মহালয়া 2024: ইতিহাস ও কিভাবে এবং কেন পালন করা হয়? | 2024 Mahalaya in Bengali – Listen Mahalaya Online

2024 মহালয়া: মহালয়ার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং শুনুন মহালয়া অনলাইন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে। 2024 Mahalaya History and significance, Listen Mahalaya Online 2024. মহালয়ার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন মহালয়া কেন পালন করা হয়? বিধি কি? কিভাবে শুরু হয়েছিল।

কাশফুলের বনে হাওয়া লেগে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ। নীল আকাশের মাঝে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আর তো বেশি বাকি নেই পুজোর, তাইনা! মহালয়ার (Mahalaya) দিন থেকেই তো শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ, তাই মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর আনন্দটা।

একটা একটা করে দিন পার হয় পুজোর দিকে এগোনোর জন্য। মহালয়ার দিন ভোরে মহিষাসুরমর্দ্দিনীর কাহিনী সবাইকে একেবারে মুগ্ধ করে দেয়।

Mahalaya History and significance
Mahalaya 2024 History and significance

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য দেবীর আগমনী বার্তা মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয়ে যায়। এই দিন বিশেষভাবে সবাই অপেক্ষা করে থাকে মহালায়া দেখার জন্য। ৬ ই অক্টোবর মহালায়া়, সামনে পুজো পুজো ভাব জাগিয়ে তুলেছে।

ছোটবেলায় মহালয়ার দিন ভোর থেকেই রেডিওতে মহালায়া এবং একটু পরেই টিভিতে দেখা ছিল এক আলাদা আনন্দের বিষয়। তবে আজও একটি আলাদা আনন্দ বহন করে।

বাঙালি হিন্দুদের কাছে যে বিষয়টির জন্য মহালয়ার দিনটি অপরিসীম সেটা হল মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্রপাঠ শোনা। শরীরে শিহরণ জাগানোর মত এই কণ্ঠস্বর সবাইকে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য করবেই।

দুর্গা পুজার ইতিহাস ও তাৎপর্য

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী

আর তারপর থেকেই পুজো পুজো ভাব জেগে ওঠে বাঙ্গালীদের মধ্যে। তাছাড়া এটি ঐতিহ্যপূর্ণভাবে বাঙালিরা আজও পালন করে আসছেন। এককথায় দুর্গাপুজোর আভাস মেলে মহিষাসুরমর্দিনীর এই বেতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তাছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই দিনে রীতি নিয়ম মেনে দেবী দুর্গার চোখ আঁকা হয়। যাকে চক্ষুদানও বলা হয়ে থাকে।

2024 শুভ মহালয়া শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ডাউনলোড

মহালয়ার ইতিহাস 2024:

মহালয়ার (Mahalaya) নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গল্প কাহিনী শোনা যায়। যেমন ধরুন- মহাভারতের বলা আছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণ এর মৃত্যুর পর তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় সাথে। এমন খাবার দেওয়ার জন্য কর্ণ জিজ্ঞাসা করলে, তাকে বলা হয় যে সারা জীবন তিনি শুধুই স্বর্ণ দান করেছেন।

তিনি তার পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনদিনও খাদ্য প্রদান করেননি, দান হিসেবে। সেই কারণেই স্বর্গে তাকে খাদ্য হিসাবে স্বর্ণ প্রদান করা হয়েছে। তারপর এই বিষয়ে কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তার পিতৃগন এর সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। সেই কারণেই তিনি তাদের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও পানীয় প্রদান করেননি।

বিজয়া দশমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য

আর সেই কারণে ইন্দ্রের নির্দেশে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে কর্ণ ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোক এর উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করেন। তারপর আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে শেষবারের মতো জল প্রদান করে তিনি স্বর্গে ফিরে যান।

আর এই দিনটিকে হিন্দু মতে পিতৃপক্ষ (Pratipaksha) বলা হয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পিতৃপক্ষের শেষ দিন হল মহালায়া (Mahalaya)। তবে এই কাহিনীর কোন কোন জায়গায় ইন্দ্রের বদলে যমরাজ কে দেখা যায়।

