“পেঁয়াজ” বাঙালীর রান্নার ঐতিহ্যে একটি প্রয়োজনীয় মসলার নাম। যদিও আমরা একে মসলা হিসেবেই চিনি, এটি সবজি হিসেবেও বেশ সমাদৃত। পেঁয়াজের ঔষধি গুনও বিদ্যমান।
এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন “সি”। এছাড়া পেঁয়াজ খেলে শরীরে উঞ্চতা বাড়ে, পেঁয়াজ রক্ত পরিশোধন করে, এ্যাজমা ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে, কাঁচা পেঁয়াজের রস মাথায় দিলে চুল পড়া রোধ হয়।
আজ আমরা আপনাদের সাথে পেঁয়াজ চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই পেঁয়াজ চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। আসুন আমরা জেনে নি, হরেক গুনসম্পন্ন এ সবজিটির চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে
জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন
এ ফসল চাষে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু প্রয়োজন হয় ।উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি নির্বাচন করতে হবে। তবে সাধারণ মাটিতেও এর চাষ করা যায়।
বীজ ও জাত নির্বাচন
বেশি ফলন হয়, এমন জাতের মধ্যে শীতকালের লাল জাত-হচ্ছে পুষা রেড, উদয়পুর ১০১ ও ১০৩, পুষা মাধবী। আর সাদা জাতের মধ্যে হচ্ছে পুষা ব্রাইট, উদয়পুর ১০৩ ইত্যাদি।
শীতের কাছাকাছি অক্টোবর নভেম্বরের দিকে বীজতলা তৈরি করতে হয়।
জমি তৈরি
প্রথমে চাষ ২/৩ বার চাষ দিয়ে, মাটিতে গোবর ও জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে। তার ৫/৭ দিন পর আবার জমি ৩/৪ বার চাষ দিয়ে , মাটি মই দিয়ে ভালভাবে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বিঘা প্রতি ইউরিয়া– ৩৫ কেজি, টিএসপিও – ২৫ কেজি, এমপিও – ২০ কেজি, জিংক – ১ কেজি, বোরন – ১ কেজি, দানাদার বীজ – ১ কেজি
সব সার মিশিয়ে ভালো করে জমি প্রস্তুত করতে হবে। তারপর বীজতলা তৈরি করে বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে। একটি আদর্শ বীজতলার প্রস্থ ১ মিটার আর দৈর্ঘ্য ৩ মিটার হবে। জার্মিনেশন পদ্ধতির মাধ্যমে অথবা আলাদা বীজতলা তৈরী করেও বীজ উৎপাদন করা যায়।
প্রথমে বীজগুলো রোদে ১ ঘন্টা শুকানোর পর আগামি ১২ ঘন্টা বা ১ রাত জলে ভিজিয়ে তারপর বীজ ছিটাতে হবে। এখানে উল্যেখযোগ্য বিষয় হল বীজে যদি ছাই বা বালু মিশিয়ে নিলে চারার সংখ্যা বেড়ে যাবে তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ সুষম ভাবে যেন ছিটানো হয়।
এরপর সাইডে যে মাটি থাকে সে-মাটি গুলোকে মিহী করে বীজের উপর ছড়িয়ে দিব।পেঁয়াজের বীজ গজানোর পর তাতে ছাউনির দিতে হবে বিচুলি দিয়ে। সেটি অর্ধচন্দ্রাকার বাঁশের বেড়া দিয়ে।
দিনে যেন রোদ না লাগে সেজন্য কলাপাতা বা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে । সকাল-সন্ধ্যা বাদে বাকি সময় বীজ ঢাকা থাকবে। তবে বীজ বড় হওয়ার সাথে সাথে এ ঢাকনার সময় কমে আসবে।
মানে রোদ এর সময় বেড়ে যাবে। চারা ১-২ ইঞ্চি পরিমান হলে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে, এবং জল সেচ ও ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
যদি কোন ছত্রাক থাকে সেক্ষেত্রে সেকটীন বা থান্ডার্স প্রতি ১ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। চারা ৩-৪ ইঞ্চি হওয়ার পর ক্ষেতে বোনা যায়।
চারা রোপন ও পরিচর্যা
পেঁয়াজের চাষ দু-ভাবেই করা যায় ১. বীজের মাধ্যমে ,২. কন্দ রোপন করে। বীজ দিয়ে হলে- জার্মিনেশন করে, আর কন্দ হলে পেঁয়াজের উপরি অংশ কেটে শোধন করে কন্দ পাততে হবে ।
শোধন করতে- প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম/৩ গ্রাম ম্যানকোজেব, ৩ গ্রাম থাইরাম মিশিয়ে জলে শোধন করে নিতে হবে । তারপর কন্দের উপরি ভাগ (কন্দমূল) বসাতে হবে এবং জল সেচ দিতে হবে।
৩-৪ সপ্তাহ পরে জমিতে জো আসার পর ১০:২৬:২৬ , এমিস্টার এরোভান ১ লিটার জলে ২৫ মিলিগ্রাম মিশিয়ে স্প্র করতে হবে।
তারপর জমিতে আগাছা থাকুক বা না থাকুক জমি নিড়ীয়ে আবার সেচ দিতে হবে। এ সময়ে আবার চাপান দেয়া যেতে পারে অল্প কিছু সুফলা , পটাস, এমোনিয়া দিয়ে। ৪০-৪৫ দিন পর পেঁয়াজ রেডি হয়ে যাবে।
তারপর যদি পাতা না মরে আবার জল সেচ দেয়ার ১০-১২ দিন পর পেঁয়াজ তুলে ফেলতে হবে। অগ্রহায়নে রোপনের পর পৌষ-ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে পেঁয়াজ তুলে জমিতে শুকিতে বাড়িতে এনে আবার রোদে ৪-৫ দিন শুকিয়ে বাশেঁর ভাড়া মাচায় কিছুদিন রেখে তারপর বাঁশে ঝুলেয়ে রাখতে হবে ।
আর এভাবে রাখা গেলে ৪-৫ মাস পেঁয়াজ বাড়িতেই সংরক্ষন করা যায়।
পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন
এক ধরনের কালো পোকার আক্রমন হয়ে থাকে যা গাছের গোড়ায় ফুটো করে ভেতরে ঢুকে কন্দ খেয়ে ফেলে, এছাড়াও মরিচা পড়া রোগ আছে, গাছের আগা শুকিয়ে যাওয়া রোগ আছে, জাত পোকার আক্রমন আছে, এ ধরনের পোকার আক্রমন হলে upl কোম্পানির Lancer Gold(Acephate500+lmidacloprid18) অথবা composition 145%se স্প্রে করা যেতে পারে।
গাছের গোড়া পচা রোগের জন্য thunders ১ লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভাল ফলন আসবে। পশ্চিমবঙ্গে যে সকল মসলা চাষ হয় তার মধ্যে পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি চাষ হয় এবং এটি অনেক্ লাভজনক একটি ফসলও বটে । এ রাজ্যে রবি মৌসুমেই এর চাষ হয়ে থাকে।
কৃষি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলো দেখুন। আমাদের লেখা গুলো ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিব।