স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Swami Vivekananda Jayanti 2024: History and Significance

স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী 2024 (Swami Vivekananda Jayanti 2024 Date Time and Significance) 2024 স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী ইতিহাস এবং জানুন স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী কেন পালন করা হয়? স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী তাৎপর্য কি? ভারতীয়দের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী গুরুত্ব কতটা? জানুন সবকিছু এখানে।

স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম তিথি উপলক্ষে এই জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, লেখক, দার্শনিক এবং উনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতিন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রধান শিষ্য। ১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।

স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য - Swami Vivekananda Jayanti History and Significance
2024 স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য – 2024 Swami Vivekananda Jayanti History and Significance

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হিন্দু ধর্ম তথা ভারতীয় বেদান্ত ও যোগ দর্শনের প্রচারের প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অনেকেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে বিভিন্ন ধর্ম মতের মধ্যে পারস্পরিক সুখ সম্পর্ক স্থাপন করা এবং হিন্দু ধর্মকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে প্রচার করার কৃতিত্ব বিবেকানন্দকে দিয়ে থাকেন।

ভারতের হিন্দু পুনর্জাগরণে তিনি ছিলেন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। সেইসঙ্গে ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেছিলেন। বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী 2024:

তো চলুন তাহলে, এই স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী সম্পর্কে একটু জানা যাক: 

  • আসল নাম: নরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তিনি স্বামী বিবেকানন্দ হিসাবেই পরিচিত
  • জন্ম: ১৮৬৩ সালের ১২ ই জানুয়ারি কলকাতা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত বর্তমানে কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় প্রজাতন্ত্র
  • জাতীয়তা: তিনি ভারতীয়
  • প্রতিষ্ঠাতা: রামকৃষ্ণ মিশন, রামকৃষ্ণ মঠ
  • গুরু: রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
  • দর্শন: অদ্বৈত বেদান্ত, রাজযোগ, সাহিত্যকর্ম, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, মদীও আচার্যদেব, ভারতে বিবেকানন্দ,
  • বিশিষ্ট শিষ্য: বিরজানন্দ, পরমানন্দ, অশোকানন্দ, আলাসিংগা পেরুমল, অভয়ানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, সদানন্দ
  • উদ্ধৃতি: ওঠো জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমে যেও না

স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতা একটি উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি ছিলেন ভীষণভাবে আকৃষ্ট। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভু। তাই মানুষের সেবা করলে ঈশ্বরের সেবা করা যায়, সেই কারণেই তো বলা হয় যে, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে বেড়িয়ে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন।

প্রজাতন্ত্র দিবস ইতিহাস ও তাৎপর্য

স্বামী বিবেকানন্দের রচিত গ্রন্থ:

স্বামী বিবেকানন্দের রচিত গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভারড বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদান্ত, ভারতের বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, ইত্যাদি।

এটি জ্ঞান সত্য যে স্বামী বিবেকানন্দ সমস্ত বয়সের যুবকদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এবং তার দ্বারা তাদেরকে আত্মবিশ্বাস এর মধ্যে প্রেরিত করার জন্য প্রাচীন যুগের বৈদিক জ্ঞানকে একটি আধুনিক আবরণে আবৃত করেছিলেন তিনি। তাইতো তার মৃত্যুর এত বছর পরেও তার শিক্ষা গুলি প্রত্যেকেই অনুসরণ করে চলেছেন।

বিবেকানন্দ ছিলেন একজন সাধারণ ছাত্র:

স্বামী বিবেকানন্দের কথা গোটা বিশ্ব জানে। তার বক্তৃতা এবং তার বাণীর জন্য তাকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু আপনি কি জানেন ! যে তিনি ছিলেন একজন খুবই সাধারণ ছাত্র।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা স্তরের পরীক্ষাতে মাত্র ৪৭ শতাংশ FA – তে ৪৬ শতাংশ (যা পরবর্তীতে পরীক্ষাটি ইন্টারমিডিয়েট আর্টস অথবা আই এ / IA হয়ে যায়) এবং বিএ পরীক্ষায় তিনি ৫৬ শতাংশ পেয়ে পাশ করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

স্বামী বিবেকানন্দ ছিল তাঁর একটি অর্জিত নাম: 

তিনি নরেন্দ্রনাথ দত্ত হিসেবেই ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন। তবে সন্ন্যাসী হওয়ার পরে তিনি যে নামটি গ্রহণ করেছিলেন সেটাই ছিল স্বামী বিবেকানন্দ।

তাছাড়া তার মা তাকে বীরেশ্বর নামে ডাকতেন এবং ছোটবেলায় তাকে বিলে বলেও ডাকা হতো। পরে তার নাম রাখা হয়েছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।

স্বামী বিবেকানন্দের পরিবারে ছিল অভাব অনটন: 

