বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা কিভাবে শিশুর কাস্টডি পাবেন? বাবার জন্য শিশুর কাস্টডি আইন কি? জেনে নিন ভারতে বাবার জন্য শিশুর কাস্টডি পাওয়ার আইন নিয়ন ও প্রক্রিয়া (Legal Process for Father to Get Child Custody in Bengali)
বিচ্ছেদ সবসময়েই কষ্টকর। একটি পরিবার যখন ভেঙে যায় তখন স্বামী, স্ত্রী যতটা কষ্ট ভোগ করে তারচেয়ে বেশী কষ্ট হয় সেই দম্পতির সন্তানরা। কারণ তাদেরকে যেকোন একজনের কাস্টডিতে দেওয়া হয়।
বিবাহিত দম্পতির বিচ্ছেদ যখন হয়ে যায় তখন সবচ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় যে, সন্তান কার কাছে থাকবে? এই প্রশ্নে আইন বেশীরভাগ সময় মায়েদের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু সবসময় প্রেক্ষাপট সমান হয়না।
দম্পতিভেদে কখন শিশু তার মায়ের কাছে ভাল থাকবে নাকি তার বাবার কাছে ভাল থাকবে তা নিশ্চিত করে আগে থেকেই বলা যায়না। এজন্য আদালতে যখন সন্তানের কাস্টডি চেয়ে মামলা করা হয় তখন আদালত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে সন্তানের কাস্টডি দিয়ে থাকেন।
তবে পিতার জন্য সন্তানের কাস্টডি পাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য বিষয়। আর এ বিষয়ের প্রক্রিয়া এবং খুটিনাটি আমরা আজ আমাদের পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের কাছে তুলে ধরব। আশা করি পিতা কিভাবে সন্তানের কাস্টডি পাবেন তা এই পোস্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন। চলুন দেরী না করে মূল বিষয়ের আলোচনায় যাওয়া যাক।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয় বিবাহ কবে ও কীভাবে করা যেতে পারে?
পিতার পক্ষে সন্তানের কাস্টডি পাওয়া অসম্ভব নয়
পিতাদের জন্য, বিবাহবিচ্ছেদের পরে সন্তানদের হেফাজত পাওয়া অবশ্যই একটি জটিল প্রক্রিয়া। আইন এই কাস্টডি পাওয়ার ব্যাপারে মায়েদের পক্ষে বেশিরভাগ সময় রায় দিয়ে থাকে।
যেহেতু বেশিরভাগ বিচ্ছেদ স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে হয়ে থাকে তাই স সন্তানরা পিতার কাছে নিরাপদ কিনা এ ব্যাপারে আদালত আশঙ্কা প্রকাশ করে থাকে। তবুও, যে মামলাগুলিতে পূর্বে পিতাদের সন্তানের কাস্টডি বা হেফাজতের অধিকার প্রদানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা পিতাদের ক্ষেত্রে আশার কারণ হতে পারে।
পিতার পক্ষে আইনজীবী যদি সঠিক প্রমাণ ও কারণ উপস্থাপন করতে পারে যে, সন্তানের সাথে পিতার সম্পর্ক ভাল এবং সন্তান পিতার কাছেই বেশী ভাল থাকবে তাহলে পিতাই সন্তানের কাস্টডি লাভ করবেন।
সন্তানের কাস্টডি যদি পিতা পেতে চান, তাহলে প্রথমেই যে কাজটি করা উচিত তা হল একজন স্বনামধন্য অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা। কোন প্রক্রিয়া এবং যুক্তি প্রদর্শনে তিনি আদালতের কাছ থেকে সন্তানের কাস্টডি পেতে পারবেন তা আইনজীবীই সঠিকভাবে বলতে পারবেন।
বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে সন্তানের কাস্টডি সংক্রান্ত গার্ডিয়ানস এবং ওয়ার্ডস অ্যাক্ট, ১৮৯০ (১), এই আইনের অধীনে জাতি-ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিচ্ছেদের পর সন্তানের কাস্টডি কে পাবেন এই বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে আদালত সন্তানের কাস্টডি বা অভিভাবকত্ব মা নাকি বানা কাকে প্রদান করা হবে তা নির্ধারণ করেন।
কাস্টোডির শ্রেণীবিভাগ
কাস্টডি তিন ধরনের হতে পারে। আদালত মূলত সন্তানের স্বার্থ, নিরাপত্তা, ভবিষ্যত, সবকিছু মিলিয়েই কাস্টডি কাকে দেয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কারণ সব পরিবারের বাবা-মা একরকম নন। তাই সব সন্তানের বেলায় কাস্টডির ধরণও এক হবেনা। মোট তিন ধরনের কাস্টডি বা অভিভাবকত্ব রয়েছে।
একপক্ষের কাস্টডি- একজন পিতা বা মাতা যদি আপত্তিকর বা অযোগ্য প্রমাণিত হয়, তবে সেইব্যক্তির সাথে থাকা সন্তানের পক্ষে ভাল হবে না বলে ধারণা করা হয়। সুতরাং, মা বা বাবা যদি একজন সন্তানের কাস্টডির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হন, তাহলে অন্যজনকে সন্তানের কাস্টডি প্রদান করা হয়।
