দুর্গা পূজা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Durga Puja 2024: History and Significance

2024 দুর্গা পূজা: 2024 Durga Puja History and significance, 2024 দুর্গা পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন দুর্গা পূজা কেন পালন করা হয়? বিধি কি? কিভাবে শুরু হয়েছিল।

বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ পূজা দূর্গা পূজা (Durga Puja), সারা বছর ধরে এই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। নতুন নতুন জামা কাপড়, উৎসবের কটা দিন আনন্দে কাটানো, সব মিলিয়ে মজায় কাটে উৎসবের দিনগুলি।

তার সাথে চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ওমা কৈলাস থেকে মর্ত্যে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান আবার কৈলাসে নিজের শ্বশুরবাড়িতে। আর জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই উৎসব উদযাপন করেন পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি গোটা বিশ্বের বাঙালিরা।

আশ্বিন মাসে প্রায় ১০ দিন ধরে দুর্গাপূজা উৎসব পালিত হয়, যদিও প্রকৃত অর্থে উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে, যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনেই দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন।

Durga Puja: History and Significance
2024 দুর্গা পূজা: 2024 Durga Puja History and Significance

দুর্গাপূজার পাঁচটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হল মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী, এবং বিজয়া দশমী। এটি সকলেরই জানা, তবে অনেকেরই অজানা প্রতিদিনের নিজস্ব অর্থ এবং তাৎপর্য রয়েছে।

মহালয়ার দিন থেকে উৎসবের সূচনা হয়ে যায়। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে মাতৃভক্তির শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপূজার সূচনা হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল।

নবরাত্রির ইতিহাস ও তাৎপর্য

বিজয়া দশমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য

দূর্গা পূজার ইতিহাস 2024:

বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার ইতিহাস বলতে আমরা জানি রামের অকাল বোধন। বাংলায় কিভাবে দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল তা আজকে জানা যাক।

১) কেউ কেউ মনে করেন সিন্ধু সভ্যতায় অর্থাৎ হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, দেবি মাতা, পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল। দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিিনী, সে হিসাবে অথবা দেবী হিসেবে পূজা হতেন দেবী দুর্গা।

২) মূল বাল্মিকী রামায়ণ এ দুর্গা পূজার কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব রয়েছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি মূল রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়।

দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন

কালিকা পুরাণের ঘটনা অনুসরণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দূর্গা পূজা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিজয় নিশ্চিত করতে শরৎকালের শ্রীরামচন্দ্র কালিদহ সাগর থেকে ১০৮  নীল পদ্ম সংগ্রহ করে প্রস্তুতি হিসেবে দুর্গাপূজা করে দুর্গার কৃপা লাভ করেন বলে কৃত্তিবাস ওঝা বর্ণনা করেছেন।

৩) তাছাড়া মার্কণ্ডেয় পুরাণ থেকে জানা গিয়েছে যে চেদি রাজ বংশের রাজা সুরাথ খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে অর্থাৎ বর্তমানে যেটা উড়িষ্যা নামে পরিচিত, দশেরা নামে দর্গাপূজার প্রচলন করেছিল, নেপালে দশেরা নামে পুজো হয়। যদিও প্রাচীন উড়িষ্যার সাথে নেপালের পূজার যোগসূত্র আছে কিনা সে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, পুরান মতে দুর্গাপূজার ইতিহাস আছে কিন্তু ভক্তদের কাছে সেই ইতিহাস প্রামানিক নয়, অত্যন্ত বিশ্বাসের।

৪) আবার অন্যদিকে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায় ৬.১১ শতকে মৈথিলী কবি বিদ্যাপতি দুর্গা ভক্তি তরঙ্গিনীতে দুর্গা বন্দনা পাওয়া যায়। বঙ্গে ১৪০০ শতকে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল কিনা ভালোভাবে জানা যায়নি।

2024 দুর্গা পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

৫) জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা চালুর আগে কিছু কিছু উচ্চবর্ণ হিন্দুদের গৃহকোণে অত্যন্ত সাদামাটাভাবে ঘরোয়া পরিবেশে এই পূজা চালু ছিল। আর ঘটা করে দুর্গাপূজার ইতিহাস খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। তবে কখন থেকে ঘটা করেই পূজা চালু হলো তা নিয়ে পরিষ্কার বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাসে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

যতটুকু জানা যায় তা হল কারো মতে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দুর্গাপূজা করেন, আবার কারও মতে ষোড়শ শতকে রাজশাহী তাহেরপুর এলাকার রাজা কংস নারায়ন প্রথম দুর্গাপূজা করেন, ১৫১০ এ রাজসিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন।

অনেকে আবার এটাও মনে করেন ১৬০৬ সালে নদীয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দুর্গাপূজার প্রবর্তক। কলকাতার বরিশাল রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। ১৬১০ সালে কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার দুর্গার ছেলে-মেয়েসহ সপরিবারের পূজা চালু করেন।

জাঁকজমকপূর্ণভাবে না হলেও দুর্গাপূজার প্রচলন কিন্তু অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। সেটা কোন উচ্চবর্ণের হিন্দুদের গৃহকোণে, অত্যন্ত সাদামাটাভাবে প্রচলন থাকলেও।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মহা ষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তার সন্তান সরস্বতী, লক্ষী, গণেশ এবং কার্তিক কে নিয়ে মর্ত্যে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গার বোধন।

দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী এই ভাবে পালন করলে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি

এর পর সমস্ত আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়, পুজোর প্যান্ডেল, মন্দির, বনেদি বাড়ি, এমনকি যেখানে দুর্গার আরাধনা করা হয় সর্বত্র ঢাকের তালে তালে মেতে ওঠেন সকলে।

