ভারতে গর্ভপাত কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বৈধ, যেমন ভারতে অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে, ধর্ষণের শিকার এবং বিবাহিত মহিলাদের জন্য গর্ভপাত আইন রয়েছে। এজন্য গর্ভপাত বৈধ কিনা তা পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে।
গর্ভপাত তখনই অবৈধ যখন তা মানবশিশু জন্মের আগে তার ভ্রূন ছেলে না মেয়ে তা শনাক্ত করে গর্ভপাত ঘটানো হয়। আমাদের দেশে এখনো কন্যা সন্তানকে পরিবার ও সমাজের জন্য বোঝা মনে করা হয়।

এজন্য শিশু জন্মের আগেই আল্ট্রাসনো করে কিছু বাবা-মা যখন জানতে পারেন যে গর্ভের সন্তান মেয়ে তখন তারা তা নষ্ট করে বা গর্ভপাত ঘটান।
এই নিকৃষ্ট কাজের পরিমাণ এতই বেশী যে এ কারণে এ জাতীয় গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং জন্মের আগে শিশুর লিঙ্গ জানাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তবে গর্ভপাত বিভিন্ন কারণে করা হতে পারে৷
তাই গর্ভপাত বৈধ না কি অবৈধ তা জানতে আলোচনার প্রয়োজন। আর আজ এ বিষয়টি নিয়েই আমাদের আয়োজন সাজানো হয়েছে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
Contents
ভারতে গর্ভপাত আইনত বৈধ নাকি অবৈধ তা জেনে নিন:-
গর্ভপাতের সংজ্ঞা
মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সি (এমটিপি) আইন, ১৯৭১। যা গর্ভপাতের সংজ্ঞা দেয়। এই সম্পর্কিত আইনে গর্ভপাত সম্পর্কে বলা হয়েছে ভ্রূণের পরিণত হওয়ার আগেই তা নিকাশ করাকে গর্ভপাত বলে।
মানব ভ্রুণ পূর্নতা পাওয়ার আগেই তা অপারেশন বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় নষ্ট করে ফেলা হয়। ফলে আর ওই ভ্রুণের মাধ্যমে কোন সন্তানের জন্ম হয়না।
ভারতে গর্ভপাতের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে আইনানুযায়ী নির্দিষ্ট করা আছে এবং যখন এটি কেউ অনুসরণ করবে না, তখন এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
যখন গর্ভপাতের আইনী বয়স বা সময় পুর্ন না হবে ততদিন পর্যন্ত যদি গর্ভপাতের জন্য অপেক্ষা না করা হয়, তার আগেই যদি গর্ভপাত ঘটানো হয় তভে তা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
ভারতে আইনে গর্ভপাতের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এর বৈধতার বিষয়টি নির্ভর করে।
একজন মায়ের যদি বয়স কম হয়, রক্তে সমস্যা হয়, কোন জটিল অসুখ থাকে তাহলে বাচ্চার ভ্রুণ গর্ভপাত করাটা আইনত দন্ডনীয় নয়। কারণ একজন মা’ই একমাত্র ভাল জানেন কখন একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনা উচিত।
মেডিকেল গর্ভপাত এ সাত সপ্তাহের কম সময়ে যদি গর্ভবতী একজন মহিলা গর্ভপাত করতে পারেন। এই প্রক্রিয়াতে বড়ি এবং ওষুধের সাহায্যে গর্ভপাত করা সম্ভব।
এটা একটি নিরাপদ এবং ঝামেলাবিহীন প্রক্রিয়া। এর মধ্যে যদি গর্ভপাত ঘটানো হয় তবে তা একজন মহিলার জীবনের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে।
সার্জিকাল গর্ভপাত এ যদি কোনও মহিলার গর্ভধারণের সাত সপ্তাহ অতিক্রম করে গর্ভপাত করতে চান, তবে একজন শল্য চিকিৎসক গর্ভপাত করতে পারেন। তবে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
কারণ এবার অপারেশন, ব্যতীত গর্ভপাত করাতে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ভারতে গর্ভপাত ঘটানোর কারণ
যদিও ভারতে গর্ভপাতের অধিকার অনেক বিতর্ক এবং আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে এখনও একটি ভ্রূণের গর্ভপাত অমানবিক এবং আইনত দন্ডনীয় অপরাধ উভয়ই বিবেচিত হয়।
কারণ হচ্ছে, যতজন মানুষ সঠিক কারণে গর্ভপাত করে থাকেন তারচেয়ে অনেক বেশী মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রুণ হত্যা করতে গর্ভপাত ঘটিয়ে থাকে যা হত্যার সামিল।
ভারতে বিভিন্ন গর্ভপাত আইন রয়েছে যা ভারতে গর্ভপাতের বৈধতা বা অবৈধতা নির্ণয় করে। কারণ পরিস্থিতি এবন কারণ এই দুইয়ে মিলে গর্ভপাত বৈধ না অবৈধ তা নির্ণয় করে।
কারণ গর্ভপাত ঘটানো পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক জরুরী হয়েও দাড়াতে পারে।
গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন
ইন্ডিয়ান পেনাল কোড – ১৯৭১ ভারতীয় দন্ডবিধি (আইপিসি) ভারতে গর্ভপাতের বিধানের জন্য মেনে চলা হয়। আইনত, তবে আইপিসি গর্ভপাত সম্পর্কিত প্রত্যক্ষ বিধান সরবরাহ করে না।