এক্ষেত্রে সন্তানের কাছ থেকেও মত নেওয়া হয় যে, সে কার কাছে থাকতে চায় এবং অন্যান্য বিষয় এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় বাবা অথবা মা কাকে কাস্টডি দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হয়।
যৌথ কাস্টডি- এই কাস্টডি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তানের অভিভাবকত্ব পিতা এবং মাতা দুইজনকেই দেওয়া হয়। তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে সন্তানকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেদের কাছে রাখতে পারবেন। সন্তানের ভরণ-পোষন, শিক্ষা, বাসস্থান সবকিছুই দুজন মিলে বহন করবেন।
কিন্তু নিজেরা আলাদা থেকে। সন্তানকে কিছুদিন মায়ের কাছে এবং কিছুদিন বাবার কাছে এভাবে পর্যায়ক্রমে উভয়ের কাছেই থাকার অনুমতি দেয়া হয় যৌথ কাস্টডিতে।
তৃতীয় পক্ষের কাস্টোডি- এই ধরনের কাস্টডিতে সন্তানের জৈবিক বাবা-মা কেউই সন্তানের হেফাজত পান না। সন্তানের হেফাজত কোনও তৃতীয় ব্যক্তিকে দেওয়া হয়ে থাকে।
যেসব ক্ষেত্রে পিতা-মাতা কাউকেই সন্তানের জন্য নিরাপদ, বা অভিভাবকত্বের যোগ্য মনে করা হয়না, সেক্ষেত্রে সন্তানের কাস্টডি অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি, হতে পারে সে পিতার দিকের কোন আত্মীয় যেমন কাকা,পিসি, দিদিমা, দাদু অথবা মাতার দিকের আত্মীয় মাসী-মামা, নানু, এরকম কাউকে সন্তানের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সন্তান সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় দেখাশোনা, এবং সবকিছু এই তৃতীয় পক্ষ অভিভাবকই পরিচালনা করেন।
ধর্ম অনুযায়ী অভিভাবকত্ব আইন
হিন্দু আইন – পিতা-মাতা উভয়ই হিন্দু হলেই হিন্দু আইনের আওতায় একটি শিশুকে অভিভাবকত্ব আইনের আওতায় শিশুর অভিভাবকত্ব হস্তান্তর করা যেতে পারে।
হিন্দু বিবাহ আইন (২) সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে আদালতকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ, রায়, সংশোধনী ইত্যাদি পাস করার ক্ষমতা প্রদান করে।
হিন্দু সংখ্যালঘু ও অভিভাবক আইনমতে কেবল জৈবিক পিতামাতা নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখেন। অর্থাৎ মা অথবা বাবা অথবা আলোচনা সাপেক্ষে উভয়েই শিশুর অভিভাবকত্ব পাবেন।
মুসলিম আইন- মুসলিম আইনে হিজানাতের অধিকারের প্রচলন রয়েছে। আর এই আইন অনুযায়ী দুর্ব্যবহার বা অন্য কোন কারণের জন্য মা দোষী প্রমাণিত না হলে একমাত্র মা তাঁর নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখেন। তবে মায়ের অনুপস্থিতিতে বা মা জীবিত না থাকলে শুধুমাত্র বাবার কাছে সন্তানের অভিভাবকত্ব স্থানান্তর করা হবে।
ঘরোয়া অত্যাচার বা হিংসা থেকে কিভাবে বাঁচবেন? সঠিক আইনি পদ্ধতি জানুন
শেষ কথা
বিভিন্ন দেশে ধর্ম-বর্ণ এবং অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আদালত নাবালক সন্তানের অভিভাবকত্ব বা কাস্টডি হস্তান্তর করে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিভাবকত্ব মা পেয়ে থাকেন, কারণ মনে করা হয় যে সন্তান মায়ের কাছে বেশী নিরাপদ।
তবে বাবা সন্তানের কাস্টডি পেতে চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে এটা প্রমাণ করতে হবে যে মা সন্তানের দায়িত্ব পালনে সক্ষম নয়, এবং মায়ের থেকে বাবার কাছে সন্তান বেশী আদর-যত্নে, নিরাপদে এবং সকল চাহিদা পূরণের মাধ্যমে বড় হবে। মা সন্তানের দায়িত্ব পালনে অক্ষম বিবেচিত হলে সন্তানের দায়িত্ব বা কাস্টডি বাবাই পাবেন।
আশা করি বাবার জন্য শিশুর কাস্টডি পাওয়ার আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাতে সক্ষম হয়েছি। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না।
এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।ধন্যবাদ সবাইকে।