তবে পুজোর সবচেয়ে বড় পূজা হয় এই মহাসপ্তমীতে, সূর্য উঠার আগেই একটি কলাগাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করিয়ে তারপর একটি নববধূর মত নতুন শাড়ি পড়ানো হয়। যাকে কলাবৌ নামে সকলেই চেনেন। আবার অনেকে এটাকে কলাবউ স্নান বলেও জানেন।

অষ্টমীর দিন সকলেই বেস উৎসাহের সঙ্গে কাটান। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী দুর্গা মহাষ্টমীতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। এদিন ভক্তেরা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে দেবীকে আরাধনা করেন। ৯ বছরের কম বয়সী মেয়েরা এদিন দেবী দুর্গা রূপে পূজিত হন। এই পূজা টি কুমারী পূজা (Kumari Puja) নামে পরিচিত। এরপরে অষ্টমী- নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় সন্ধিপুজো (Sandhi Puja)।

ধীরে ধীরে দূর্গা উৎসব শেষ পর্যায়ে দিকে চলতে থাকে। এই দিন অনেকটাই আনন্দের সাথে কাটানো গেলেও রাত পোহালেই যে বিজয়া দশমী (Vijaya Dashami) সেটা মনে করতেই অনেকেরই মন খারাপ হয়ে যায়। সন্ধিপূজা শেষ হলে শুরু হয় মহা নবমী, নবমীর সন্ধ্যাবেলায় দেবীর আরতি করা হয়। মহানবমীতে আরো যে গুলি করা হয় সেগুলি হল দুর্গা বলিদান (Durga Balidan), নবমী হোম।

বিজয়া দশমীতে যে কাজগুলি করলে দূর হবে সমস্ত বাধা-বিপত্তি, হবে অর্থ লাভ

বিজয়া দশমীতে এই নিয়মগুলি মানলে মায়ের কৃপা সর্বদাই থাকবে আপনার উপর

বিজয়া দশমী হল দুর্গা পুজো উৎসবের শেষ দিন। প্রতিমাগুলো বরণ করে মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। এরপর জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা গুলি, আবার নদীতেও বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়, যেখানে নাচ-গানে হাসিমুখে বিদায় জানান হয় দেবী দুর্গাকে অথবা উমাকে। মনে করা হয় এই দিন উমা সন্তানদের নিয়ে কৈলাসে শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি জমান।

নবপত্রিকা পূজা 2024:

দুর্গাপূজায় নবপত্রিকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে নবপত্রিকা অর্থ হলো ন’ টি গাছের পাতা। কিন্তু এখানে নবপত্রিকা মানে নয়টি গাছের পাতা বোঝালেও পুজোর ক্ষেত্রে নয়টি গাছের পাতা ৯ টি উদ্ভিদ হল নবপত্রিকা আর এই নটি উদ্ভিদের নাম হল:-

১) কদলী বা রম্ভা অর্থাৎ কলাগাছ।

২) অপরাজিতা।

৩) জয়ন্তী।

৪) বিল্ব অর্থাৎ বেল গাছ।

৫) দাড়িম্ব গাছ।

৬) অশোক।

৭) মান কচু।

৮) ধান গাছ।

৯) হরিদ্রা।

কুমারী পূজা:

সব নারীর মধ্যে মায়ের শক্তি রয়েছে এটা অনেকেই মনে করেন। সব নারীই যে মায়ের রূপ এই বিশ্বাসে অষ্টমীর দিন জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয় কুমারী পূজা। এবং এই কুমারী পূজা দুর্গাপুজোর একটি বিশেষ অংশ।

তন্ত্র শাস্ত্র মতে ১৬ বছরের মধ্যে ঋতুবতী না হওয়া কুমারী মেয়ের পূজা হলো কুমারী পূজা। দুর্গাপূজার প্রধান অঙ্গ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো এই কুমারী পূজা। দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার প্রবর্তন করেন স্বামী বিবেকানন্দ, সালটা ছিল ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই অক্টোবর।

কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কুমারী অথবা কন্যা:

কুমারী পূজা তে বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে অথবা কুমারীকে পূজা করা হয়। বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে জানা যায়, যেমন

১ বছরের কন্যা সন্ধ্যা,

২ বছরের কন্যা সরস্বতী,

৩ বছরের কন্যা কৃষ্ণমূর্তি,

৪ বছরের কন্যাকে কালিকা,

৫ বছরের কন্যা সুভাগা,

৬ বছরের কন্যা উমা

৭ বছর কুমারী মালিনী,

৮ বছরের কন্যা পঞ্জিকা, 

৯ বছরের কন্যা কালসন্দর্ভা,

১০ বছরের কন্যা অপরাজিতা,

১১ বছরের কন্যাকে রুদ্রাণী,

১২ বছরের কন্যাকে ভৈরবী,

১৩ বছরের কন্যাকে মহালক্ষ্মী,

১৪ বছরের কন্যাকে পঠিনায়িকা,

১৫ বছরের কন্যা কে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং

১৬ বছরের কন্যা কে কুমারী পূজার মধ্যে অম্বিকা নামে পূজা করা হয়।

কলা বউ:

কলাবৌ নবপত্রিকার অন্তর্গত। একটি সপত্র অথবা পাতাযুক্ত কলা গাছের সঙ্গে বাকি আটটি সপত্র উদ্ভিদ একসঙ্গে করে তাতে দুটি বেল, সাদা অপরাজিতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটাা দিয়ে বধূর আকারে তৈরি করে সিঁদুর দিয়ে দাড় করানো হয় দেবী প্রতিমার ডানদিকে। আর এই নবপত্রিকায় নটি উদ্ভিদ হল দেবী দুর্গার নয়টি রূপের কল্পিত প্রতীক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top