পিতার মৃত্যুর পরে স্বামীজীর পরিবার চরম দারিদ্র্যতা তে ভুগছিল। তখন একদিনের খাবার যোগাড় করতেই তাদের অনেক কষ্ট করতে হতো।

প্রায়ই দেখা যেত স্বামী জী খাবার খেতেন না, যাতে পরিবারের আরো অন্যান্য সদস্যরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারে।

স্বামী বিবেকানন্দ এর বিষয়ে একটি গোপন তথ্য: 

খেতির মহারাজা অজিত সিংহ স্বামী বিবেকানন্দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং শিষ্য ছিলেন। তিনি তার আর্থিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য নিয়মিত স্বামীজীর মায়ের কাছে ১০০ টাকা পাঠাতেন। আর এটি ছিল খুবই গোপনীয় বিষয়। যা কেউই জানতেন না।

স্বামী বিবেকানন্দের পানিয়র প্রতি প্রেম:

চায়ের প্রতি বিবেকানন্দের খুবই প্রেম ছিল। যখন হিন্দু পণ্ডিতরা চা পান করার বিরোধিতা করেছিলেন, ঠিক তখনই তিনি তার আশ্রমে চা প্রবর্তন করেছিলেন।

স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু:

বলা যেতে পারে যে, স্বামী বিবেকানন্দ নিজের মৃত্যুর তারিখ নিজেই বলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে জুলাই মাসের চার তারিখে তিনি মারা যাবেন। আর সত্যিই এমনটাই ঘটেছিল, ১৯০২ সালে ৪ ঠা জুলাই তিনি মারা যান।

রামকৃষ্ণ জয়ন্তী ইতিহাস ও তাৎপর্য

স্বামী বিবেকানন্দ মারা যাওয়ার আগে খুবই অসুস্থ ছিলেন: 

আমরা আগেই জানলাম যে, পরিবারে দারিদ্রতা থাকার জন্য অন্যান্য সদস্যদের ভালোভাবে খাবার জোটানোর ক্ষেত্রে তিনি বেশিরভাগ সময় না খেয়েই কাটিয়ে দিতেন। তবে তার মৃত্যুর পর জানা যায় যে, প্রখ্যাত বাঙালি লেখক শঙ্করের রচিত দ্যা মঙ্ক অ্যাজ ম্যান বইটি অনুসারে স্বামী বিবেকানন্দ মৃত্যুর আগে ৩১ টি রোগে ভুগছিলেন।

সেই বইতে এমন একত্রিশ টি রোগের মধ্যে যেগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন:- লিভার ও কিডনির রোগ, অনিদ্রা, মাইগ্রেন, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস এবং হার্টের অসুস্থতা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। এমনকি তিনি হাঁপানি রোগেও ভুগতেন, যা তার জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছিল।

স্বামী বিবেকানন্দ যুবকদের অনুপ্রেরণা বলা যায়। তিনি তার অমৃত বাণী দিয়ে তাদের জীবনকে শুধরে নেওয়ার অবকাশ দিয়েছেন। তো চলুন তাহলে স্বামী বিবেকানন্দের কিছু অমৃত বাণী সম্পর্কে জানা যাক:-

চরিত্র গঠন করার জন্য ধীর ও অবিচলিত যত্ন এবং সত্য উপলব্ধির জন্য তীব্র প্রচেষ্টায় কেবল মানবজাতির ভবিষ্যৎ জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

মানুষ মূর্খের মতো মনে করে স্বার্থপর উপায়ে সে নিজেকে সুখী করতে পারে। বহুকাল চেষ্টা পর অবশেষে বুঝতে পারে প্রকৃত সুখ স্বার্থপরতার নাশে, এবং সে নিজে ব্যতীত অপর কেওই তাকে সুখী করতে পারে না।

দর্শন বর্জিত ধর্ম কুসংস্কারে গিয়ে দাঁড়ায় আবার ধর্ম বর্জিত দর্শন শুধু নাস্তিকতায় পরিণত হয়। আমাদের নিম্ন শ্রেণীর জন্য কর্তব্য এই যে কেবলমাত্র তাদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের বিনষ্ট প্রায় ব্যক্তিত্ববোধ জাগিয়ে তোলা।

জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।

তিনি মানুষের কল্যাণে তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। তাইতো তিনি সংসার ধর্মকে প্রাধান্য না দিয়ে সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করে সমগ্র বিশ্ব পরিক্রমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং সমস্ত জায়গায় তার বক্তৃতার মাধ্যমে অমৃত বাণী প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। আর সেই কারণে আজও জগৎবাসী তাকে এক নামে, স্বামী বিবেকানন্দ নামেই চেনে।

তারই জন্ম তারিখ উপলক্ষে তার জন্মবার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করার মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দ জয়ন্তী পালন করা হয়। এই দিনে তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানানো এবং এমন একজন মানুষকে আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে পাওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে থাকি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top