মটরশুটি শিম জাতীয় একটি ফসল। এটি খুবই পরিচিত একটি ফসল। মটর দানা ভেজে খাওয়া যায়। এটি পুষ্টিকর ও আমিষের একটি বড় উৎস।
একটি মটরশুটির মধ্যে কয়েকটি বীজ থাকে। একটি সবজি হিসেবে তাজা খাওয়া হয়। শুকিয়ে ডাল হিসেবে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এতে খুব কম ফ্যাট থাকে এবং ক্যালোরি ও কম থাকে। পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে মটরশুটি ভূমিকা পালন করে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে মটরশুটি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই মটরশুটি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন মটরশুটি চাষের পদ্ধতি বিস্তারিত-
জমি ও মাটিঃ
মটরশুটি চাষের জন্য দোআঁশ মাটি বিশেষ উপযোগী। এটেল মাটিতে চারা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এবং চারা মারা যেতে পারে।
জমি উচু হতে হবে এবং সুনিষ্কাশিত হতে হবে। মটরশুটি শীতকালীন ফসল।
চাষের সময়ঃ
মটরশুটি চাষ করার উপযুক্ত সময় হলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস। শীতকালীর ফসল হওয়ার কারণে এই কয়েক মাস মটরশুটি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বিরাজ থাকে।
নভেম্বর মাসে বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়। তবে কখন ও কখন ও অক্টোবর মাসে ও বীজ বপন করা যেতে পারে। বৃষ্টির মৌসুম এড়িয়ে যেতে হবে। বৃষ্টি পড়লে জমি তৈরি করতে অসুবিধা হতে পারে।
জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। সঠিক সময়ে বীজ বপন করতে হবে।
সারি করে বীজ বপন করতে হবে । জমিতে যদি জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সারি তৈরির সময় উচু স্থান নির্বাচন করতে হবে।
এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৪০ সেমি. এবং এক চারা থেকে আরেক চারা দূরত্ব হবে ২০ সেমি।
বীজ বপন করার আগে বালাই নাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
বীজের পরিমানঃ
মটরশুটি জাত ভেদে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬০-৭০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ও ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে।
সাধারনত এক শতকে ৪০ কেজি গোবর সার, ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৬০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
জমি চাষ দেওয়ার সময় অর্ধেক পরিমান ইউরিয়া সার ও টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে আর বাকি অর্ধেক দিতে হবে পরে।
দুই কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় ৭-১০ দিন পর মটরশুটি বীজ বপন করতে হবে।
সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ ও জল নিষ্কাশনঃ
ভালো ফলন পেতে জমিতে নিয়মিত জল সেচ দিতে হবে। শুকনা মৌসুমে ২-৩ টি সেচ প্রয়োগ করতে হবে। গাছে যখন ফল ধরবে তখন সেচ দেয়া জরুরি।
জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
আগাছা দমনঃ
ভালো ফলন পেতে জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। নিড়ানি দিয়ে মাঝে মধ্যে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। সারির মাঝে প্রয়োজনে হালকা ভাবে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আগাছা দমন করে দিতে হবে।
আগাছা গাছের পুষ্টিতে ভাগে বসায় তাই নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে তাহলে মাটিতে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে এবং গাছ সহজেই পুষ্টি শোষন করতে পারে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
মটরশুটি গাছ চারা অবস্থায় অনেক দুর্বল হয়ে থাকে। তাই চারা সাবধানে তুলতে হবে মটরশুটি চাষে জমি খুব ভালো ভাবে তৈরি করতে হবে।
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে বাউনি দেয়া প্রয়োজন। সারি বরাবর খুটি পুতে দিতে হবে বা সুতা দিয়ে বেধে মাচা তৈরি করে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
মটরশুটি গাছে প্রধানত ড্যাম্পিং অফ রোগ, রাস্ট রোগ, পাউডার মিলডিউ ও অ্যানথ্রাকনোজ আক্রমন করে থাকে।
গাছ যখন চারা অবস্থায় থাকে তখন এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগ দমন করতে হলে ডাইথেন এম ৪৫ প্রয়োগ করতে হবে।
এক লিটার জলের সাথে ২ গ্রাম ডাইথেন এম মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাটুই পোকা মটরশুটি গাছের ক্ষতি করে থাকে। এই পোকা চারার গোড়া কেটে ফেলে। জমি থেকে পোকা তুলে মেরে ফেলতে হবে।
প্রয়োজনে বালাই নাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
সাধারনত বীজ বপন করার ১-১.৫ মাসের মধ্যেই গাছে ফুল ধরে। গাছে ফুল ধরার ২০-২৫ দিন পর বীজের জন্য মটরশুটি সংগ্রহ করা যায়।
বীজ পরিপক্ক আকার ধারন করার পর শক্ত হওয়ার আগে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ শক্ত হয়ে গেলে বীজের গুনগত মান হ্রাস পেতে পারে।
ফলনঃ
উন্নত জাত চাষ করতে পারলে ও সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে বীজের ফলন ভালো হয়।
সাধারনত প্রতি হেক্টরে ১-৩ টন বীজ পাওয়া যায় এবং কাচা মটরশুটির ফলন হয় প্রায় ১০-১৪ টন।
আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।