শরৎ পূর্ণিমা 2023 (Sharad Purnima 2023 Date Time and Significance) 2023 শরৎ পূর্ণিমা ইতিহাস এবং জানুন শরৎ পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়? শরৎ পূর্ণিমা তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য শরৎ পূর্ণিমা গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
বাঙালির জীবন প্রতিমুহূর্তে উৎসবে ভরপুর। আনন্দ, উৎসব, পুজো, পার্বণ, খাওয়া-দাওয়া, মিষ্টি মুখ, সব কিছুর মধ্যে দিয়ে বাঙালির জীবনযাত্রা অতিবাহিত হয়। যেকোনো পূজার সাথে প্রকৃতিও যেন সেই পূজাতে অংশগ্রহণ করে।
এমনই সমস্ত পূজা পার্বণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো শরৎ পূর্ণিমা। শরৎ পূর্ণিমার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে গেলে এই দিনে অগ্যস্ত তারা উদয় হবে এবং চাঁদের ষোল কলা পূর্ণ হয়ে শীতলতা প্রদান করবে।
শরৎ পূর্ণিমার ইতিহাস 2023:
কথিত আছে যে, অন্যান্য পূর্ণিমার থেকে শরৎ পূর্ণিমাকে একটু আলাদা হিসেবে মনে করা হয়। প্রচলিত আছে যে, এই দিন কৃষ্ণ মহারাস করেছিলেন অর্থাৎ রাসলীলা ও বলা যেতে পারে।
দেবী ভাগবত মহাপ্রাণ অনুযায়ী গোপিনীদের অনুরাগ দেখে কৃষ্ণ চন্দ্রকে মহারাসের সংকেত দিয়েছিলেন। এর ফলে চন্দ্র তার নিজের শীতল আলোক রশ্মিতে প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ রূপে ঢেকে দিয়েছিল। এরপর কৃষ্ণ এবং গোপিনীদের অদ্ভুত ভালবাসা দেখে চন্দ্র অথবা চাঁদ অমৃত বর্ষা শুরু করেন।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
এর ফলে সমস্ত গোপিনী রা অমরত্ব লাভ করেন এবং কৃষ্ণের অমর প্রেমের ভালবাসার অংশীদার হয়ে পড়েন। এছাড়াও গাছপালা, বন- জঙ্গল সবকিছু চাঁদের এই মিষ্টি রশ্মি উপভোগ করার ফলে তাতেও কিন্তু অমরত্ব সঞ্চার হয়ে যায়।
তাই এই দিন পায়েস বানিয়ে মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিচে রাখার প্রথা ও প্রচলিত রয়েছে। যার ফলে সেই পায়েসটিও অমৃতসমূহ হয়ে ওঠে, সকালে সেই পায়েস প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে এই শরৎ পূর্ণিমা উপলক্ষে।
শরৎ পূর্ণিমার তাৎপর্য 2023:
চাঁদের আলো কতই না মিষ্টি, তা তো আমরা সকলেই জানি। সেই কারণে জোৎস্না স্নান করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল, তাই না ! আর শরৎ পূর্ণিমার এই স্নিগ্ধ আলো অমৃত সমান বলে মনে করা হয়।
শরৎ পূর্ণিমার দিনে চন্দ্র দোষ থাকলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কুষ্টিতে যদি চাঁদ দুর্বল হয় আবার মহা দশা, অন্তর্দশা বা অত্যন্ত দশা চলতে থাকলে বা বলা যেতে পারে ষষ্ঠ, অষ্টম বা দ্বাদশ কক্ষে চাঁদ থাকলে চাঁদের পূজো করা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ, পেটের গোলযোগ, হৃদরোগ, সর্দি, কাশি, চোখের সমস্ত রকম সমস্যা যদি থেকে থাকে, তাহলে চাঁদের পূজা করলে এই সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার পড়াশোনায় মন না বসলে চন্দ্রযন্ত্র ধারণ করলে পড়াশোনায় সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে শরৎ পূর্ণিমাতে সমস্ত ধরনের ঋণ, রোগ এবং দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। বিষ্ণুর প্রিয় একাদশীর দিনে ব্যক্তির কর্মের ভিত্তিতে তাদের পূজা আরাধনার ফল দেওয়া হয়, যার ফলে পাপ মুক্ত হতে পারেন কোন ব্যক্তি। সেই কারণে এই তিথিকে পাপাংকুসা একাদশীও বলা হয়। এই তিথিতে পৃথিবীতে মহা লক্ষ্মীর আগমন ঘটে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি সকলকে বর প্রদান করেন, কিন্তু যারা দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকেন সেই গৃহের দরজা থেকে তিনি ফিরে যান।
