রাধা অষ্টমী 2023 (Radha Ashtami 2023 Date Time and Significance) 2023 রাধা অষ্টমী ইতিহাস এবং জানুন রাধা অষ্টমী কেন পালন করা হয়? রাধা অষ্টমী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য রাধা অষ্টমী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।
শ্রীকৃষ্ণের সাথে অঙ্গা অঙ্গী ভাবে জড়িত যে নাম টি সেটি হল রাধা। জন্মাষ্টমীর পাশাপাশি রাধা অষ্টমী ও খুবই জনপ্রিয় একটি উৎসব। ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে রাধা জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং এই দিনটি সমস্ত দেশ জুড়ে পালন করা হচ্ছে রাধা অষ্টমী উৎসব হিসাবে।
জন্মাষ্টমী হলো হিন্দুদের অন্যতম প্রধান উৎসব, গোকুলে দেবকীর অষ্টম গর্ভে ভাদ্র মাসে কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টম দিনে বা অষ্টম তিথিতে জন্ম হয় কৃষ্ণের। তবে তার পর পরই এই তিথির মাহাত্ম্য বৃদ্ধি পায় অনেক বেশি। এই তিথির আরেক নাম হলো গোকুল অষ্টমী।
এই জন্মাষ্টমীর কয়েক দিন পরেই পালন করা হয় শ্রীমতী রাধিকার জন্মতিথি উৎসব, যেটা ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালন করা হয়। এই দিনে রাধা জন্মগ্রহণ করেন এবং সারাদেশ জুড়ে পালন করা হয় এই দিনটি রাধা অষ্টমী উৎসব হিসেবে।
রাধা অষ্টমীর ইতিহাস 2023:
শাস্ত্র মতে জানা যায় যে, কৃষ্ণের জন্মদিনের ১৫ দিন পর শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে মথুরায় পবিত্র বাসনায় রাজা বৃষ ভানু এবং তার স্ত্রী কীর্তিদা স্বর্ণ পদ্ম এর উপর রাধা কে পেয়েছিলেন। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে রাধা অষ্টমীর দিন উপবাস রাখলে এবং রাধিকার আরাধনা করলে জীবনের সুখ শান্তি বজায় থাকে। এই রাধা অষ্টমী পূজোর কিছু নিয়মও রয়েছে। নিষ্ঠা ভরে যদি রাধা অষ্টমীর পূজা করা যায়, তাহলে জীবনের সমস্ত দুঃখ দুর্দশা দূর হয়ে যায়।
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন
পদ্ম পুরানে রাধাষ্টমীর পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, বহু বহু কাল আগে সূর্যদেব একটি পৃথিবী ভ্রমণ করতে এসে পৃথিবীর রূপ, সৌন্দর্য এবং অনাবিল আনন্দ এর ছবি দেখে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং মন্দার পর্বতের গুহায় গভীর তপস্যায় মগ্ন হন। এইভাবে অনেকদিন চলে যায়, সূর্যের অনুপস্থিতিতে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পৃথিবীবাসী হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ।
2023 রাধা অষ্টমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
সূর্যের আলো ছাড়া পৃথিবী কোনো ভাবেই বাঁচতে পারে না। তখন বাধ্য হয়ে ভীত – সন্ত্রস্ত স্বর্গের দেবতারা শ্রী হরির শরণাপন্ন হন সাহায্যের জন্য। শ্রী হরি অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণু তাদের সকলকে আশা দিয়ে ফিরে যেতে বলেন। তারপর মন্দার পর্বতের গুহায় তপস্যারত সূর্যের সামনে গিয়ে তিনি উপস্থিত হন।
সূর্যদেব খুবই আনন্দিত হয়ে বলেন যে, শ্রী হরির দর্শন পেয়ে তার এতদিনের তপস্যা সার্থক হয়েছে। সূর্যদেবের সাধনায় তুষ্ট হয়ে শ্রী হরি তাকে বর দিতে চাইলে সূর্যদেব বলেন যে, আমাকে এমন একটি গুণবতী কন্যার বর প্রদান করুন, যার কাছে আপনি চিরকাল বশীভূত থাকবেন।
শ্রী হরি সূর্যদেবকে সেই বর প্রদান করেছিলেন এবং বলেছিলেন পৃথিবীর ভার কমানোর জন্য আমি বৃন্দাবনের নন্দালয়ে কৃষ্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করব। তুমি সেখানে বৃষ ভানু রাজা হয়ে জন্মাবে। আর তোমার কন্যা রুপে জন্মগ্রহণ করবে রাধা।
এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রীরাধিকারই বশীভূত থাকবো। রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে কোন প্রভেদ থাকবে না। সকলকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা আমার আছে, কিন্তু এই জগত সংসারে একমাত্র রাধিকাই আমাকে আকর্ষণ করতে পারবে। সেইমতো প্রতিশ্রুতি অনুসারে মর্ত্যের নন্দা লয়ে জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণ। সূর্যদেব বৈশ্য কুলে জন্মগ্রহণ করেন বৃষভানু রাজা হয়ে।
তারপর সময় মতো ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষে অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর বুক পবিত্র করে কীর্তিদার গর্ভে রাধা জন্ম গ্রহণ করেন। রাধার এই আবির্ভাব তিথিকেই রাধা অষ্টমী বলা হয়। যেটা তার জন্মদিন হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে।
