ব্রেস্ট ক্যান্সার (Breast Cancer): অনেক আগে ক্যান্সারের কথা শুনলে অনেকেই এটা ধারণা করে বসতেন যে, ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যাক্তি আর কখনোই সুস্থ হয়ে উঠবে না। কিন্তু এই ক্যান্সারের মাত্রা দিন দিন এত হারে বেড়ে চলেছে যে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকেই এই মারণ রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন।
তবে ক্যান্সারের মধ্যে বিভিন্ন রকমের প্রকারভেদ আছে। তার মধ্যে একটি অন্যতম হলো নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সার (Breast Cancer)। প্রতিবছর হাজার হাজার নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, এবং অনেকেই এই রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন।
তবে কি কারণে এত হারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের মাত্রা বেড়ে চলেছে, সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ব্রেস্টের কিছু কোষ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়, ওই অনিয়মিত অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা মাংসপিন্ডে পরিনত হয়।
সেই টিউমার অথবা মাংসপিণ্ড রক্তনালীর লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই হলো ক্যান্সার।
-
-
-
ওজন কমাতে এই আটার রুটি দারুন কার্যকরী, আপনি কি জানেন কি কি আটা?
-
গ্যাসের সমস্যা বেড়ে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি
-
ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ গুলি আসলে কি কি:-
#১) ব্রেস্ট ক্যান্সার শুধুমাত্র যে নারীদের হতে পারে এমনটা কিন্তু নয়, অনেক সময় পুরুষদেরও এটা হয়ে থাকে। তবে সেটা খুবই কম পরিমানে, লিঙ্গ ভেদে ব্রেস্ট ক্যান্সার এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
#২) পরিবারের কারো যদি ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা পরিমান হলেও বেড়ে যায়। যেমন ধরুন মা, মাসি, বোন, বা মেয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও এর ঝুকি থাকতে পারে।
#৩) নারীদের মাসিক অথবা বয়সন্ধির বয়সের উপরেও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্ভর করে। বিশেষ করে ১২ বছরের আগে বয়সন্ধি অথবা মাসিক শুরু হলে ও ৫০ বছর পর মাসিক বন্ধ হলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
#৪) বয়স বাড়়তেইএই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়়, অর্থাৎ ৫০ বছরের পর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায় অনেকখানি।
#৫) আবার অন্যদিকে বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলে অথবা ৩০ বছরের পর সন্তান জন্ম না নিলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে।
#৬) আবার সন্তানকে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ না খাওয়ানোর ফলেও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
#৭) খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খেলেও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
#৮) প্রক্রিয়াজাত খাবার অথবা প্যাকেটজাত খাবার, কৃত্রিম মিষ্টি ও রংযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে নারী অথবা পুরুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
#৯) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যারা একেবারেই শরীর চর্চা করেন না, তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়়। অতিরিক্ত ওজন এই রোগের কারণ হতে পারে।
#১০) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে রুম ফ্রেশনার, কীটনাশক, কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস ও ডিওডোরেন্ট দীর্ঘদিন এক ভাবে ব্যাবহার করলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
#১১) আবার শরীরের মাপ অনুযায়ী সঠিক মাপের অন্তর্বাস না পড়লে ব্রেস্টের আকার পরিবর্তন হয়ে যায়, এই কারণেও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে।
#১২) আবার অন্যদিকে সারাক্ষণ যদি অন্তর্বাস পড়ে থাকার অভ্যাস থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও সেখানকার ঘাম নির্গত হতে পারে না। ফলে আর্দ্রতাও জমে থাকে। সব মিলিয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। রাতে অন্তর্বাস ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন।
#১৩) জেনেটিক কিছু কারণেও ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। brca1 ও brca2 নামের জিনের মিউটেশন ৫% থেকে ১০% ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
প্রতিবছর সেই কারণে অক্টোবর মাস কে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস (Breast Cancer Awareness Month) হিসেবে পালন করা হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সবাইকে সচেতন ভাবে চলাফেরা করতে হবে, এটা অবশ্যই জরুরি।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানোর উপায়:
নারীরা সাধারণত যেসব ক্যান্সারের বেশি আক্রান্ত হন, তার মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের অবস্থান একেবারে দ্বিতীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ২.৩ বিলিয়ন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ৫৬০০০ মৃত্যুবরণ করেন।
গবেষণা অনুযায়ী ভারতে প্রতি চার মিনিটে একজন নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে। আর প্রতি ৮ মিনিটে একজন নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের মৃত্যুবরণ করেন।
এই বিষয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর ফোর্টিস হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি ও হেমাটো অনকোলজি বিভাগের পরিচালক ডাক্তার নীতি রাইজাদা (Doctor Niti Raizada) কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁর মতে, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করুন এখন থেকেই।
#১) অনিয়মিত জীবনযাত্রা:
অনিয়মিত জীবন-যাত্রার কারণেও বাড়তে পারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি। তবে জীবনযাত্রা পরিবর্তনযোগ্য, এই কারণে সচেতন হয়ে জীবন যাপন করলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
#২) পুষ্টিকর খাবার:
ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর খাদ্য তালিকা মেনে চলুন। কম চর্বি ও ক্যালরির খাবার গ্রহণ করুন। ফল ও সবজি পাতে রাখতে ভুলবেন না।
#৩) আরামদায়ক জীবনযাপন:
ক্যান্সারের দিক থেকে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করাই নয় বরং শিশুরাও এই রোগের শিকার হচ্ছে, এর কারণ হলো আরামদায়ক জীবনযাপন করা।
এই চিকিৎসকের মতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি রোধ করতে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, এবং যথাসম্ভব শরীরকে কষ্ট করাতে হবে অথবা শরীরচর্চার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
#৪) ধূমপান:
সাধারণত ক্যান্সারের সবথেকে বড় কারণ হিসেবে ধূমপানকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তা ছাড়াও অনেকেই ধূমপান ছাড়াও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেটা অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য, আগেই বলা হয়েছে।
তাছাড়া প্রতিনিয়ত রাসায়নিক যুক্ত খাবার গ্রহণের মধ্যেও এই রোগের আশঙ্কা থেকে যায়। তবুও ধূমপান ও অ্যালকোহলে আসক্তি তে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এসব বদ অভ্যাস এড়িয়ে চললে যেকোনো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাবে।
#৫) মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল:
অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি ক্যান্সারকে রোধ করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাটা জরুরি। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে মন সুস্থ রাখতে হবে আপনার।
সব মিলিয়ে সুন্দর লাইফ স্টাইল আপনাকে সুন্দর জীবন দান করতে পারে। যেকোনো রকম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য অনিয়মিত জীবন যাপন একেবারেই নয়। নিজের খেয়াল রাখুন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন সুন্দর থাকুন।