কিডনি সুস্থ রাখতে চান? এই ৫টি জিনিস করলেই আজীবন থাকবে সুস্থ

মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি, আর এই কিডনি শরীরের বিভিন্ন টক্সিন, বর্জ্য পদার্থ এগুলি বের করে দিতে সাহায্য করে মূত্রের মাধ্যমে। যে জল পান করা হয় তার মধ্যে থেকেই শরীরের সমস্ত টক্সিন কিডনির দ্বারাই মানব শরীর থেকে বাইরে নির্গত হয়।

আর এই কিডনি যদি ভালো রাখতে হয় সেক্ষেত্রে খাদ্যাভাসে আনতে হবে আমূল পরিবর্তন। আর প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতে রাখতে হবে এমন কিছু খাবার যা কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে উপযোগী।

যদি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, তাহলে এর জন্য আপনাকে নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতেই হবে। প্রথমে আপনাকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে তৈলাক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড এবং এই জাতীয় কোন খাবার অথবা প্যাকেটজাত কোন খাবার সেগুলি আগেই বাদ দিতে হবে।

কিডনি সুস্থ রাখতে চান? এই ৫টি জিনিস করলেই আজীবন থাকবে সুস্থ
কিডনি সুস্থ রাখতে চান? এই ৫টি জিনিস করলেই আজীবন থাকবে সুস্থ

পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, প্রোটিন, ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া, গোটা শস্য এবং ফাইবার যুক্ত খাবার ডায়েটে রাখতে হবে। তার সাথে সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান তো করতেই হবে।

জীবন কে পরিবর্তন করতে হলে আমাদের যে অভ্যাস গুলি রয়েছে সেগুলোর পরিবর্তন করাটা আগে জরুরী। যখন নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে ভালো অভ্যাসে পরিণত হবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের জীবনযাত্রা এবং শারীরিক অসুস্থতা আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকবে।

কিডনি দেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তা তো আমরা সকলেই জানি। শরীরের এই অঙ্গটির প্রধান কাজ হল ফিল্টার করা। যাতে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে আসে শরীর থেকে, কিডনি ঠিকঠাক কাজ করলে অনেক বিপদজনক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

কিডনির ক্ষতি হলে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে সম্পূর্ণ শরীরে। একটা কিডনির মাধ্যমে একটা মানুষ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারলেও যখন দুটো কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে দাঁড়ায়, তখন আর সেই মানুষটির বেঁচে থাকার কোন আশা থাকে না।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের আসল কারণ ও এড়ানোর উপায়

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে যায়, যদি কিডনি সুস্থ না থাকে। তাই যদি নিজের কিডনিকে নিরাপদে রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই নিজের খাবারের তালিকা টা বদলে ফেলুন পরিবর্তন করুন নিজের লাইফ স্টাইল।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কিডনিকে সুস্থ রাখতে আপনাকে কি করতে হবে, আর কোন খাবার গুলি যুক্ত করতে হবে খাবারের তালিকা তে:

কিডনিকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে ?

যদি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তাহলে এর জন্য আপনার নিজের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে সে তো আমরা আগেই জানলাম। আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রায় বাইরের খাবার, তেলে ভাজা খাবার, জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড এগুলো যেন নেশায় পরিণত হয়েছে।

তবে এই নেশা কাটিয়েও ওঠা যায়, তার পরিবর্তে বাড়িতে তৈরি করা খাবার, স্বাস্থ্যকর খাবার, প্রোটিন, ভিটামিন জাতীয় খাবার, গোটা শস্য আর ফাইবার যুক্ত খাবার রাখা যেতে পারে ডায়েটে।

যেহেতু কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থ গুলি ফিল্টার করে শরীর থেকে বের করে দেয়, তাই তার উপরে আরও অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থের ভার চাপিয়ে না দেওয়াই ভালো। কেননা তার সাধ্যের বাইরে যখন বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করতে যাবে তখন এমনিতেই সে (কিডনি) অসুস্থ হতে থাকবে।

গ্যাসের সমস্যা বেড়ে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি

দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে আপনার অভ্যাসের মধ্যে যেগুলি বাদ দিতে হবে:

১. নুন কম খেতে হবে:

মানছি নুন ছাড়া কোন খাবার এর স্বাদ ঠিকমতো হয় না, তবে অনেকেই আছেন পর্যাপ্ত পরিমাণ নুন হওয়া সত্বেও আরো আলাদা করে কাঁচা নুন খাওয়ার অভ্যাস করেছেন অথবা খাবারে নুন বেশি খাওয়ার অভ্যাস করেছেন।

তবে দিনে পাঁচ গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিত নয় বলে মনে করা হয়। কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে তার সাথে সাথে রক্তচাপও বাড়ায়।

সেই কারণে পটেটো চিপস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এগুলো থেকে দূরে থাকুন কেননা এগুলো প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে নুনের ব্যবহার করা হয়।

২. মদ্যপান বন্ধ করুন:

কিডনি সুস্থ রাখতে চান? মদ্যপান বন্ধ করুন
কিডনি সুস্থ রাখতে চান? মদ্যপান বন্ধ করুন

