যাত এবং সারা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এটি খুবই আনন্দের অনুষ্ঠান। ভক্তদের সমাগমে সেখানে যেন তিল রাখার জায়গা থাকে না।

উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে জগন্নাথ দেবের রথ টানা হয় সেই রথের দড়ি ছোঁয়ার জন্য, একটু খানি ধরে রথ টানার জন্য অনেকেই একেবারে উৎসাহিত হয়ে থাকেন। ভক্তদের সমাগমে ছেয়ে যায় উৎসবের জায়গা। ভারতবর্ষের সকল মানুষ অপেক্ষায় থাকেন এই উৎসবের দিনটির জন্য।

গুরু পূর্ণিমা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রথযাত্রার তাৎপর্য 2024:

পৌরাণিক ঘটনা অনুসারে এটা সবাই বিশ্বাস করে যে, এই উৎসব শুরু হয়েছিল যখন ভগবান জগন্নাথের বোন সুভদ্রা পুরী অর্থাৎ উড়িষ্যা রাজ্যে অবস্থিত একটি জায়গা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভগবান জগন্নাথ এবং ভগবান বলরাম ও সুভদ্রার সাথে এই উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। সেই থেকে হিন্দু ধর্মে এই দিন অনুসারে প্রতিবছর জগন্নাথ উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

এই রথযাত্রা উৎসবে জগন্নাথ, বলরাম অথবা বলভদ্র এবং দেবী সুভদ্রা তাদের রথে চড়ে গুন্দিচা মন্দিরে যান। আর চুন্ডিচা মন্দিরে ৭ থেকে ৮ দিন অবস্থান করেন। আট দিনের মধ্যে দেবতারা অর্থাৎ ভগবান জগন্নাথ, ভগবান বলরাম এবং দেবী সুভদ্রা গুন্ডিচা মন্দির থেকে চলে যান এবং এই সময়টিকে বলা হয় বহুদা যাত্রা।

অর্থাৎ বলা যেতে পারে গুন্ডিচা মন্দির যেটা জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি হিসেবে বিখ্যাত, সেই জায়গায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। সাত দিন মাসির বাড়ি থেকে পোড়া পিঠে খেয়ে আবার বাড়ির পথে রওনা হওয়ার এই যাত্রাকে উল্টো রথ বলে জানা যায়।

বিশ্বকর্মা পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

রথযাত্রার মেলা:

রথের মেলা নাম শোনেননি এমন মানুষ খুবই কমই আছেন তাই এই রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সাত দিন ধরে মেলা উদযাপন হয়। কেননা সাত দিন পর উল্টোরথ।

সেই কারণে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, ভক্তদের সমাগম সবমিলিয়ে মেলা একেবারে জমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। ছোট বাচ্চাদের সাথে সাথে বড়দেরও এই রথের মেলা আর রথযাত্রা উৎসব আষাঢ় মাসের বৃষ্টির মধ্যে উৎসবের আমেজ দিয়ে মাতিয়ে রাখে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top