অনন্ত চতুর্দশী 2023 (Anant Chaturdashi 2023 Date Time and Significance) 2023 অনন্ত চতুর্দশী ইতিহাস এবং জানুন অনন্ত চতুর্দশী কেন পালন করা হয়? অনন্ত চতুর্দশী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য অনন্ত চতুর্দশী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রতি মুহূর্ত, প্রতিটি তিথি এক একটি উৎসব বলা যায়। আর সেই জন্যই বিভিন্ন রকমের ব্রত পালন করার মধ্য দিয়ে জীবনের সুখ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখা যায়। পূজা পার্বন মানুষের মনে শান্তি প্রদান করে। তার সাথে সাথে মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য প্রার্থনা করা যায় ঈশ্বরের কাছে।
এমনি সব ব্রত গুলির মধ্যে অনন্ত চতুর্দশী হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রত। ভাদ্রপদ শুক্ল পক্ষে চতুর্দশী তিথিকে অনন্ত চতুর্দশী বলা হয়। এই দিনটি বিষ্ণুর নামে উৎসর্গ করা হয়। এই দিন বিষ্ণুর অনন্ত রূপের পূজা করা হয়ে থাকে।
শাস্ত্র মতে এই ব্রত পালন করলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়। এমনকি ১৪ বছর নিয়মিত যদি এই অনন্ত চতুর্দশী ব্রত পালন করা যায়, তাহলে ব্যক্তির বিষ্ণুলোক লাভ করাও অসম্ভব কিছু নয়।
অনন্ত চতুর্দশীর ইতিহাস 2023:
কাহিনী অনুসারে শোনা যায় যে, সর্বপ্রথম পাণ্ডবরা এই ব্রত পালন করেছিলেন মহাভারতের যুদ্ধের আগে। পাশা খেলায় তাদের সম্পূর্ণ ধন-সম্পত্তির নাশ হওয়ার উপক্রম হতো।
তখন তারা কৃষ্ণের কাছে এই এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় জানতে চাইলেন। তখন কৃষ্ণ তাদেরকে জানান যে, পান্ডবদের পাশা খেলার কারণে লক্ষ্মী রুষ্ট হয়েছেন, তাই অনন্ত চতুর্দশীর দিন বিষ্ণুর পূজা করার পরামর্শ দেন তিনি।
2023 অনন্ত চতুর্দশীর শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
এই ব্রত পালন করলে লক্ষ্মী প্রসন্ন হন এবং সংসারের সমৃদ্ধি ও ধন সম্পদ বৃদ্ধি বজায় থাকে। আর সেই মতো পাণ্ডবরা অনন্ত চতুর্দশীর এই ব্রত প্রথমবার পালন করেছিলেন। সেই থেকে আজও মর্ত্যে অনন্ত চতুর্দশীর ব্রত পালন করে থাকেন অনেকেই।
অনন্ত চতুর্দশী ব্রত পূজা করার নিয়ম:
- শাস্ত্র মতে জানা যায় যে, অনন্ত চতুর্দশীর দিন খুবই সকালের স্নান করে, শুদ্ধ বস্ত্র ধারণ করে পূজাতে বসতে হয়।
- তবে এক্ষেত্রে কোনো বেদী বা জলচকির উপর ঘর স্থাপন করে তার উপর বিষ্ণুর ছবি রাখুন।
- এরপর সুতির সুতো, হলুদ, জাফরান, আবির দিয়ে অনন্ত সূত্র তৈরি করুন।
- এরপর সেই সুতোতে ১৪ টি গিট বাঁধুন, বিষ্ণুর সামনে এই সুতো রেখে পূজা করুন।
অনন্ত চতুর্দশীর দিন ১০ দিনের উৎসব শেষে গণেশ চতুর্থীর পর গণেশের বিসর্জন করা হয়। অনন্ত চতুর্দশীর দিনে বিষ্ণুর অনন্ত রূপের পূজা করা হয় বলে, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এদিন উপবাস করলে সমস্ত বাধা বিপত্তি দূর হয়ে যায়।
বিষ্ণু “অনন্ত” নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন যেভাবে:
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে অথবা পুরান অনুযায়ী, একবার বিষ্ণুর কাছে তার বিরাট স্বরূপ দর্শনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন দেবর্ষি নারদ। দেব ঋষির এই ইচ্ছা পূরণ করে তাকে বিরাট রূপ দর্শন দেন শ্রী হরি অর্থাৎ বিষ্ণু।
এরপর শ্রী সচ্ছিদানন্দ সত্যনারায়ণের অনন্ত স্বরূপ এর জ্ঞান লাভ করেন নারদ। এই দিনটি ছিল ভাদ্রপদ মাসে চতুর্দশী অর্থাৎ ভাদ্র মাসের চতুর্দশী তিথি। তারপর থেকে এই দিনটি অনন্ত চতুর্দশী হিসেবে পরিচিত এবং এই দিনে অনন্ত চতুর্দশী ব্রত পালন করা হয়ে থাকে।