আবার লোককথা অনুসারে আরো একটি কাহিনী রয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে যে, প্রাচীনকালে একদিন রাজা বৃষ ভানু নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু স্নানের জন্য জলে নামতেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, শত সহস্র সূর্যের আলোকের মতো জ্যোতির্ময় একটি স্বর্ণপদ্ম ঠিক যেন যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে আছে। এরপর রাজা বৃষভানু লক্ষ্য করলেন যে সেই স্বর্ণপদ্মের মধ্যে একটি শিশু কন্যাও রয়েছে।
তিনি অবাক হয়ে গেলেন, ঠিক তখনই ভগবান ব্রহ্মা এসে রাজাকে জানালেন যে, রাজা বৃষভানু ও তার পত্নী কীর্তিদা পূর্ব জন্মের ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যা রূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তাই সেই ফলস্বরূপ এই জন্মে রাজা স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যা রূপে পেয়েছেন।
এরপর রাজা শিশু কন্যাকে নিয়ে এসে তার স্ত্রী কীর্তিদার হাতে তুলে দেন এবং রাজার অন্দরমহল সহ সমস্ত রাজ্যে আনন্দের উৎসব লেগে গেল। রাজা উৎসবের আয়োজন করলেন সমগ্র বৃন্দাবন খুশিতে ভরে উঠল নতুন সদস্যের আগমনে। সেই উৎসবে নন্দ মহারাজ শিশু কৃষ্ণকে নিয়েও সপরিবারে এসেছিলেন রাধা অষ্টমীর উৎসবে।
ওই অনুষ্ঠানের শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারানীর কাছে গিয়েছিলেন সেই মুহূর্তে রাধারানীর চোখ খুলে প্রথম দেখলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। তার এই আবির্ভাবের দিনটি রাধাষ্টমী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
রাধা অষ্টমী পূজার বিধি 2023:
- খুব সকালে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার কাপড় পরে ঠাকুর ঘরে গঙ্গা মাটি দিয়ে একটি গোলাকার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।
- তার মধ্যে একটি তামার পাত্র অথবা মাটির ঘট রেখে বা তামার ঘট রেখে তার উপরে রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ বা ছবি স্থাপন করতে হবে।
- এবার সবার আগে রাধাকে ধুপ, দীপ, ফলের নৈবেদ্য অর্পণ করে উপবাসের সংকল্প করতে হবে।
- নির্জলা উপবাসে অসমর্থ হলে অর্থ যদি আপনি না করতে পারেন, তাহলে ফল আহার করতে পারেন।
- এই পৃথিবীতে পূন্য লগ্নের মধ্যে ফুল, নতুন কাপড়, আতপ চাল, সিঁদুর, মিষ্টান্ন, ফল, দিয়ে রাধার পুজো করতে হয়।
রাধা অষ্টমীর তাৎপর্য 2023:
হিন্দু সমাজে রাধা অষ্টমী খুবই মহাসমারোহে পালন করা হয়। ভাগবত পুরাণে বর্ণিত আছে যে, কোন ব্যক্তি যদি একবার অন্তত এই রাধাষ্টমীর ব্রত পালন করে থাকেন, তাহলে তার কোটি জন্মের ব্রহ্ম হত্যার পাপ ক্ষয় হয়। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন যে, শত শত একাদশী ব্রত পালনের যে পূণ্য ফল অর্জন করা যায়, একটি রাধা অষ্টমীর ব্রত পালন করলে তার থেকেও বেশি পূণ্য লাভ করা যেতে পারে।
তবে বলা যায় যে, রাধার সঙ্গে সম্মিলিত রূপে থাকলে তবেই কৃষ্ণের নামের আগে শ্রী সম্মোধন যুক্ত হয়। তাই যারা কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত উদযাপন করেছেন তারা যদি রাধাষ্টমী ব্রত পালন না করেন তবে পূণ্য ফল লাভ কিন্তু করতে পারবেন না। কেননা শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন যে, কৃষ্ণ আর রাধার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সেই কারণে যদি সম্পূর্ণ পূণ্য লাভ করতেই হয়, তাহলে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর সাথে সাথে রাধা অষ্টমীর ব্রতও অবশ্যই পালন করবেন।
কোন কোন জায়গায় রাধা অষ্টমী ব্রত পালন করা হয়:
ভারতের মথুরা, দ্বারকা, বৃন্দাবন, পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত মায়াপুর, শান্তিপুর, নবদ্বীপ, ইত্যাদি জায়গায় কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উদযাপনের পাশাপাশি খুবই জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে রাধা অষ্টমী উৎসব ও পালন করা হয়। বৈষ্ণব মন্দির গুলিতে এই দিন ভজন, কীর্তন, কথা পাঠ, সহ শ্রী রাধার মঙ্গল আরতি করা হয়।
রাধা অষ্টমী ব্রত চলাকালীন ভক্তেরা অর্ধেক দিন পর্যন্ত নির্জলা উপবাসে থাকেন। এই দিনটির আরেকটি তাৎপর্য আছে হিন্দু রীতিতে বহু হিন্দু ভক্ত জন্মাষ্টমীর দিন হিমাচল প্রদেশের মনি মহেশ হ্রদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। রাধা অষ্টমীর দিন সেখানে পৌঁছায় শৈব আরাধনার লক্ষ্য নিয়ে, একেই মনিমহেশ যাত্রা বলে।