সরস্বতী পূজা 2025: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Saraswati Puja 2025: History and Significance

2025 Saraswati Puja History & Significance, 2025 সরস্বতী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন সরস্বতী পূজা কেন পালন করা হয়? সরস্বতী পূজার বিধি কি? শিক্ষার্থীদের জন্য সরস্বতী পূজার গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

Saraswati Puja 2025 (সরস্বতী পূজা  2025): প্রত্যেকটি ছোট ছেলেমেয়েদের থেকে শুরু করে বড়দের কাছে এই সরস্বতী পূজা এক অন্যতম একটি উৎসব। সারা বছর এই পূজার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিটি মানুষ এই সরস্বতী পূজায় শামিল হয়ে থাকেন।

সরস্বতী পূজা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ থাকে বাচ্চাদের মধ্যে। স্কুল থেকে শুরু করে বাড়িতে এই পূজার মধ্যে তারাই বেশি আনন্দ উপভোগ করে থাকে। সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে। আর এই মাঘ মাসের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফল হল কুল। তবুও মনের দৃঢ় বিশ্বাস থেকে ছোটরা কখনোই সরস্বতী পূজার আগে সেই কুল দাঁতে ও কাটেনা।

Saraswati Puja History and Significance - সরস্বতী পূজা ইতিহাস
Saraswati Puja 2025 History and Significance – সরস্বতী পূজা ইতিহাস

কেননা সবাই চায় যে, পড়াশোনায় ভালো ফল করতে। যেহেতু সরস্বতী বিদ্যার দেবী, সেই কারণে দেবীকে প্রসাদ হিসেবে এই ফল অর্পণ করার আগে খাওয়া কোনো ভাবেই যাবেনা। এই বিশ্বাস প্রাচীনকাল থেকে আজও বিরাজমান।

এই সরস্বতী পূজা নিয়ে অনেকের মনে অনেক উৎসাহ থাকলেও চলুন তাহলে জানা যাক এ সরস্বতী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে:

মহা শিবরাত্রি ইতিহাস ও তাৎপর্য

সরস্বতী পূজার ইতিহাস 2025:

দেবী স্বরস্বতীর উত্থান:

কাহিনী ও পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেন। দেবী সরস্বতীর সমস্ত রকম সৌন্দর্য ও দীপ্তির উৎস হল ব্রহ্মা। পূজার দিন পূজার জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেতবস্ত্র অর্থাৎ সাদা রঙের কাপড় পরিধান করে থাকে, যা পবিত্রতার নিদর্শন বলে আমরা সকলেই জানি।

2025 সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

গুণের দেবী সরস্বতী:

অনেকের মুখেই শুনতে পাওয়া যায় যে, “রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী,” এমন কথা শুনতে পাওয়া যায়, তবে এক্ষেত্রে কিন্তু দেবী সরস্বতী নিজেই রূপে-গুণে সবদিক থেকে অদ্বিতীয়া। বিদ্যা, বুদ্ধি জ্ঞান সবকিছুতে তিনি সত্ত্বগুণময়ী।

তাছাড়া বাক শক্তির প্রতীক হিসেবে বাগদেবী নামে তিনি পরিচিত। ঋকবেদে দেবী সরস্বতীকে নদীর রূপে কল্পনা করা হয়েছে যিনি প্রবাহমান কর্মের দ্বারা বিশালতার অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন। সংগীত শিল্প এবং বিদ্যার দেবী হিসেবে তাঁর এক হাতে পুস্তক অথবা বই আর এক হাতে বীণা।

তাছাড়া পুরাণে কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক অসুর দেরকে বধ করার সময় দেবীর যে মূর্তি কল্পনা করা হয়েছিল তা ছিল এই মহা সরস্বতী দেবীর মূর্তি।

রাখি পূর্ণিমা ইতিহাস ও তাৎপর্য

দেবীর বাহন হাঁস:

আমাদের বাংলায় সরস্বতী পূজায় আমরা দেবীর দুটো হাত ও রাজহাঁসের পিঠে বসে আছে এমন মূর্তি দেখতে পাই। রাজহংস হল জলে এবং স্থলে এবং অন্তরীক্ষে অর্থাৎ সব জায়গাতেই হাঁসের গতি সমান। তেমনি জ্ঞান ও দক্ষতার গতি সব জায়গাতেই সমান ভাবে প্রকাশ পায়।