শাস্ত্র অনুসারে জানা যায় যে, একে “কোজাগর” অর্থাৎ “কে জেগে আছো” এই ব্রত ও বলা হয়। আর সেই কারণে একে ঋণ মুক্তি পূর্ণিমা ও বলা হয়। এই রাতে শ্রী সুপ্ত পাঠ, কনক ধারা স্তোত্র, বিষ্ণুর সহস্র নাম জপ করা এবং কৃষ্ণের মধুরাষ্ট্রক পাঠ করলে কার্যসিদ্ধিতে অনেকখানি সহযোগিতা পাওয়া যায়।
বিজয়া দশমির ঠিক পাঁচ দিন পরে আসে শরৎ পূর্ণিমা। এই সময়ে চন্দ্রের আরাধনা একাধিক ব্যর্থতা কাটিয়ে জীবনে উন্নতি লাভ করা যায়। অবিবাহিতদের বিয়ে থেকে শুরু করে অর্থ কষ্ট, সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে তোলার জন্য এটি হলো উপযুক্ত একটি তিথি।
শাস্ত্র মতে এই পূর্ণিমা খুবই শুভ ফলদায়ক নব দম্পতিদের জন্য, এই শরৎ পূর্ণিমাকে খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে দেবীর জন্য ভোগ রান্না করা থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য পুজোর কাজকর্ম করা খুবই শুভ বলে অনেকে সেই কাজ করে থাকেন। খাওয়ার সময় পাতে যদি দুধ ও ভাত থাকে তাহলে কোন পিত্ত দোষ থাকলে সেটা কেটে যায়।
জীবনের সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ ও প্রেম ফিরে পেতে লক্ষ্মীর আরাধনার সাথে সাথে এই সময় শ্রীকৃষ্ণের পূজা করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে রাত জেগে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করতে হয়। তবেই কিন্তু আপনি ভালো ফল পাবেন।
শরৎ পূর্ণিমা পূজার পদ্ধতি 2023:
- প্রথমত আপনাকে স্নান সেরে পরিষ্কার জামা কাপড় পড়তে হবে।
- তারপর মন্দির অথবা বাড়ির যেখানে আপনি পূজা করে থাকেন সেখানে জল দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
- তারপর শুদ্ধ মনে লক্ষীর পাঁচালী পাঠ করে, পিতল, রূপা, তামা অথবা সোনার তৈরি লক্ষ্মীর প্রতিমাকে পূজা করুন।
- লক্ষ্মী প্রতিমার সামনে ঘি এর প্রদীপ জ্বালিয়ে দিন।
- সন্ধ্যায় দুধ দিয়ে ক্ষীর তৈরি করুন, এরপর রাতে যখন চাঁদ উঠবে, ঘরে ১১ টি ঘি এর প্রদীপ জ্বালান।
- এবার সেই যে ক্ষীর তৈরি করেছেন, সেটা আকাশের নিচে চাঁদের আলোয় রাখুন, মা লক্ষ্মীর আরতি করুন।
- রাত বারোটা বাজলে চাঁদের আলোতে রাখা ক্ষীরকে লক্ষ্মীর কাছে অর্পণ করে, বাড়ির সমস্ত লোককে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করতে পারেন।
- মানা হয় যে এমন করলে সেই ক্ষীর অমৃত সমান হয়ে যায়।
এছাড়া শাস্ত্রমতে জানা যায় যে, যে সমস্ত ব্যক্তিরা অনেকদিন ধরে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন তাদের জন্য এই দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত শুভ এবং ফল দায়ক। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পূর্ণিমা তিথি শরৎ পূর্ণিমা নামে পরিচিত। চাঁদের ষোল কলা পূর্ণ হয়ে থাকে এই পূর্ণিমায়।
প্রতিটি মানুষ চাইবেন সুস্থ সবল শরীর, ধন-সম্পত্তিতে ভরপুর জীবন। আর তাইতো শরৎ পূর্ণিমার এতখানি গুরুত্ব। আপনার সমস্ত রকম অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে, সংসারে ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধি, সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য শরৎ পূর্ণিমার ব্রত পালন করতেই পারেন এবং দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করুন ঘরেতেই। এর ফলে আপনার লক্ষী লাভ হতে কোন বাধা থাকবে না।