জ্বর সর্দি কাশি এখন যেন বর্তমানে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বড় থেকে ছোট সকলের শরীরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা।
এমন অবস্থায় আপনার ছোট্ট সোনাকে সুস্থ রাখতে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দিকে খেয়াল দিতে হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ালে এ সমস্ত ভাইরাস তাদের শরীরের আশেপাশেও আসতে পারবেনা।
শিশুদের প্রতিদিনের খাবার:
শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারা প্রতিদিন কি খাবার খাচ্ছে তার উপর, অর্থাৎ তাদের দৈনিক খাদ্য তালিকা তে কোন কোন খাবারগুলি থাকছে সেগুলিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শুধু বাচ্চা বলেই নয়, সকল মানুষের জীবনে এটাই কিন্তু মূল মন্ত্র।
যত বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যাবে, ততই সুস্থ থাকা যাবে এবং শরীরে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শিশুকে প্রতি পদে পদে রক্ষা করতে প্রতিদিন কয়েকটি খাবার তার খাদ্য তালিকা তে অবশ্যই রাখতে হবে।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলি প্রতিদিন তাদের অল্টারনেট করে খাওয়ানো যেতে পারে:
অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, প্রতিরোধের সঠিক উপায়
১. ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার:
ভিটামিন সি আমাদের শরীরে অনেক পুষ্টির অভাব মিটিয়ে থাকে। এছাড়া ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার সাথে সাথে ইমিউনিটি পাওয়ারটাকেও বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে। ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ মাত্রই, ইমিউনো সিস্টেমের খেয়াল রাখতে সক্ষম ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও বিভিন্ন রকমের শাক সবজি।
এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাইট্রাস ফল। যেমন ধরুন কমলালেবু, বিভিন্ন ধরনের লেবু, বেরি জাতীয় ফল, কিউই ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা করে।
২. গরম স্যুপ জাতীয় খাবার:
একটি বড় বাটির গরম স্যুপ আপনার শরীরকে নিমেষে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে সন্তানকে স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে। যদি আজ সবজির স্যুপ বানিয়ে দেন, তবে পরের দিন তার জন্য চিকেন স্যুপ বানিয়ে দিন। এটি তার পছন্দ হওয়ার পাশাপাশি খাওয়ার প্রতি বাড়বে তাদের আগ্রহ আর আপনার কাছে বিভিন্ন ধরনের স্যুপ খাওয়ার জন্য বায়না করবে।
এর ফলে যেমন তার পেট ভরবে, তেমনি সবজি ও চিকেনের গুনে তাদের শরীরে বাড়বে ইমিউনিটি পাওয়ার। সহজ পাচ্য হওয়ার জন্য এটি কোনভাবেই হজমের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। শিশুদের পেট খুবই নরম হয় তাই খুব সহজে হজম হয়ে যাওয়ার ফলে এটি তাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
৩. সবুজ শাকসবজি:
খাবারের তালিকাতে সবুজ শাক সবজি রাখাটা শুধু আজকের দিনে নয়, অনেক প্রাচীনকাল আগে থেকে এটি যেন শরীরের জন্য এক মহা ঔষধ। বিভিন্ন ধরনের সবুজ রঙের শাকসবজি আপনার সন্তানকে খাওয়াতে পারেন। আর এই সময়ে সন্তানকে যত পারবেন সবুজ শাকসবজি খাওয়াতে হবে।
সবজির স্যুপ, সবজি সিদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন, হালকা মসলা দিয়ে রান্না করেও খাওয়াতে পারেন, এছাড়া ভাতের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে ব্লেন্ডিং মেশিনে ব্লেন্ড করে স্মুদি হিসেবেও খাওয়াতে পারেন।
বাচ্চাদের জন্য যত বেশি নরম ভাবে এই গুলি তৈরি করতে পারবেন ততই তারা খেতে ভালবাসবে, আর হজম করতেও সুবিধা হয়। তার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন পুষ্টির অভাব মিটিয়ে থাকে।
৪. দই:
যেকোনো ধরনের দই শরীরের জন্য ভালো। তবে টক দই বেশি ভালো। দই একটি অত্যন্ত ভালো প্রোবায়োটিক। যেকোন ফ্লু অথবা ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে এই খাবারটি বিশেষভাবে সহযোগী সকল বয়সীদের জন্য।
এছাড়া দই প্রোটিনের দারুন একটি উৎস। মানে বাচ্চার পুষ্টি নিয়ে কোনরকম চিন্তা করতে হবে না। প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে তাদের একটু পরিমান দই খাওয়াতে পারলে সব সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
৫. আদা-রসুন:
আমরা সাধারণত রান্নাতে ব্যবহার করে থাকি, তবে এটিও যে কাঁচা খাওয়া যায় সেটা আমরা অনেকেই কমবেশি জানি। এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে আদা, রসুন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ঠান্ডা লাগা, বুকে সর্দি জমে যাওয়া, কাশির মতো সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য এই আদা রসুন ওষুধের মত কাজ করে।
আবার রসুনের এন্টিভাইরাস ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে একেবারে সবার উপরে। তাই যেকোন ভাবে শিশুদের খাবারে আদা রসুন রাখতে ভুলবেন না। এছাড়া রসুন খাবারের সাথে দিতে পারেন অথবা আচার বানিয়ে রাখতে পারেন।
৬. বাইরের খাবার একেবারেই নয়:
যতটা পারবেন শিশু থেকে বড় সকলের জন্য বাড়িতে খাবার বানানোর চেষ্টা করুন। যদি কোন পছন্দের খাবার হয় সেটা বাড়িতে বানিয়ে তাদেরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
এতে তাদের খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ার পাশাপাশি শরীরটাও থাকবে তরতাজা। বাইরের খাবার তৈরি করার সময় কখনই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সব ক্ষেত্রে বজায় রাখা যায় না। এছাড়া অনেক দিনের পুরানো তেলেও সেই খাবারগুলি তৈরি হতে পারে।
তাই শরীর খারাপের জন্য বাচ্চা যতই আপনার কাছে জ্বালাতন করুক না কেন এই সময়ে বাইরের খাবার খাওয়ানোর মত চিন্তাভাবনা একেবারেই করবেন না। যদি তারা কোন খাবার খেতে পছন্দ করে, তাহলে সেটি নিজের হাতে ঘরে বানিয়ে তাকে খাওয়াতে পারেন।
ঘরে বানানো খাবার, সেটা যে কোন খাবার হতে পারে। সেটা শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী। তাই সবসময় চেষ্টা করুন বাচ্চা থেকে বড় সকলকে তাদের পছন্দের খাবারটা বাড়িতে বানিয়ে খাওয়ানোর।
৭. বেশি পরিমাণে ফ্লুইড দিতে হবে:
দেখতে দেখতে আবার গরম ফিরে এসেছে, আবহাওয়া এখন উত্তপ্ত তবে রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা এবং দিনে প্রচন্ড গরমে। সবার শরীরে এক অস্বস্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।
এই আবহাওয়ায় বড়দের মতো বাচ্চাদের শরীরও কিন্তু ডিহাইড্রেটেড হতে শুরু করে। অর্থাৎ শরীর জল শূন্য হতে থাকে। তাই যত সম্ভব বাচ্চাকে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
তার পাশাপাশি নুন চিনির জল, যে কোন ফলের রস, ডাবের জল, এগুলো খাওয়াতে পারেন। শরীর কে সব সময় হাইড্রেট রাখুন। শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে এমন কিছু খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। যেমন ধরুন আইসক্রিম জাতীয় কোন খাবার, ঠান্ডা জল ইত্যাদি।
⭐ শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই সমস্ত খাবারের পাশাপাশি আপনাকে তার সমস্ত দিক থেকে খেয়াল রাখতে হবে। তার সাথে খেলাধুলা করা, তার মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে খেয়াল দিতে হবে।
আপনার কাজ আছে বলে তাকে কখনোই সরিয়ে দেবেন না। তার সাথেও খেলুন, উপভোগ করুন আপনার শিশুর সাথে তার ছোটবেলাটা। এর পাশাপাশি প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে রাখতে পারেন আপনার সাধ্যমত এই সমস্ত খাবারগুলি।
শিশু যত বেশি সুস্থ স্বাভাবিক থাকবে, তাদের শরীরে যত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ততই কিন্তু আগামী দিনে তারা যে কোন পরিস্থিতি তে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি হতে পারবে।