তাছাড়া জানা যায় যে একমাত্র রাজহাঁস জল ও দুধের পার্থক্য করতে পারে অর্থাৎ দুধে জল মিশিয়ে দিলে তার মধ্যে দুধ ও জল কে আলাদা করে দিতে পারে। আর সেই কারণেই জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রেও কিন্তু হাঁসের এই স্বভাব অনেকটাই তাৎপর্য বহন করে থাকে। সেক্ষেত্রে ভালো জ্ঞান গ্রহণ করা হোক, আর খারাপ কিছু বর্জন করা হোক।

স্বরস্বতীর অর্থ: 

সরস্বতী অর্থাৎ সরস্ – বতী = সরস্বতী এর অর্থ হল জ্যোতির্ময়ী। আবার সর শব্দের অর্থ হলো জল, সে ক্ষেত্রে যেখানে জল আছে সেটাই সরস্বতী।

সরস্বতীর পূজা 2025:

সরস্বতী পূজা প্রাচীনকালের বর্তমান স্বরসতী পূজার মত ছিলনা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকি কাঠের উপর তালপাতা, দোয়াত-কলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল।

কেননা বিদ্যার সমস্ত সরঞ্জাম যেমন বই-খাতা, কালির দোয়াত, খাগের কলম, তালপাতা যার উপরে প্রাচীনকালে লেখা হতো, সবকছুকে দেবী সরস্বতী হিসেবে মানা হতো। সেই কারণে প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এমনভাবে সরস্বতী পূজার প্রচলন ছিল।

তার সাথে সাথে ইংরেজি ভাষা সরস্বতী পূজার দিন কোনভাবেই পূজার ক্ষেত্রে রাখা হতো না অর্থাৎ ইংরেজি বইয়ের পূজা নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বরসতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।

রাধা অষ্টমী ইতিহাস ও তাৎপর্য

সরস্বতী পুজোর রীতি 2025:

প্রতিটি বিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা হয়ে আসছে অনেকদিন আগে থেকে। আবার এখন অনেকেই নিজের বাড়িতেই পূজা করে থাকেন। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝের দিকে সরস্বতী দেবী একজন মেয়ে হয়েও, সমাজের মেয়েরা অঞ্জলি দিতে পারত না।

এমন কিছু পন্ডিত এর মত অনুযায়ী সমাজপতিরা ভয় পেতেন যে, হয়তো এই সুযোগে ধর্মের নামে মেয়েরাও যদি দাবী করে বসেন যে, লেখাপড়া তাদেরকেও করতে দিতে হবে! এই লেখাপড়ার স্বাধীনতা যাতে তারা না চেয়ে বসেন সেই কারণে তাদেরকে এই পূজা থেকে দূরে রাখা হতো।

শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্ত বই পত্র কলম এবং বলতে গেলে যে সমস্ত বিদ্যার সরঞ্জাম রয়েছে সেগুলো সবই দেবীর পায়ের কাছে রেখে দেয়। পূজা যে ক’দিন থাকে অর্থাৎ দু-তিনদিন মত দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত। ছোটদের সব থেকে মজার দিন এই জন্য যে, সরস্বতী পূজার দিন কোনরকম পড়াশোনা করা চলবে না, এটা বড়রাও তাদেরকে বলে থাকেন।

সেক্ষেত্রে তাদের এই আনন্দের পাশাপাশি সেদিন পড়াশোনা করতে হবে না এবং আরো অন্যান্য আনন্দ তো রয়েছেই। সকলে পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে নিজের পড়াশোনা উন্নতি কামনা করে থাকেন। তার পরের দিন আবার সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে সেদিন দধিকর্মা নিবেদন করে পুজো সমাপ্ত করা হয়।

বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজার তাৎপর্য 2025:

আমরা সকলেই জানি যে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা হয়ে থাকে। দেবীর গায়ের রং সাদা, তার সাথে যে বস্ত্র পরিধান করে থাকে সেই বস্ত্রের রং সাদা, তার সাথে বাহন সাদা  রাজহংস। শুভ্র ও পবিত্রতার প্রতীক।

শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় কিভাবে! সেটা আমরা সবাই কমবেশি জেনে থাকবো, কেননা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয় হলো শিশুদের পরিবার। সেই পরিবারের থেকেই শিশুরা যে শিক্ষা পায়, সেই শিক্ষাই কিন্তু শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে। সেই কারণে একেবারে ছোট বেলা থেকেই ধর্মীয় আচার আচরনের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছোটদেরকে ধর্মীয় চেতনা দান করার জন্য সরস্বতী পূজার একটি অন্যতম উৎস কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

