নবরাত্রি 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Navratri 2024: History and Significance

2024 নবরাত্রি: 2024 Navratri History and significance, 2024 নবরাত্রির ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন নবরাত্রি কেন পালন করা হয়? অকাল বোধন কি? কিভাবে শুরু হয়েছিল।

দুর্গাপুজোর আর বেশি বাকি নেই। নবরাত্রি (Navratri) ও চলে এসেছে। আর তাই সবার ঘরে ঘরে আনন্দ উত্তেজনার সীমা নেই। কোনো শিউলি তলায় শিউলি ফুলের মেলা। কাশফুলের বনে ফুলে ফুলে সাদা হয়ে গেছে।

এরই মাঝে নবরাত্রি নিয়ে আমাদের মনে সুন্দর সব চিত্র ফুটে ওঠে। নবরাত্রি মানেই কিন্তু রঙিন পোশাক, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে গর্বা এর নাচে পা মেলানো। সারাবছর ধরে অপেক্ষা করা হয় এই উৎসবের জন্য।

Navratri History and significance
2024 নবরাত্রি: 2024 Navratri History and significance

তবে কথায় আছে নবরাত্রির একেকটি দিনের সাথে একেকটি রঙের তাৎপর্য আছে। সেইসাথে একেকটি দিনে এক একটি রঙ মেনে চলা হয়। আর এর পিছনে কারণও আছে।

নবরাত্রির মজার বিষয় হলো আনন্দ উৎসব এর সাথে সাথে, দিন ও রঙের উপর ভিত্তি করে সবাই সেজে ওঠেন।

2024 নবরাত্রি শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

নবরাত্রির ইতিহাস 2024:

কাহিনী অনুযায়ী জানা যায় যে, পূর্বে রামচন্দ্রের উপর অনুগ্রহ করে রাবণ বধ করার জন্য তাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্রম্ভা রাত্রিকালে এই মহাদেবির বোধন করেছিলেন।

এই বোধনের পর দেবী গেলেন রাবণের বাসভূমি লঙ্কা তে। সেখানে তিনি রাম ও রাবনকে দিয়ে টানা সাতদিন ধরে যুদ্ধ করালেন। নবমীর দিন জগনময়ী মহামায়া রামচন্দ্রের দ্বারা রাবণ বধ করেন।

যে ৭ দিন দেবী রামচন্দ্র ও রাবণের মধ্যে যুদ্ধ দেখে আনন্দ উপভোগ করলেন, সেই ৭ দিন দেবতারা এই দেবীর পুজো করেন। রাবণ নিহত হলে নবমীর দিন ব্রহ্মা সকল দেবতা কে সঙ্গে নিয়ে দেবীর বিশেষ পূজা করলেন। তারপর দশমীর দিন শবর উৎসব উদযাপিত হলো। তারপর দেবীর বিসর্জন হলো।

নবরাত্রির সময় এই ভুলগুলো করবেন না! দেবী অসন্তুষ্ট হবেন

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, শরৎকালের রাম চন্দ্র কেন দুর্গাপূজার পক্ষকে অকাল বলেছেন?

সূর্যের দক্ষিণায়ন হলো দেবতাদের রাত। এইসময় দেবতারা ঘুমান। শরৎ কালের পরে দক্ষিণায়নের সময়। এই সময় দেবতাকে পূজা করতে হলে সেই দেবতাকে জাগ্রত করতে হবে। আর এই জাগরিত করার প্রক্রিয়া টা কেই বলা হয় বোধন।

এই পুরাণের মতে কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের পর রামচন্দ্রের অমঙ্গল আশঙ্কা করে দেবতারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। সেই মুহূর্তে ব্রহ্মা বলেন যে, “দুর্গাপূজা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

সেই কারণে রামচন্দ্রের মঙ্গলের জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা যজমানি করতে রাজি হলেন। আর সেই সময় কাল টা ছিল শরৎকাল অর্থাৎ দক্ষিণায়ন, এককথায় দেবতাদের ঘুমাবার সময়।

অতএব ব্রম্ভা স্তব করে দেবি কে জাগরিত করলেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মা ক বললেন, “বিল্ববৃক্ষমূলে দেবীর বোধন হবে।” তখন দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, একটি অত্যন্ত দুর্গম স্থানে একটি বেল গাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি পরমা সুন্দরী বালিকা।

এই পরমাসুন্দরী বালিকাকে দেখে ব্রহ্মা বুঝতে পারলেন যে, এই বালিকাই জগজ্জননী দূর্গা। তারপর তিনি তাঁকে স্তব করে জাগরিত করলেন। তারপর দেবী জাগরিত হয়ে বালিকা মূর্তি ত্যাগ করে চন্ডিকা মূর্তি ধারণ করেন। তখন ব্রহ্মা বললেন, “রাবণ বধে রামচন্দ্র কে অনুগ্রহ করার জন্য তোমাকে অকালে জাগরিত করেছি।

যতদিন না রাবণ বধ হচ্ছে ততদিন আমরা তোমাকে পুজো করবো। যেমন আজ আমরা তোমাকে বোধন করে পুজো করলাম, তেমনভাবেই মর্তবাসী তোমাকে যুগ যুগ ধরে পুজো করবে। যতকাল সৃষ্টি থাকবে ততকাল তুমি পূজা পাবে এইভাবে।”

একথা শুনে চন্ডিকা (দেবী দুর্গা)  বলেন, “সপ্তমী তিথিতে আমি প্রবেশ করব রামের ধনুর্বাণ এ। অষ্টমীতে রাম ও রাবনের মধ্যে মহাযুদ্ধ হবে। অষ্টমী নবমী সন্ধিক্ষণে রাবণের দশমুন্ডু বিচ্ছিন্ন হবে।

