ভুট্টা একটি অতি পরিচিত খাদ্য শস্য। ধান ও গমের পরেই এর অবস্থান। ভুট্টার দানা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এছাড়া ভুট্টার গাছ ও পাতা ও পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ভুট্টার দানা থেকে তৈরি পপকর্ণ এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভুট্টা থেকে তৈরি আটা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
এতে করে আপনারা সহজেই ভুট্টা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন ভুট্টা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
মাটিঃ
ভুট্টা চাষে জমি উচু হতে হবে। জমিতে যেন জল না জমে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
সাধারনত দোআঁশ, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ মাটিতে ভুট্টা চাষ করা যায়। রবি মৌসুমে ভুট্টা চাষ করলে ফলন ভালো হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ
আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ন মাসের মাঝামাঝি পর্যায় এবং ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে সময় ভুট্টা চাষ করার উপযুক্ত সময়।
বীজের হারঃ
জাত অনুযায়ী বীজের হার কম বেশি হয়ে থাকে। সাধারনত প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫-৩০ কেজি হারে বীজ বপন করা উচিত।
জমি তৈরিঃ
ভুট্টার বীজ বপন করার আগে জমি ভালো করে তৈরি করে নিতে হবে। জমিতে ভালো ভাবে চাষ ও মই দিতে হবে।
জমির ধরন বুঝে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে ও মাটি সমান করে নিতে হবে। তারপর জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ
বীজ সারি করে বপন করা যায়। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেমি। এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ২৫ সেমি।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে সাধারনত গোবর দিতে হবে ৪-৬ টন, ইউরিয়া দিতে হবে ১৭২-৩১২ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১৬৮-২১৬ কেজি, এমপি দিতে হবে ৯৬-১৪৪ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ১৪৪-১৬৮ কেজি।
এছাড়া জমিতে জিংক সালফেট ও বোরিক এসিড প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
জমি তৈরি করে শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় ইউরিয়া সারের তিন ভাগের এক ভাগ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি সব সার জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
বাকি টুকু ইউরিয়া সার দুই বারে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং বাকি কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর ।
প্রয়োজনে জমিতে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জাত অনুযায়ী ভুট্টার জমিতে ৩-৪ বার সেচ প্রদান করতে হয়।
প্রথম বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ১৫-২০ দিন এর মধ্যে।
দ্বিতীয় বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে।
তৃতীয় সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৬০-৭০ দিনের মধ্যে এবং
চতুর্থ সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার ৮৫-৯৫ দিনের মধ্যে। তবে ভুট্টা গাছে যখন ফুল আসবে বা ভুট্টার দানা গজাবে তখন যেন জমিতে জলাবদ্ধতা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জমিতে কোন ভাবেই জল জমে থাকা যাবে না। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
আগাছা দমনঃ
জমি যেন আগাছা মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জমিতে আগাছা জমতে দেয়া যাবে না।
চারা গজানোর পর জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারা গাছ বেশি ঘন হয়ে গেলে গাছ পাতলা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
চারার বয়স এক মাস হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিতে কোন আগাছা জমতে দেয়া যাবে না।
অন্য পরিচর্যাঃ
বীজ লাগানোর পর জমিতে যেন পাখি না বসে । প্রয়োজনে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
গাছে রোগ ও পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ভুট্টা গাছে কাটুই পোকা, লেদা পোকা, জাব পোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি পোকার আক্রমন হয়ে থাকে।
গাছ যখন ছোট থাকে তখন কাটুই পোকা বেশি আক্রমন করে থাকে। কাটুই পোকার আক্রমন সাধারনত রাতের বেলা বেশি হয়ে থাকে।
কাটুই পোকা গাছের গোড়া কেটে ফেলে । পোকা আক্রমন করল কিনা তা দেখার জন্য মাটি খুড়ে দেখতে হবে। আক্রমন বেশি হলে জমিতে প্রচুর পরিমানে সেচ দিতে হবে যেন জল ভেসে থাকে।
তখন পোকা উপরে উঠে আসলে রোদের তাপে পোকা মারা যায়। এছাড়া ও জমিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় বালাই নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
কীটনাশক স্প্রে করার পর সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে এবং ৭-৮ দিন জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করা যাবে না।
ফসল সংগ্রহঃ
ভুট্টার মোচা খড়ের রং ধারন করলে এবং পাতা কিছুটা হলুদ রং ধারন করলে ভুট্টার দানা সংগ্রহ করার উপযোগী হয়।
মোচা যখন ৭৫-৮০ ভাগ পরিপক্ক হয় তখন ভুট্টা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে ও ভালো জাত হয়ে থাকলে এক একর জমি থেকে ১০০-১১০ মন ভুট্টা পাওয়া যেতে পারে।