তাছাড়া হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জীবিত কোন ব্যক্তির  পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃ লোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করে। আর এই লোকের শাসক হলেন মৃত্যু দেবতা যমরাজ। তিনি সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে পিতৃলোক এ নিয়ে যান।

তাছাড়া দেবালয় এ অসুরদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়েছিল। মহিষাসুরমর্দিনী কিভাবে  মহিষাসুর বধ করেছিলেন সেই ঘটনা এদিন স্বচক্ষে দেখার আনন্দটাই আলাদা, কি বলেন?

নবরাত্রির ইতিহাস ও তাৎপর্য

মহালয়ার তাৎপর্য 2024:

সবদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, মহালয়া অমাবস্যা (Pratipaksha Amavasya) হল তর্পনের দিন বা পিতৃপক্ষের শেষ দিন। এই দিনে অনেকেই তাদের পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে অথবা তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গঙ্গায় অথবা অন্য নদীতে তর্পণ করেন। তাছাড়া পিন্ডদান অথবা শ্রাদ্ধের মত আচার অনুষ্ঠান করা হয়।

পূর্বপুরুষদের তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল দান করা হয়। এবং তাদের যাত্রাপথ কে আলোকিত করার জন্য উল্কা দান করা হয়। সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষদের জল দান করাকে বলা হয় তর্পণ। মহালয়া তর্পণের মধ্যে দিয়ে অবসান হয় পিতৃপক্ষের। তার সামনেই পরে দুর্গাপুজো, তাই এই মহালয়ার দিন থেকেই দেবীপক্ষ শুরু হয়ে যায়।

মহালায়া পক্ষের ১৫ টি তিথি-

১) প্রতিপদ, ২) দ্বিতীয়া, ৩) তৃতীয়া, ৪) চতুর্থী, ৫) পঞ্চমী ৬) ষষ্ঠী ৭) সপ্তমী ৮) অষ্টমী ৯) নবমী ১০) দশমী ১১) একাদশী ১২) দ্বাদশী ১৩) ত্রয়োদশী ১৪) চতুর্দশী ও ১৫) আমাবস্যা। অন্যদিকে হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী যে ব্যক্তি  তর্পণে আগ্রহী হন তাকে তার পূর্বপুরুষদের মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।

বেদের বিভাজন অনুযায়ী, চতুরাশ্রমের কাল থেকে নির্ধারিত হয়েছে সমস্ত হিন্দু মানুষের তর্পণ সংক্রান্ত রীতিনীতি। যেমন ধরুন সামবেদী তর্পণ, যজুর্বেদি তর্পণ, ঋকবেদি তর্পণ।

পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধার সাথে মনে করার এবং তাদের স্বর্গলোকে যাওয়ার জন্য পরিবারের জীবিত ব্যাক্তিরা তর্পণ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, জল ও পিণ্ড প্রদান করে থাকেন। তবে শুধুমাত্র মহালয়ার দিন নয় মহালয়ার ১৪ দিন আগে থেকে এই রীতি চালু হয়ে যায় মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের শেষ দিন, তাই মহালয়ার দিন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আপনজনের আত্মা ও বিশ্বজনের আত্মার মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। যেন অখিল বিশ্বই তার নিজের পরিবার। আসলে তর্পণ হলো একটি দার্শনিক ভাবনার প্রতীকী রূপ। মনে করা হয় যে তিথি নক্ষত্র মেনে পূর্বপুরুষদের জল ও পিন্ডদানের মাধ্যমে তাদেরকে তুষ্ট করা যায়। আর সে গুলি করতে হয় পরিবারের মানুষজনদের, এতে তারা পিতৃলোক থেকে স্বর্গে যাওয়ার পথে কোনো বাধা না পেতে পারে।

এই রীতিনীতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে সবাই এটাকে শ্রদ্ধার সাথে তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের মনে করার পাশাপাশি তর্পণ এর মাধ্যমে তাদের ভালো থাকার ব্যবস্থাও করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top