যেমন শৃঙ্খলা বোধ, সংযম পালন করা, সবকিছুর গভীর শিক্ষা দেয় এই পূজা। সরস্বতী পূজার দিন মাছ-মাংস একেবারেই খাওয়া চলবে না, তার সাথে আতপ চালের ভাত খাওয়া এমনকি পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্যে দিয়ে বাচ্চাদের মনের মধ্যে এক অনন্য বিশ্বাসের জন্ম হয়।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ইতিহাস ও তাৎপর্য

দেবী শুক্লবর্ণা অর্থাৎ গায়ের রং সাদা (তাৎপর্য): 

সত্ত্বগুণের প্রতীক হলো সাদা রং। আর পুরান মতে জানা যায় যে সাদা রং হল পবিত্র, স্বচ্ছতা ও নির্মলতার  প্রতীক। আর সেই কারণেই দেবী সরস্বতী যেহেতু জ্ঞানের দেবী, তাই স্বরস্বতীর গায়ের রং সাদা হয়।

শ্বেত রাজহংস (তাৎপর্য): 

দেবী সরস্বতীর বাহন হল শ্বেত রাজহংস। যেহেতু হাঁস জলে, স্থলে এবং সব জায়গাতেই থাকতে পারে সেই কারণে এর তাৎপর্য হিসেবে জ্ঞান কিন্তু সব জায়গাতে সমানভাবে তার জায়গা করে নেয়।

তাছাড়া রাজহংস দুধ ও জলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, সে ক্ষেত্রে ভালো কোন শিক্ষা গ্রহণ করা হোক আর খারাপ শিক্ষা বর্জন করা হোক। সুন্দর জ্ঞান এর মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত হোক সুন্দর পথে।

দেবী সরস্বতীর বীণা: 

এ কথাটা সত্যি যে যার জীবনের ছন্দ নেই, সুর নেই, তাল নেই, তার জীবনের কোন মানে নেই। “জীবন ছন্দময়”। বীণার সুন্দর ধ্বনিতে সেটাই প্রমাণ করে যে, মানুষের জীবনে সুর, তাল ও ছন্দের প্রয়োজন আছে।

তাছাড়া সাধারণ মানুষ অথবা বিদ্যার্থী যেই হোক না কেন, মুখ থেকে যে বাক্য বার হবে সেটা যেন সুমধুর হয় এবং তার মধ্যে দিয়ে জীবন যেন আরো সুমধুর ও সঙ্গীত ময় হয়ে ওঠে। আর সেই কারণেই দেবীর হাতে বীণা থাকে, আর সেই কারণে দেবীর আরেক নাম বীণাপাণি।

পুস্তক অথবা বই:

সরস্বতী পূজার দিন সকলেই কিন্তু দেবীর পায়ের কাছে বই দিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করে থাকেন। বিদ্যার্থীর লক্ষ্য জ্ঞান, শিক্ষা অর্জন করা। আর সেই জ্ঞান বিদ্যার জন্য সরস্বতী দেবীকে নিষ্ঠা ভরে পূজা করে থাকেন। তাছাড়া একটি সুন্দর বই একটি সুন্দর জীবন দান করতে পারে। আর সেই অনুসারে বই অথবা পুস্তক জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র রাখে। সত্যকে আপন করতে এবং মিথ্যাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। জীবন স্বচ্ছন্দে কাটানোর জন্য সুন্দর বইয়ের অনুদান অনেকটাই।

সরস্বতী পূজার দিন একাগ্রচিত্তে বিদ্যার্থীরা মন্ত্র উচ্চারণ এর পাশাপাশি পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে থাকেন দেবী সরস্বতীকে। তার সাথে সাথে নিরামিষ বিভিন্ন রকমের সবজি দিয়ে খিচুড়ি, বেগুন ভাজা এবং চাটনি তো রয়েছেই। সরস্বতী পূজার এই খুশি ও আনন্দ সারা বছর ধরে বয়ে বেড়ানোর পর অপেক্ষার অবসান ঘটে এক বছর পরে।

এদিন কিন্তু সাজসজ্জা সম্পন্ন করে কোন বিদ্যার্থী  ঘরে বসে থাকেন না। এই পূজা কখনোই কেউ ফাঁকি দিয়ে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন না। জ্ঞানচর্চার উৎসব সরস্বতী পূজা। শীতের আমেজে এই উৎসব বাঙালির মনে মনে আনন্দের ঢেউ দুলিয়ে যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top