প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ফল রাখার উপকারিতা

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সব খাদ্যগুনের খাবার রাখা আবশ্যক। আমরা অনেক সময়ই এই বিষয়টি মাথায় রাখিনা। শুধুমাত্র শর্করা আর আমিষের মধ্যেই আমাদের খাদ্যতালিকা সীমাবদ্ধ করে ফেলি। যার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়।

আমাদের অনেকেরই শরীরের ওজন ঠিক থাকে কিন্তু শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ঘাটতি থাকে বিধায় আমরা দুর্বল বোধ করি। হাড়, দাত, চোখের সমস্যা দেখা দেয় আমাদের। আমাদের অনেকেরই অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা রয়েছে যার জন্য ইচ্ছামত সব খাবার আমরা খেতেও পারিনা।

কিন্তু এ ধরনের সমস্যা দূর করতে এবং সবরকম খাদ্য উপাদানের ঘাটতি দূর করতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল রাখা উচিত। সুপ্রিয় পাঠক আজ আমাদের পোস্ট সাজানো হয়েছে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল রাখার উপকারিতা নিয়ে। চলুন দেরী না করে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল রাখার উপকারিতা

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ফল রাখা হলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। লাল রংয়ের ফল যেমন তরমুজ, ডালিম, লাল আপেল, চেরী ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি। এগুলো চোখের জ্যোতি বাড়ায়, প্রোস্টেট ক্যান্সার, হার্টের অসুখ সারায়, শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদান দূর করে এবং গ্যাষ্ট্রিক-আলসার দুর করে, খাদ্যে রুচি বাড়ায়।

সবুজ ফল যেমন লেবু, পেয়ারা, আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি,গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ রয়েছে যা আপনাকে করোনা, স্কার্ভির মত রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল রাখুন। অবশ্যই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

২. বাড়তি ওজন কমায়

যাদের ওজন অনেক তারা ভেবেই পান না যে কিভাবে তাদের ওজন কমাবেন, কি ধরনের খাবার খেলে তাদের ওজন কমবে! তারা ডায়েট চার্টে বেশী বেশী আশযুক্ত ফল রাখতে পারেন। ফলে রয়েছে প্রচুর পানি ও ফাইবার।

এগুলো ওজন কমিয়ে আপনাকে ফিট রাখবে। কিন্তু এগুলো খেলে ওজন কমার কারনে আপনার ভিটামিনের কোন অভাব হবেনা। তাই নিয়মিত ফল খান। ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

৩. ত্বক ও চুলের সমস্যা দূর করে

ত্বক ও চুল নিয়ে আমরা সকলেই চিন্তিত। ত্বকের যত্ন না নিলেই দুদিনেই মলিন ও বিবর্ন হয়ে যায়। বর্তমানে পরিবেশ দূষনের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ত্বক ও চুলের উপর তার বাজে প্রভাব পড়ছে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং চুল সুন্দর রাখতে আমরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে পার্লারে ছুটছি, কিন্তু পার্লার কখনোই স্থায়ী সমাধান দেয়না।

কয়েকদিনের মধ্যেই পার্লারের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়।আর এভাবে প্রতিদিন পার্লারে গিয়ে ত্বক ও চুলের ট্রিটমেন্ট করানো সম্ভব হয়না। এজন্য অনেকে চেহারার জৌলুস ধরে রাখতে লেজার ট্রিটমেন্ট করেন যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ এত বড় বড় সমস্যার সমাধান হতে পারে ফলের মাধ্যমেই।

আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত ফল খান এবং পানি পান করেন, আপনার ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও ঝলমলে থাকবে। শরীরে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন থাকলে ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও দীপ্তি বজায় থাকবে। তাই নিজের ত্বক ও চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জল রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফল রাখুন।

৪. বয়সের ছাপ কমায়

আমাদের প্রত্যেকের একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বয়সের আগে চেহারায় বুড়োটেভাব চলে আসা। এটা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। চিন্তা নেই। প্রতিদিন টকজাতীয় ফল, বাদাম, কলা এগুলো খেলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে না।।বাদামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ই যা ত্বকের বলিরেখা, ভাজ পড়া দূর করে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।

ত্বকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায় ফলে বয়সের ছাপ পড়েনা। দীর্ঘদিন সুন্দর থাকতে চাইলে নিয়মিত ফল খান। বয়সের জন্য কোন বাড়তি ট্রিটমেন্ট বা দামী প্রসাধনী প্রয়োজন হবেনা।

৫. গ্যাষ্ট্রিক, অরুচি দূর করে

আমাদের অনেকেরই গ্যাষ্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা রয়েছে। যার জন্য আমরা সব ধরনের খাবার খেতে পারিনা। ফলে আমরা অপুষ্টি, রক্তশুন্যতার শিকার হই। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন ফল খান।।এটা গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দুর করবে, অরুচি কমাবে। ফলে খাবারে রুচি আসবে।

ভাজাপোড়া, তেলেভাজা খাবার বেশী খেলে মূলত গ্যাষ্ট্রিক ও অরুচির সমস্যা হয়। এই ধরনের খাবার কম খেয়ে ফলজাতীয় খাবার বেশী খান। এটা আপনার অসুখ, অরুচি দূর করে আপনাকদ সুস্থ রাখবে।

উপসংহার

যেসব স্বাস্থ্য সমস্যাকে আমরা খুবই গুরুতর মনে করে থাকি, সেগুলো নিয়মিত ফল খেলেই অনেকটা দূর করা ও নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। ফলে ভিটামিন ডি ব্যাতীত সবরকম খাদ্য উপাদান রয়েছে। ফল সহজপাচ্য। এটা হজমে সমস্যা হয়না, ওজন বাড়ায় না।

ক্যান্সার, টিউমার, হার্টের অসুখ, শরীরের টক্সিনের মত বিষাক্ত পদার্থ দূর করে দেয় ফল।এছাড়া অরুচির সমস্যা ও ত্বক ও চুলের সমস্যার সঠিক সমাধান পাবেন নিয়মিত প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ফল রাখলে।

আশা করি খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন ফল রাখার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এটা আপনাদের স্বাস্থ্যসমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে কোন মতামত ও প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top