কমলা একটি সুস্বাদু রাসালো ফল। এর স্বাদ টক মিষ্টি হয়। ইংরেজী নাম Mandarin আর বৈজ্ঞানিক নাম Citrus Recticukate. এটি সাধারণত বিদেশি ফল হলেও বর্তমানে ভারতে চাষ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। কমলা যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকরও বটে।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন,ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। এ ফল থেকে জুস, জ্যাম, জেলি তৈরি করা যায় আবার সালাদ ও ডেজার্ট জাতীয়খাবারেও ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে কমলা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কমলা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজেনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন। আসুন আজ আমরা এ সুস্বাদু ফলটির চাষাবাদ সম্পর্কে জেনে নি
বংশ বিস্তারঃ
কমলার বীজ থেকে যদি জাইগোটিক পদ্ধতিতে চারা করা হয় তবে, মাতৃগাছ ভালো না হলে, চারা দুর্বল হয় ফলন ভালো আসে না।
তাই সবচাইতে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে কলম পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ২ বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে।
জমি তৈরিঃ
ভালো রোদ লাগে এবং জল জমে না এমন জমি বাছাই করতে হবে। জমিতে চারা রোপন করার আগে জৈব সার কিছু পটাশ, ডিএপি ও বোরন দিয়ে গর্ত তৈরি করে সার পঁচিয়ে নিতে হবে।
আর পাহাড়ি জমি হলে কাস্তে বা কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে নিতে হবে। তবে অনেক সফল কৃষকের মতে, কলম করা চারাতে কোন সার না দিয়েও রোপন করা যায়। পরবর্তীতে জৈব সার দিলেও ফলন ভালো হয়।
চারা রোপন পদ্ধতিঃ
কলম করা চারা রোপনের ২ বছরের মাথায় ফল আসে ।এ পদ্ধতিটি সবচাইতে জনপ্রিয় পদ্ধতি। প্রথম বার গাছ প্রতি ৩০-৫০ টা ফল আসলেও, বছরে বছরে ফলের পরিমান বেড়ে যায়।
প্রয়োজন মতো জল সেচ দিতে হবে । বাগানে প্রতিটি চারা ১২ ফিট বাই ১২ ফিট দুরত্বে রোপন করতে হবে।
সঠিক পরিচর্যাঃ
চারা রোপোনের পর যখন গাছ এ নতুন পাতা আসবে তখন গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। টিএসপি, পটাশ, বোরন, জিংক গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম করে, গাছের ৫-৬ ইঞ্চি দুরত্বে দিয়ে দিতে হবে ।
এ সার দেয়ার পরিমান প্রতি মাসে ১০ গ্রাম করে বাড়বে, এভাবে ৬ মাস পর্যন্ত সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোঁড়া থেকে যদি নতুন কুঁড়ি বের হয় তবে তা কেটে ফেলে দিতে হবে এবং ডাল ছেটে দিয়ে ঝোপ তৈরি করতে হবে।
তবে ডাল ছাঁটার পর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট দিতে হবে। এজন্য আলাদা পাত্রে ৭০ গ্রাম তুঁতে ও ১৪০ গ্রাম চুন ১ লিটার জলে মিশিয়ে এ পেস্ট তৈরি করতে হয়।
গাছের নিচের দিক পরিষ্কার রাখতে হবে আর মরা ডালপালা কেটে দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে আর ঝোপালো গাছ তৈরি করতে হবে ডাল কেটে, তাহলে গাছে ফল আসবে বেশি।
রোগ বালাই ও প্রতিকারঃ
এ গাছে তেমন কোন সার লাগেনা, তবে মাকড়সা জাতীয় একধরনের পোকার আক্রমনে ফলের ভিতরে হূল ঢুকিয়ে ডিম পাড়ে। এতে করে ফল নষ্ট হয়ে যায়। এ পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও পাতা ছিদ্রকারী পোকা ও বাকল ছিদ্রকারী পোকা বিনাশ করতে, ১০ মিলি. মেটাসিস্টক্স ১০ লিটার জলে ৪ চা চামচ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আর এক ধরনের পোকা আছে গান্ধী পোকা, যা ফলের রস চুষে খায়। এ পোকা রোধে ম্যালাথিয়ন ০.০৪% হারে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও গ্রীনিং রোগে আক্রান্ত হলে, গাছের পাতা দুর্বল হয়ে কুঁকড়ে যায়।
এ রোগ সাইলিড নামক পোকা থেকে সংক্রমিত হয়, নগস ১০০ ইসি ১০ লিটার জলে ৪ চা চামচ জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
সেচ পদ্ধতিঃ
কমলা গাছে শুষ্ক মৌসুমে জল শুকিয়ে গেলে জল সেচ দিতে হবে এবং গাছ যেন পরিপুর্ণ রোদ পায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আবার বর্ষার দিনে যেন জল না জমে তাও খেয়াল রাখতে হবে।
ফল সংগ্রহঃ
কমলা গাছে কমলা ধরার প্রায় ৯ মাস পর্যন্ত ফল থাকে, আর এটি পাকে অক্টোবরের দিকে, কিন্তু ফলে রঙ আসে ডিসেম্বর মাসের দিকে। আর তখন বাজারজাত করলে ভালো হয়।
সাধারণত টক জাতীয় গাছ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলের সংখ্যাও বাড়ে। যদি পরিপুর্ণ পরিচর্যা করা যায় তবে একটি গাছ থকে মৌসুমে ৭০-৮০ কেজি কমলা উৎপাদন সম্ভব।
ফলনঃ
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে প্রায় ৭০-৮০ কেজি কমলা পাওয়া যায়। গাছ প্রতি প্রায় ৭,০০০ টাকা থেকে ৮,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় থাকে। আর এ গাছের সাথে কৃষক অন্য মৌসুমী ফসল যেমন শাক, ডাল ইত্যাদি আবাদ করে দুভাবেই লাভবান হতে পারবে।
একটি কমলা গাছ প্রায় ৫০-৬০ বছর বাঁচে। আর এ ফল চাষে তেমন কোন সারের প্রয়োজনও পড়েনা ।
তাই আমাদের দেশে কমলা চাষ একটি বানিজ্যিক ফসল। এ দেশের আবহাওয়া ও মাটি কমলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী তাই এর বৈদেশিক বানিজ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর কমলা চাষের সাথে অন্য ফসল চাষ করলে এ ফসলের কোন ক্ষতি হয়না তাই কৃষক দুভাবেই লাভবান হয়ে থাকে।