রাখি পূর্ণিমা 2024 (Rakhi Purnima 2024 Date Time and Significance) 2024 রাখি পূর্ণিমার ইতিহাস এবং জানুন রাখি পূর্ণিমা কেন পালন করা হয়? রাখি পূর্ণিমার তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য রাখি বন্ধনের গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
ভারতে রাখি পূর্ণিমা অথবা রাখি বন্ধনের নাম শোনেন নি এমন মানুষ খুবই কম আছে। তাছাড়া ভাই বোনের মধ্যে যে দৃঢ় ভালোবাসার বন্ধন সেটা এর রাখি পূর্ণিমা অথবা রাখি বন্ধনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পায় অনেকখানি। ভারতে খুব বড় করে পালন করা হয় এই রাখি বন্ধন উৎসব। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়।
আমরা সকলেই জানি যে, ভাই আর বোনের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন এই রাখির সুতোয় বেঁধে রাখার একটা রীতি অনেকদিন আগে থেকে চলে আসছে। তাই ছোট থেকে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি পরিয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে।
তবে শুধু শুধু এই রাখি বাঁধার নিয়ম আসেনি। নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন না কোন ইতিহাস তো আছে, তাই না ! তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই রাখি পূর্ণিমা অথবা রাখি বন্ধন উৎসবের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে।
রাখি বন্ধনের ইতিহাস 2024:
এই রাখি বন্ধন উৎসব নিয়ে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত কাহিনী আমরা শুনতে পাই। তাছাড়া রাখি বন্ধন উৎসবে ভাই বোনের মধ্যে স্বর্গীয় সম্পর্ক উদযাপন করাকে বোঝায়। এটা নিয়ে প্রচলিত একটি জনপ্রিয় কাহিনী হল দ্রৌপদী ও শ্রীকৃষ্ণের একটি কাহিনী। এক্ষেত্র বলা যেতে পারে একটি আকর্ষণীয় ঘটনা রাখির তাৎপর্য এবং ইতিহাসকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।
2024 শুভ রাখি বন্ধন শুভেচ্ছা বার্তা
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
জানা যায় যে, রাজসূর্য যজ্ঞ করার পর রাজা যুধিষ্ঠির তার সাম্রাজ্যের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থকে রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর পাণ্ডব ভগবান কৃষ্ণকে তাদের সমর্থন ও আশীর্বাদ করার জন্য ধন্যবাদ জানানোর ক্ষেত্রে আমন্ত্রণ করা হয়।
এরপর প্রতিবেশী সমস্ত রাজ্যের রাজা ও আরো অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের ভাই অর্থাৎ পরিবার এর মধ্যে একজন ভাই শিশু পাল। শিশুপাল কৃষ্ণের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং যুধিষ্ঠিরের দরবারে তাকে অপমান করেন।
শিশু পাল পাপের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য শ্রীকৃষ্ণ তার সুদর্শন চক্র ছেড়ে দেন শিশুপালের দিকে। চক্রটি তীব্র গতিতে শ্রীকৃষ্ণের হাতে যখন ফিরে আসে তখন তার আঙুল কেটে যায়।
কেটে যাওয়ার পর কৃষ্ণের হাত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে, এই অবস্থায় দ্রৌপদী তার কাপড়ের একাংশ ছিঁড়ে শৈশব কালের বন্ধু অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের সেই কেটে যাওয়া হাতে অর্থাৎ ক্ষতস্থানে বেঁধে দিয়েছিলেন। এই ঘটনা দ্রৌপদীকে আশীর্বাদ লাভ করিয়ে দেয়।
আর তাইতো পান্ডব রা যখন দ্রৌপদী কে অপমান করার জন্য বস্ত্রহরণ করছিলেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ বস্ত্র প্রদান করে বাঁচিয়েছিলেন অর্থাৎ শত্রুদের হাত থেকে দ্রৌপদী কে নিরাপত্তা দেন শ্রীকৃষ্ণ।
রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয় কেন?
ভাই আর বোনের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধনকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে এই রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। বোন ভাইয়ের হাতে পবিত্র সুতো যাকে রাখি বলা হয় সেটা বেঁধে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে থাকে।
ভাইয়ের সুরক্ষা ও বোনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন রকমের রীতিনীতি পালনের মধ্যে দিয়ে ভাইয়ের ডান হাতে এই সুন্দর রাখি পরানো হয়। অনেকে নিজের হাতে ফুল দিয়ে রাখি তৈরি করেন আবার বাজারে এমন অনেক সুন্দর সুন্দর রাখি কিনতেও পাওয়া যায়।
রাখি কত সময় পর্যন্ত পরে থাকা যেতে পারে?