তবে কোডটির ৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা অনুসারে এটি গর্ভপাতের বিষয়টির আইনগত বৈধতা এবং অবৈধতা এবং এ বিষয়ে যাবতীয় শর্তাবলি ও কারণগুলো যাচাই করে থাকে।
গর্ভাবস্থা আইন মেডিকেল টার্মিনেশন – এটি ভারতে গর্ভপাত আইন হিসাবেও পরিচিত এটি ভারতে গর্ভপাত আইনের বিধানগুলি নিয়ে কাজ করে।
এই আইনটির মাধ্যমে আপনি কোনও একজন চিকিৎসকের অনুমোদনের মাধ্যমে প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করতে পারেন।
গর্ভাবস্থার ১২-২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের জন্য, আপনাকে দুজন চিকিৎসকের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া বাধ্যতামূলক কারণ চিকিৎসকের অনুমোদন ছাড়া গর্ভপাত ঘটানোর কারণটি যে আইনসঙ্গত তার কোন প্রমাণ নেই।
তবে শিশুর লিঙ্গ জানার পর যদি গর্ভপাত ঘটানো হয় তবে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সরকার কর্তৃক ভারতে গর্ভপাত ঘটানোর অনুমতিপ্রাপ্ত যেসব মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকে অবশ্যই গর্ভপাতের আগে তাদের সনদপত্র দেখাতে হবে।
কারণ সকল চিকিৎসকদের গর্ভপাত করার অনুমতি সরকার থেকে দেয়া হয়নি। এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
যাতে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা বিশেষ জ্ঞান না থাকলে রোগী মারা যেতে পারে বা আজীবনের জন্য মা হওয়ার ক্ষমতা হারাতে পারে।
গর্ভপাত সম্পাদনের জন্য ডাক্তারের নিম্নলিখিত যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার:
গর্ভপাত করতে হলে একজন ডাক্তারের কিছু আবশ্যকীয় যোগ্যতা থাকতে হবে, যেমন-একজন নিবন্ধিত মেডিকেল প্র্যাকটিশনার যিনি ভারতে অন্তত ২৫টি গর্ভপাত ঘটাতে মেডিক্যালি সহায়তা করেছেন।
একজন সার্জন যিনি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছয় মাসের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। প্রবীণ ডাক্তার যিনি স্ত্রীরোগবিদ্যায় ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়েছেন।
যে ডাক্তার এমটিপি আইন, ১৯৭১ কার্যকর করার আগে রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং যিনি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের তিন বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
এর অর্থ হচ্ছে অবশ্যই নতুন প্র্যাকটিস করছেন বা ইন্টার্ণ কেউ গর্ভপাত ঘটাতে পারবেন না। ডাক্তারের সনদপত্র, ডিগ্রী এবং অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকতে হবে। তাহলেই কেবল তিনি গর্ভপাত করাতে পারবেন।
গর্ভপাত বৈধ নাকি অবৈধ – মূলকথা
পৃথিবীর কিছু দেশে গর্ভপাত বৈধ, আবার কিছু দেশে তা অবৈধ। ভারতে লিঙ্গ জানার আগ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ প্রেগনেন্সির ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করানোটা বৈধ।
তবে এজন্য অবশ্যই সনদপ্রাপ্ত ডাক্তারের অনুমতি নিতে হবে। ২০ সপ্তাহের বেশী হলে দুজন সনদপ্রাপ্ত ডাক্তারের অনুমতি নিতে হবে।
আর অবশ্যই শিশুর লিঙ্গ জানার পর গর্ভপাত করানো হলে তা আইনত দন্ডনীয় বলে গণ্য হবে। তবে গর্ভপাত কত বছর বয়স পর্যন্ত করা যাবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন আইন নেই।
আজকাল ডাক্তাররা অপারেশন না করেও প্রেগনেন্সির প্রথমদিকে গর্ভপাতের জন্য পিল ও প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে তা গর্ভাবস্থার ২৭ সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে।
অনেকেরই প্রেগনেন্সি সম্পর্কে জানতে দেরী হয়। এ ব্যবস্থা মূলত তাদের জন্যই।
শেষ কথা
গর্ভপাত ঘটানো মানে একজন অনাগত মানবশিশুকে একপ্রকার হত্যা করা। কিন্তু যখন তা প্রেগনেন্সির ২০ সপ্তাহের মধ্যে করা হয় তখন শিশুর আকার সেভাবে পূর্ণতা পায়না।
কিন্তু যখন শিশু ছেলে না মেয়ে তা জানা যায় এবং ভ্রুণ নষ্ট করা হয় তখন তা হত্যা রুপেই গণ্য করা হয়। যা ভারতে অবৈধ এবং আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
আশা করি গর্ভপাত ভারতে বৈধ না অবৈধ এ ব্যাপারে ধারণা দেওয়ার আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস সফল হয়েছে। সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেব না।
এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।ধন্যবাদ সবাইকে।