সেই দশমুন্ডু আবার জোড়া লাগবে। কিন্তু নবমীতে রাবণ নিহত হবে। তারপর দশমীতে রামচন্দ্র করবে বিজয় উৎসব।”

দেবের কথা অনুযায়ী সেইমতো সবকিছুই হল। মহা বিপদ কেটে গেল অষ্টমীতে। আর সেই কারণেই অষ্টমী হল মহাঅষ্টমী। রাবণকে বধ করে মহাসম্পদ সীতাকে উদ্ধার করে নবমীতে সীতাকে লাভ করলেন রামচন্দ্র সেই কারণে নবমী হল মহানবমী। নবরাত্রির উৎসবকে বলা হয় শারদ নবরাত্রি (Sharad Navratri)।

নবরাত্রির তাৎপর্য 2024:

ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র শারদীয়া দূর্গোৎসবের প্রচলন করেন। রাবণ বধ ও সীতা উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অকাল বোধন (Akaal Bodhon) করে নবরাত্র ব্রত পালন করেছিলেন।

এই নবরাত্রি ব্রত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত। মা দূর্গা এই সময় অর্থাৎ এই ৯ টি রূপ ধারণ করেন। পিতামহ ব্রহ্মা দেবির এই ৯ টি রূপের নামকরণ করেছিলেন। এই নয়টি রূপ ছিল দেবির নয়টি কায়া মূর্তি।

নবদুর্গার নয়টি নাম ও রুপ:

#১) শৈলপুত্রী: পর্বতের কন্যা।

#২) ব্রহ্মচারিণী: যিনি স্বয়ং ব্রহ্মাকে জ্ঞান দান করেন। তার সাথে সাথে ভক্ত কেও ব্রম্ভপ্রাপ্তি করান।

#৩) চন্দ্রঘণ্টা: দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের জন্য দেবরাজ ইন্দ্রের প্রদত্ত ঘন্টা, যার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি নিহিত ছিল। চন্দ্রের চেয়েও লাবণ্যবতি ইনি।

#৪) কুষ্মাণ্ডা: উষ্মার অর্থ হল ত্রিতাপ। আর দুর্বিষহ ত্রিতাপ হলো কুস্মা। আর যিনি এই ত্রিতাপ নিজের উদরে অথবা অন্ড এ ধারণ করেন অর্থাৎ এক কথায় সমগ্র সংসার ভক্ষণ করেন ইনি।

#৫) স্কন্দমাতা: দেবসেনাপতি কার্তিক বা স্কন্দের মা।

#৬) কাত্যায়নী: ব্রজের গোপিরা কাত্যায়নীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, নন্দের নন্দন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য। আর সেই কারণে ব্রজের দুর্গার নাম কাত্যায়নী।

#৭) কালরাত্রি: অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা অথবা কালরাত্রি নামে আখ্যাত।

#৮) মহাগৌরী: ইনি সন্তানবাৎসলা, শিব সোহাগিনী, মা দুর্গার প্রসন্ন মূর্তি।

#৯) সিদ্ধিদাত্রি: অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভূজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃ সূর্যের মতো রঞ্জিত, যোগমায়া মহেশ্বরী। ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন।

নবরাত্রি তে দেবীর ন’টা রুপের সাথে সাথে নটা রঙের তাৎপর্য:

১) প্রথম দিন, লাল: নবরাত্রির প্রথম দিন হল প্রতিপদ। রূপ হল শৈলপুত্রী। এই লাল রঙের প্রতীক হলো শক্তি ও উদ্যমের পরিচায়ক।

২) দ্বিতীয় দিন, গাঢ় নীল: রূপ হল ব্রহ্মচারিণী, এই রং হলো শান্তি ও পরম শক্তির প্রতীক।

৩) তৃতীয় দিন, হলুদ: দেবির রূপ হল চন্দ্রঘণ্টা। এই রং উজ্জলতা ও উদ্দীপ্তর প্রতীক।

৪) চতুর্থ দিন, সবুজ: দেবীর রূপ হল কুষ্মাণ্ডা। সবুজ রং শস্যশ্যামল ও সুফলার প্রতীক।

৫) পঞ্চম দিন, ধূসর: দেবীর রূপ হল স্কন্দমাতা। ধূসর রং হল মাতৃরূপ এর প্রতীক সন্তানকে সর্বক্ষেত্রে রক্ষাই সর্বোপরি।

৬) ষষ্ঠ দিন, কমলা: দেবীর রূপ হল কাত্যায়নী। এই রঙ অসীম সাহসের প্রতীক।

৭) সপ্তম দিন, সাদা: দেবী রুপ কালরাত্রি। সাধারণ শান্তি ও কল্যাণ এর প্রতীক।

৮) অষ্টম দিন, গোলাপি: দেবীর রূপ মহাগৌরী। গোলাপি রং হল আশার প্রতীক ও নতুন সূচনার প্রতীক।

৯) নবম দিন, হালকা নীল: দেবীর রূপ সিদ্ধিদাত্রী। হালকা নীল হল প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হওয়ার প্রকাশ। তাছাড়া দেবীর এই সিদ্ধিদাত্রী রূপে রয়েছে অতি মানবীয় আরোগ্য ক্ষমতা।

আশাকরি, নবরাত্রি (Navratri) সম্পর্কে এই বিষয়গুলি আপনাদের ভাল লেগেছে। নবরাত্রির প্রতিটি দিন, প্রতিটি রঙে নিজেদেরকে সাজিয়ে তুলুন। উৎসব কাটুক আপনাদের ভীষণ আনন্দে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top