অনেক ভাই বোনের মধ্যে দেখা যায়, ভাই খুবই ছোট্ট কিন্তু যখন বোন তার হাতে সুন্দর একটা ফুলের রাখি পরিয়ে দেয় তখন সে কখনোই খুলতে চায় না। সেটা তার খুবই ভালো লাগে। সেই কারণে রাখি পরে থাকার কোনোরকম নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ এমন কিছু কোথাও উল্লেখ করা নেই।
এই উৎসবের পর ভাইয়েরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যখন খুশি রাখি খুলে ফেলতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় কাজের ক্ষেত্রে বড় ভাইয়েরা খুব তাড়াতাড়ি রাখি খুলে ফেলতে পারেন। আবার ভালোলাগার পর ছোট্ট ভাইয়েরা সেই রাখি অনেকক্ষণ পর্যন্ত পরে থাকতে পারে সেটা বলতে গেলে দু-তিন দিনও হয়ে যায়।
রাখি বন্ধন উৎসবে রাখি বাঁধার রীতি কি ?
ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ভাইয়ের কপালে প্রথমে তিলক দিতে হয়। এরপর চাল দিয়ে আশীর্বাদ করতে হয় এরপরে ভাই তার মাথা কোন কাপড় দিয়ে ঢাকবে এরপর গোটা নারকেল ভাইকে উপহার হিসেবে দেয় বোন।
এরপর বোন ভাইকে রাখি পরিয়ে থাকে। এই রীতির পর বোন ভাইকে মিষ্টি খাওয়াবে এবং সব ধরনের ক্ষতিকর জিনিস থেকে ভাই কে রক্ষা করার জন্য আরতি করবে।
তবে বর্তমানে এমন রীতিনীতি প্রায় সময় দেখা যায় না বললেই চলে, অর্থাৎ সুন্দর রাখি সরাসরি ভায়ের হাতে পরিয়ে দিয়ে তার মঙ্গল কামনায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করাটাই এখন বোনেদের কাছে মূল বিষয়।
রাখি পূর্ণিমা অথবা রাখি বন্ধনের তাৎপর্য:
রাখি বন্ধনের মূল তাৎপর্য হলো কারো সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করা সেটা ভাই বোন এর মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। রাখি অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোন ভাইয়ের ডান হাতে রাখি পরিয়ে তাকে সমস্ত রকম বিপদ ক্ষতিকর জিনিস থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডার ভারত বর্ষ আক্রমণের জন্য রওনা হওয়ার সময় আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা মহাপুরুষ মহারাজা পুরু কে একটি রাখি স্বরূপ সুতো পাঠিয়েছিলেন যাতে পুরুরাজার কাছে আলেকজান্ডারের কোনরকম ক্ষতি না হয় সেই অঙ্গীকার প্রার্থনা করে।
মহারাজা পুরু ছিলেন একজন কটোচ হিন্দু রাজা। তাই তিনি রাখিকে সম্মান করতেন, আর রাজাপুরূ আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানার পাঠানো রাখির সম্মান রাখতে যুদ্ধক্ষেত্রে আলেকজান্ডার কে নিজে একবারের জন্যও অস্ত্রের আঘাত করেন নি। এ থেকে বোঝা যায় যে রাখি সুরক্ষা প্রদান করার জন্য বাঁধা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসব:
দিন ক্ষণ তারিখ বিবেচনা করে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয় শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। তবে এছাড়াও সকলের মধ্যে ভাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকল দেশবাসীকে রাখি বন্ধন উৎসবে আহবান জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তখনকার দিনে ঠাকুরবাড়ির ছেলেরা রাজ আদব কায়দায় গাড়ি চড়তো। কিন্তু ঠাকুর পরিবারের ছেলেদের মাটিতে পা ফেলা ছিল একেবারে অসাধ্য সাধন।
জাতী, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবাইকে রাখি পরিয়ে একে অপরের প্রতি ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, দায়িত্ববোধ, সুরক্ষা প্রদান করা সবকিছু সবার মনে জায়গা দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাখি বন্ধন উৎসবে হিন্দু ও মুসলমান সকলেই রাখি বন্ধনের সৌভ্রাতৃত্বের আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। তখন কিন্তু কোনরকম রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটেনি, সবার মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধন এর দিনক্ষণ বিশেষভাবে উল্লেখ না থাকলেও শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই যে রাখি বন্ধন উৎসব প্রতিটি ভাই বোনের সুন্দর সম্পর্ককে আরো বেশি মজবুত করে তুলতে সাহায্য করে।
সকাল থেকে উৎসাহ ও আগ্রহে ভাইকে রাখি পরানোর আনন্দে বোনেরা অপেক্ষা করে থাকে। এই দিন টি অনেকের বাড়িতে খুবই ধুমধাম ভাবে অনুষ্ঠিত হয় অর্থাৎ পূজা পার্বণ, রান্না, খাওয়া সবকিছু জাঁকজমকপূর্ণ হয়। তবে শুধুমাত্র দামি রাখিই নয়। সুতোর রাখি হলেও গরিব ভাই বোনদের রাখি বন্ধনের উৎসব যে কতটা সুমধুর তা কিন্তু চোখে পড়ার মতো।
Amar kacha bari