অনন্ত চতুর্দশী তে অনন্ত অথবা বিষ্ণু পূজার কারণ:
কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, সৃষ্টির সূচনায় চৌদ্দ লোকের রচনা করেছিলেন বিষ্ণু, এর মধ্যে ছিল:- তল, অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, রসাতল, পাতাল, ভূব, স্ব, জন, তপ, সত্য, মহ। এই সমস্ত লোকের রচনা করার পর এদের সংরক্ষণ এবং পালন করার জন্য ১৪ টি রূপে প্রকট হয়েছিলেন নারায়ন। এই সময় অনন্ত প্রতিত হন।
অনন্তকে এই ১৪ লোকের প্রতীক বলে মনে করা হয়। এই অনন্ত চতুর্দশীর দিন বিষ্ণুর যে স্বরূপ গুলোর পূজা করা হয় সেগুলি হল:- অনন্ত, পদ্মনাভ, ঋষিকেশ, মাধব, শ্রীধর, বৈকুণ্ঠ, ত্রিবিক্রম, বামন, মধুসূদন, নারায়ণ, কেশব, দামোদর ও গোবিন্দ।
সংকট, বিপত্তি থেকে রক্ষা পেতে অনন্ত সূত্র:
অনন্ত চতুর্দশীর পূজার পর পুরুষরা তাদের ডান হাতে এবং মহিলারা তাদের বাঁ হাতে অনন্ত সুতো বাঁধবেন। এর প্রভাবে অনন্তের আশীর্বাদ লাভ করা যায় এবং ব্যক্তির জীবনের সমস্ত সংকট দূর হয়ে যায়। এর পাশাপাশি সেই ব্যক্তিটি সমস্ত রকম পাপ থেকে মুক্ত হতে পারেন।
অনন্ত চতুর্দশীর প্রচলিত ব্রতকথা:
অনন্ত চতুর্দশীর প্রচলিত ব্রতকথা হিসাবে যে কাহিনী আমরা জানতে পারি সেটা হল, একসময় কৌন্ডিন্য মুনি নিজের স্ত্রীর বাঁ হাতে বাঁধা অনন্ত সূত্রকে বশীকরণের সুতো ভেবে টেনে ছিড়ে ফেলে দেন। এখানেই না থেমে সেই সুতোয় তিনি আগুনও পর্যন্ত লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে বিষ্ণু খুবই রেগে যান এবং কৌন্ডিন্য মুনির সমস্ত সম্পত্তি নষ্ট করে দেন।
সবকিছু জানার পর নিজের অপরাধের প্রায়শ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই মুনি। অনন্ত ভগবানের কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য তিনি জঙ্গলে যান। পথে যার সাথে দেখা হতো তিনি তার কাছ থেকেই অনন্ত ভগবানের ঠিকানা জানতে চাইতেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোন তথ্য তিনি পাননি।
এমন এক ক্ষেত্রে তিনি হতাশ হয়ে প্রাণ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন একজন ব্রাহ্মণ এসে তাকে আত্মহত্যা করা থেকে বাঁচিয়েছিলেন। এরপর ঋষি কৌন্ডিন্য কে একটি গুহায় নিয়ে গিয়ে চতুর্ভুজ অনন্ত দেব এর দর্শন করেছিলেন সেই ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণ ওই মুনিকে জানান যে, অনন্ত সুত্রের তিরস্কার এর কারণে তার এই দশা হয়েছে। এই পাপের প্রায়শ্চিত করার জন্য ১৪ বছরের নিরন্তর ও অনন্ত উপবাস পালনের কথা বলেন সেই ব্রাহ্মণ। কৌন্ডিন্য মুনি ১৪ বছর পর্যন্ত নিয়ম মেনে এই অনন্ত ব্রত পালন করেছিলেন, এরপর তার জীবনে আনন্দের আগমন ঘটেছিল।
এই দিন শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভরে বিষ্ণুর পূজা করা খুবই ভালো। পূজোয় শেষ নাগের উপর বিরাজমান বিষ্ণুর ছবি রাখা উচিত। শেষ নাগ বিষ্ণুর অতি প্রিয় এবং শেষ নাগের অপর নাম ছিল অনন্ত নাগ।
১৪ টি গিঁট দেওয়া সুতোয় পূজা করুন, এটি বিষ্ণু সৃষ্ট চোদ্দ লোকের প্রতিক। বিষ্ণু সহস্র নাম জপ করুন, অনন্ত চতুর্দশী দিনে বিষ্ণু সহস্ত্র নাম জপ করা খুবই ভালো, এর ফলে নারায়ণ প্রসন্ন হয়ে থাকেন।
এইভাবে যদি আপনি অনন্ত চতুর্দশীর ব্রত পালন করে থাকেন, উপবাস করার মধ্যে দিয়ে, তাহলে সংসারের সুখ শান্তি বজায় তো থাকবেই, তার পাশাপাশি সমস্ত দিক থেকে আপনি বিপদমুক্ত থাকতে পারবেন।
তাছাড়া সংসারে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি হবে বিপুল মাত্রায়। যা আপনার সমস্ত দুঃখ-কষ্টকে ঘুঁচিয়ে দেবে। তাই নিয়ম মেনে বিষ্ণুর পূজা করুন এবং অনন্ত চতুর্দশীর ব্রত পালন করতে একদমই ভুলবেন না যেন।