ভিটামিন-কে, উৎস এবং উপকারিতা – Source & Benefits of Vitamin-K in Bangla

আমরা সবাই এটা জানি যে, শরীর গঠন, বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য শরীরে ভিটামিন প্রয়োজন। একেক ধরনের ভিটামিন শরীরের একেক ধরনের ঘাটতি ও চাহিদা পূরণ করে।

শরীরে সব রকম ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে শরীরের গঠন, বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিভিন্ন অসুখের উপসর্গ দেখা দেয়। তাই নিয়মিত সবরকমের ভিটামিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।

Source & Benefits of Vitamin-K in Bangla
Source & Benefits of Vitamin-K in Bangla

ভিটামিন-কে মূলত সবুজ শাকসবজিতে বেশী থাকে। তবে এর প্রানীজ উৎসও রয়েছে। ভিটামিন-কে এর দুইটি ধরন রয়েছে।

১. ভিটামিনঃকে-১ এবং ২. ভিটামিনঃকে-২

চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন-কে এর উৎস ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। যাতে তা আপনাদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন কে জাতীয় খাবার নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।

১.পালং শাক

সবুজ শাকসবজি হচ্ছে ভিটামিন-কে এর সবচেয়ে ভাল উৎস। সবুজ শাকসবজীর ভিতর পালংশাক ভিটামিন কে এর খুবই ভাল একটি উৎস।

পালং শাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি, এটা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. ব্রোকলি

ব্রোকলি ভিটামিন-কে এর খুবই ভাল একটি উৎস। ব্রোকলি মূলত শীতকালীন একটি সবজী, এই সবজীতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি রয়েছে।

এটা শুধু রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে তাই ই নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এটা সাহায্য করে।

যারা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে চান তারা বেশি বেশি করে ব্রোকলি খেতে পারেন কারণ এতে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা ত্বক তারুণদীপ্ত রাখে।

৩. ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-কে রয়েছে, এছাড়া ডিমের কুসুম মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

ভিটামিন-কে ছাড়াও ডিমের কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও ডি, ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বাড়ায়, চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ রাখে।

ভিটামিন ডি হাড় ও দাতের গঠন মজবুত করে, এটা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

৪. মুরগীর মাংস

মুরগীর মাংস ভিটামিন-কে এর খুবই ভাল একটি উৎস। মুরগীর রান ও পাজরের মাংসে ভিটামিন-কে পাওয়া যায়, মুরগী প্রোটিনের খুব ভাল একটি উৎস।

সেই সাথে এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং উপকারী খনিজ যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরে শক্তি যোগায়, হাড় মজবুত করে।

তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মুরগীর মাংস রাখুন।

৫. হাঁসের মাংস

হাঁসের মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-কে, হাঁস প্রোটিনের খুবই ভাল উৎস। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় ও দাত মজবুত করতে সাহায্য করে।

নারকেলের দুধ দিয়ে হাসের মাংস বাঙালিদের কাছে খুবই পছন্দের একটি খাবার। খাদ্যগুণ বিচারেও এটা অতুলনীয়, তাই ভিটামিন কে ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এই খাবারটি প্রায়ই রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়।

৬. সবুজ ও রঙিন শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি যেমন ফুলকপি, পাতাকপি, গাজর, কুমড়া, পুইশাক, পালংশাক, ব্রোকলি, লেটুসপাতা,পুদিনা পাতা, সয়াবিন ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে।

তাই প্রতিদিনের এবং প্রতিবেলার খাবারে চেষ্টা করুন সবুজ এবং রঙিন সবজী খাওয়ার।

 

ভিটামিন-কে এর উপকারিতা:

১. রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে

শরীরের কোন স্থান যদি কেটে যায়, কোন ক্ষত থেকে রক্তপড়া শুরু হয় তাহলে ভিটামিন-কে সেই রক্তপড়া দ্রুত বন্ধ করতে সাহায্য করে।

তা না হলে রক্তপড়া বন্ধ হতনা, কোথাও কেটে গেলে সব রক্ত বের হয়ে যেত যদি ভিটামিন কে সেই রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য না করত!

২. হাড় মজবুত করে

ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের গঠন ভাল করে, হাড়ের ক্ষয়, হাড়ের দূর্বলতা ইত্যাদি কমায়।

৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

ভিটামিন-কে সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কোষের ধ্বংস ঠেকায়।

৪. মস্তিষ্ক কর্মক্ষম রাখে

ভিটামিন-কে মস্তিষ্ক কর্মক্ষম রাখে, মস্তিষের প্রেসার কমায় , স্মৃতিশক্তি ভাল রাখে।

মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়, অতিরিক্ত দ্রুত রক্ত চলাচলে বাধা দেয়।ফলে মস্তিষ্ক এর কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে।

৫. পিরিয়ডের যন্ত্রনা কমায়

পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে প্রচুর কাচারক্ত চলে যায়, সাথে আয়রন, ক্যালসিয়াম চলে যায়। ফলে শরীর খুব দূর্বল হয়ে পড়ে।

এই সমস্যা দূর করতে ভিটামিন-কে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

৬. দূর্বলতা ও দাঁতের ক্ষয় কমায়

ভিটামিন-কে এর অভাব হলে দূর্বলতা ও দাঁতের ক্ষয় দেখা দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ভিটামিন কে সমৃদ্ধ শাকসবজি এবং প্রানীজ খাদ্য খাওয়া উচিত। তাহলে শরীর এবং দাঁত সবল ও সুস্থ থাকবে।

আরও কিছু

ভিটামিন-কে সমৃদ্ধ খাদ্য কোনগুলো এগুলো আমরা অনেকেই জানিনা। এবং ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে এই তথ্য ছাড়া অন্যান্য উপকারিতা সম্পর্কেও জানার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

এজন্য ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার আমাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত নাও থাকতে পারে। যেকোন স্বাস্থ্যকর ডায়েটচার্ট মেনে চলতে হলে আগে জানতে হবে কি কি খাদ্য আমাদের জন্য বেশী প্রয়োজন, কোন কোন খাদ্যে কি কি উপাদান রয়েছে, তাহলেই সেগুলো রোজকার খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখা সম্ভব হবে।

আশা করি ভিটামিন-কে এর উৎস এবং উপকারিতা জানতে পোস্টটি আপনাদের উপকার করবে। পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন।

আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top