মদ্যপান শরীরের জন্য ভালো নয় তারাও কিন্তু জানেন যারা এটি নিয়মিত খান, কি তাইতো ! অ্যালকোহল শুধু একটি সামাজিক কুফলই নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যেরও অন্যতম বড় শত্রু বটে।

মদ্যপান যেমন সামাজিক ক্ষেত্রে এবং পারিবারিক ক্ষেত্রে অশান্তি সৃষ্টি করে, তার সাথে সাথে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরেও অনেক বড় ক্ষতি সাধন করে। বর্তমান প্রজন্মের তরুণ থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষই অ্যালকোহল সেবন করেন এবং এটি তাদের নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছে।

এটি শুধু আমাদের কিডনির ক্ষতি করে না, গোটা শরীরকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে আর এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার কথা চিন্তা করার সাথে সাথে শুরু করতে হবে।

ভারতের ৫টি সেরা সরকারি হাসপাতাল, হয় কম খরচে উন্নত চিকিৎসা

৩. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন:

কিডনি সুস্থ রাখতে চান? তাহলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
কিডনি সুস্থ রাখতে চান? তাহলে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন

প্রচুর পরিমাণে জল পান করার কথা প্রায় সকলের মুখেই শুনে থাকবেন। কখনোই বেশি পরিমাণে জল পান করা শরীরের জন্য খারাপ নয়। পরিবর্তে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণের থেকেও কম জলপান করা হয় তাহলে সেটা শরীরকে শুকিয়ে আনতে পারে।

কেননা মানব শরীর এর ৭৫ % কিন্তু জল দিয়েই তৈরি, তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের শরীরে কতখানি জলের প্রয়োজন। বেশিরভাগ ডাক্তাররা কিন্তু পরামর্শ দেন যে, দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস থেকে ১০  গ্লাস পর্যন্ত জল পান করা উচিত। ২ লিটার থেকে ৩ লিটার পর্যন্ত।

তবে আপনি চাইলে শুধু জল না খেতে পারলেও লেবুর জল, তাজা ফলের রস, ডাবের জল এবং সবজির রস এইসব মিলিয়ে দুই থেকে তিন লিটারের মতো জল শরীরে প্রবেশ করাতেই হবে। এতে আপনার কিডনি খুবই হ্যাপি থাকবে।

৪. চা ও কফি খাওয়া কমিয়ে দিন:

কিডনি সুস্থ রাখতে চান? চা ও কফি খাওয়া কমিয়ে দিন
কিডনি সুস্থ রাখতে চান? চা ও কফি খাওয়া কমিয়ে দিন

দেশ থেকে বিদেশে চা ও কফির নেশা আছে এমন মানুষ কম নেই। বলতে গেলে ভারতে চা ও কফি প্রেমির অভাব নেই। সকাল শুরু হয় অনেকের চা অথবা কফি দিয়ে। সারাদিনে কটা কাপ চা অথবা কফি খাওয়া হচ্ছে তার হিসাব অনেকেই রাখেন না।

এলার্জি হওয়ার কারণ ও যেসব খাবারে এলার্জি বেড়ে যায়

তবে এইসব পানীয়তে ক্যাফেইন এর পরিমাণ অনেক বেশি মাত্রায় থাকে। আর এটি কিডনির জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এর কারণে পেটে এসিডিটির সমস্যাও হতে পারে।

যা আপনাকে অসুস্থতায় ভোগাতে পারে। আর এই অভ্যাস প্রতিনিয়ত হতে থাকলে কিডনি অসুস্থ হতে হতে তার নিজস্ব কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। মন চাইলে খুব কম পরিমাণ এবং মাঝেমধ্যে খেতেই পারেন, তবে এটা অভ্যাসে পরিণত করবেন না।

৫. অতিরিক্ত তেল নয়:

কিডনি সুস্থ রাখতে চান? তাহলে অতিরিক্ত তেল নয়
কিডনি সুস্থ রাখতে চান? তাহলে অতিরিক্ত তেল নয়

রান্নার ক্ষেত্রে এবং খাবার গ্রহণে তেলের প্রয়োজন তো হয়ই। তেল আমাদের খাদ্য তালিকাতে যুক্ত থাকে ঠিকই, তবে সেটা যেন কখনোই মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না যায়। অল্প পরিমাণে তেল খাওয়ার অভ্যাস করুন, রান্নাতে সবজি হালকা তেলে ভেজে সেটা রান্না করার চেষ্টা করুন।

হজম শক্তি বাড়ানোর সেরা ৫ টি উপায়

যত বেশি হালকা খাবার শরীরকে প্রদান করবেন তত কিন্তু পাকস্থলী থেকে শুরু করে কিডনি এবং আরো অন্যান্য শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবে। তাদের কার্যক্ষমতা থাকবে অটুট। সেই কারণে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় যত পরিমান তেল কম খাবেন ততই কিন্তু সুস্থ থাকতে পারবেন।

চেষ্টা করলে মানুষ অনেক কিছুই পারে। তাই আপনার এতদিনের অভ্যাস কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলে যদি মনে  করেন সেটা কিন্তু ভুল ধারণা। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়, তাই না ! আর সুস্থ শরীর এর জন্য এটুকু তো করা যেতেই পারে। তাই কিছুদিন এই অভ্যাস গুলি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন, দেখবেন পরবর্তীতে আর সেই আগের অভ্যাসে ফিরে যেতে মন চাইবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top