2023 কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা – 2023 Kojagari Lakshmi Puja History & Significance, 2023 কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন কোজাগরী পূজা কেন পালন করা হয়? বিধি কি?
Kojagari Lakshmi Puja 2023: দুর্গাপুজো (Durga Puja) কেটে যাওয়ার সাথে সাথেই বিজয় দশমীর (Vijaya Dashami) পর মানুষের মন একেবারে ভারাক্রান্ত। তবে সামনে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা আছে। সেই আশায় অনেকেই খুশি টাকে বজায় রেখেছে।
আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা আরাধনা করা হয় বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে। এক চিরন্তন প্রার্থনা, প্রায় প্রতি ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা (Devi Lakshmi Puja) হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন-সম্পদের দেবী। ধন-সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে।
নারীপুরুষ নির্বিশেষে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। সকলেই প্রায় সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজো করে থাকেন। এছাড়াও আশ্বিন সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তিতে, এবং পূর্ণিমা তে লক্ষী পূজা হয়।
কার্তিক মাসে এভাবে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে আয় বৃদ্ধি হবে সারবে অসুখ-বিসুখও
লক্ষ্মী হলেন খারিফ শস্য, রবি শস্য কোন সময় হয়, ঠিক সেইসময় বাঙালি হিন্দু ঘরে ঘরে শুরু হয় লক্ষ্মীর আরাধনা।
কোজাগরী শব্দের অর্থ:
কোজাগরী শব্দটি এসেছে “কো জাগতি” থেকে। এই কথার অর্থ হল কে জেগে আছো। কথায় রয়েছে, মা লক্ষ্মী এই পূর্ণিমা রাতে নাকি জগত পরিক্রমায় বের হন। দেবী লক্ষী ঘরে ঘরে খোজ নিয়ে দেখেন কে জেগে আছে।
এই রাতে যে ব্যক্তি জেগে দেবীর আরাধনা করেন তার ঘরে প্রবেশ করেন মা লক্ষ্মী। তাকে দেবী ধনসম্পত্তি দান করেন। তাই ভক্তরা সারারাত জেগে থাকেন দেবীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য।
এই সন্ধ্যা বেলা থেকেই বাংলার প্রতিটি ঘর মুখরিত হয়ে ওঠে শঙ্খধ্বনিতে। কিন্তু এই দিন যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তার বাড়িতে মা লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না এবং আশীর্বাদ তো দূরের কথা সেখানে দিয়ে তিনি মুখ ফিরিয়ে চলে যান।
রাত পেরোলেই কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা। ঘরে ঘরে দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠেন সবাই।
“এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে,
আমার এই ঘরে থাকো আলো করে।”
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় মনের মত ফল পেতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না
দেবী দুর্গার বিদায়ের বার্তা ভুলে মানুষ আবার মেতে উঠছে লক্ষ্মী পূজার উৎসব ও আনন্দে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা 2023 তারিখ (Kojagari Lakshmi Puja 2023 Date)
Kojagari Lakshmi Puja | 28 October 2023, Saturday |
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা | ১০ কার্ত্তিক ১৪৩০, শনিবার |
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস 2023
কাহিনী অনুসারে, জগৎশেঠ অল্প বয়সে বিদ্বান হয়ে উঠেছিলেন এবং সেই কথা দিল্লীশ্বর এর কানে পৌঁছায়। তিনি তখন তাকে দেখতে চান। এরপর জগৎশেঠ দিল্লি চলে গেলে রাজা তার কথাবার্তায় খুশি হয়ে তাকে দিল্লিতে থাকতে বলেন। জগৎশেঠও দিল্লিতে থেকে যান।
2023 কোজাগরি লক্ষ্মী পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
কিছুদিন পরে রাজা তাকে বলেন তোমার উপর আমি অত্যন্ত প্রীত। তুমি যা চাইবে আমি তোমাকে তাই দান করব। তখন জগৎশেঠে বাড়ি ফিরে মাকে সব বললেন। বুদ্ধিমতী জগৎশেঠের মা, সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য আগে রাজাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়ে নিয়ে তারপর জানাতে যে, কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে দিল্লিতে কোন গৃহস্থবাড়িতে যেন আলো না জালায়।
সেইমতো রাজার নির্দেশে ওই রাতে কেউ আলো জ্বালাই নি। কিন্তু জগৎশেঠের মা নিজের ঘরে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন এবং ঘরের দরজা খুলে অপেক্ষা করতে থাকলেন, যথাসময়ে দেবী লক্ষ্মী সাধারণ নারী রূপে এসে বললেন, আমি খুব পরিশ্রান্ত, আমাকে একটু আশ্রয় দেবে? জগৎশেঠের মা দেবীর ছলনা বুঝতে পারলেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় এই পদ্ধতি মানলে হবে মা লক্ষ্মীর প্রচুর কৃপা
তিনি দেবীকে ঘরে আশ্রয় দিলেন এবং বললেন, আমি নদীতে স্নান করতে যাচ্ছি, ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি এখানেই থাকবেন, দেবী তাতেই রাজি হলেন। এবার জগৎশেঠের মা নদীতে স্নান করতে গিয়ে প্রাণ ত্যাগ করলেন। ফলে সেদিন থেকে দেবী জগৎশেঠের ঘরে থেকে গেলেন।
আজও ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী কে পাওয়ার জন্য গৃহস্থবাড়িতে সারারাত ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয়।
দেবী লক্ষ্মীর রূপ ভেদ:
দেবী লক্ষ্মীর আটটি বিশেষ রূপ তার সম্পদের উৎস তথা লক্ষীদেবী শক্তির প্রতীক। দেবীর এই আটটি রূপের নাম হল:-
১) আদি লক্ষ্মী বা মহালক্ষী: লক্ষীর আদিরূপ
২) ধনলক্ষ্মী: লক্ষীর অর্থ ও স্বর্ণ দাত্রী রূপ
৩) ধান্যলক্ষ্মী: কৃষি সম্পদের দেবী
৪) গজলক্ষী: গবাদিপশু ও হাতি সম্পদ দাত্রি লক্ষী
৫) সন্তান লক্ষ্মী: সন্তান প্রদান করার দেবী
৬) বীরলক্ষ্মী বা ধৈর্যলক্ষ্মী: যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্ত প্রদান করার দেবী
৭) বিজয়লক্ষ্মী: বিজয় প্রদানকারী দেবী
৮) বিদ্যা লক্ষী: কলা ও বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রদানকারী দেবী
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বিধি: অভাব অনটন দূর হবে এই নিয়ম মেনে পূজা করলে
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার তাৎপর্য 2023:
শোনা যায় দেবী লক্ষ্মী নাকি খুবই চঞ্চলা, তবে ক্রোধী দেবী নন, তাই যেকোনো গৃহস্থলীকে লক্ষ্মী ঝাঁপি করে লক্ষ্মীর কৃপা দেন। গৃহকোণে প্রতি বৃহস্পতিবার সামান্য ফুল বাতাসা তে চাল গুঁড়োর আলপনা সেটাই একটু বড় আকারের করা হয়, এই কোজাগরী পূর্ণিমা রাতে।
গবেষকদের মতে অনুসারে, বাংলার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কৃষি সমাজের গভীর প্রভাব। অবশ্য তার প্রমাণ মেলে পুজোর উপকরণ আর আচার-অনুষ্ঠান দেখে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে একেবারে জড়িয়ে আছে আলপনা, পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে লক্ষ্মী পূজার আলপনায় দেখা যায় আঞ্চলিকতার প্রভাব।
এখনো গ্রামাঞ্চলের ঘরের দরজা থেকে দেবীর আসন, ধানের গোলা পর্যন্ত আল্পনায় ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেওয়া হয়। এটা থেকে সবার মনে একটাই বিশ্বাস যে এই পথেই দেবী লক্ষী গৃহস্থের ঘরে প্রবেশ করবে।
ভক্তদের বিশ্বাস পূজার পর ওই রাতেই নাকি মা লক্ষী ঘরে ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন কে জেগে আছে। আর যে জেগে থাকে তার হাতে ধরিয়ে দেন ধন-সম্পদের পরিপূর্ণ ঝাঁপি খানি। এই সময় মাঠে মাঠে সবুজ ধান ক্ষেত হাওয়া লেগে ঢেউ খেলে যায়। বছর বছর যেন ধরণী, শস্য-শ্যামলা এবং সব রকম সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে, তার কামনাই করা হয় এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার রাতে।
অনেকের বিশ্বাস এই রাতে সারারাত জেগে দেবীর আরাধনা করা ও ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে সম্পদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। তাইতো আজও রীতি নীতি মেনে প্রতিটি বাঙালি হিন্দু ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে। মোটকথা ধন-সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা: আর্থিক সমস্যা দূর করতে এই কাজগুলি করুন
বিভিন্নভাবে লক্ষ্মী দেবীর কল্পনা:
ধন-সম্পদে দেবীকে বিভিন্নরূপে বিভিন্নভাবে কল্পনা করে তাকে সেইভাবে পূজিত করা হয়।
#১) মূর্তি: মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তি কে পূজা করা হয়।
#২) কলার বেড়
#৩) সপ্ত তরী
#৪) লক্ষ্মীর মুখ আঁকা পোড়া মাটির ঘট
#৫) লক্ষ্মীর পটচিত্র
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বাঙালি হিন্দুদের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে টাকা, পয়সা, ধন, নয়, সুচরিত্রও কিন্তু মানুষের মহাসম্পদ। টাকা কড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মী হীন, লক্ষ্মী চরিত্র নেই সেও তেমনি লক্ষীছাড়া।
যারা সাধক তারা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তি লাভের জন্য। লক্ষীর বাহন পেঁচা কেন! কেউ কেউ বলেন লক্ষীর দেওয়া ধন যখন অপব্যবহার করে তাদের কপালে লেখা আছে যমের দন্ড। এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
তাই কথাই বলে “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” এছড়াও ধনসম্পত্তি, সে টাকাই হোক বা চরিত্র সম্পদ জাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়, তাই রাতে সবাই যখন ঘুমায় তখন পেঁচা জেগে থাকে সেই ধন-সম্পদ পাহারা দেয়।
আর সেই কারণেই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার (Kojagari Lakshmi Puja) রাতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে সারা রাত জেগে বসে থাকতে হয় ধন সম্পদ বৃদ্ধির আশায়। এককথায় দেবী লক্ষ্মীর ঘরে আগমনের অপেক্ষায়।