আপনি কি নতুন জমি কিনছেন? কেনার আগে জানুন এই তথ্য গুলি

আপনারা সবাই জেনে থাকবেন যে, আজকাল জমি বা প্লট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই।  কলকাতা ও আশপাশে তো বটেই, সারাদেশে প্রায় ঘটছে এমন প্রতারণার ঘটনা। জমি-জমা নিয়ে নকল, জালিয়াতি, প্রতারণা লেগেই আছে। আর সেই সাথে বাড়ছে পারিবারিক মামলা, সামাজিক কলহ, মারামারি সহ নানা ঘটনা দূর্ঘটনা।  

জমি বা প্লট কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে আপনি খুব সহজেই এগুলো থেকে হাত থেকে রক্ষা পেতে পারবেন। আজ আমরা আপনাদের সাথে জমি কেনার ব্যাপারে কি কি বিষয় দেখে নিতে হবে তার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো।  

 

জমি কেনার আগে কি কি টিপস জানা দরকার?

আমরা বসবাসের জন্য বা কাজের প্রয়োজনে জমি বা ফ্ল্যাট কিনে থাকি। তাই ওই স্থানটি যেন ঝামেলাবিহীন হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।

কারণ এতে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বা দুঃখ-দুর্দশা জড়িত থাকে। তাই জমি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা অতি জরুরি। আসুন দেখে নিই জমি কেনার আগে কি কি বিষয় খুবই দরকারী।

 

১. বিক্রেতার আইনসঙ্গত দখল এবং তা হাতেনাতে তদন্ত করে যাচাই করাঃ

এটাই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন।  জমির মালিকানার জন্য শুধুমাত্র নিছক দখল অথবা মৌখিক দাবিই যথেস্ট নয়।  নানানভাবে আপাতদৃষ্টিতে সঠিক মালিকানাও সঠিক নাও হতে পারে। জমির মালিকানা জনিত সমস্যার কয়েকটি উদাহরণ হলঃ

– প্রকৃতপক্ষে মালিক হলেও মালিকানার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঘাটতি

– প্রকৃতপক্ষে মালিক কিন্তু সরকারী রেকর্ডে ভুল তথ্য

– মালিকানার অন্য উত্তরাধীকারী রয়েছে। 

– সঠিক মালিক কিন্তু পূর্ববর্তী বিক্রেতা ঝামেলা করেছিল

– সরকারি বা দখল করা জমি

– সীমানা নিয়ে বিরোধ আছে

– জমি কোন ব্যাংকে বন্ধক রাখা আছে 

– জমি ইতিমধ্যে আরেক ক্রেতার কাছে বায়না বা বেচা হয়ে গেছে

– কাউকে না জানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে

জমি কেনার আগে অবশ্যই এই বিষয়গুলো যাচাই করবেন। কোন সমস্যা পেলে সেই জমি কিনবেন না। 

 

২. সরকারি ভূমি অফিসের রেকর্ড অনুসারে প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতাঃ

জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য খুবই ছোট একটা স্লিপ লাগে। এটা হলো খাজনা রশিদ বা ল্যান্ড ট্যাক্স রিসিপ্ট। ভূমি ও জমির মালিকরা তহশীলদার অফিসে গিয়ে প্রতি বছরে একবার করে সরকারি রাজস্বে খাজনা দেন। এ রশিদ তারই প্রমাণ। 

একটি জেলা ভূমি অফিসের আন্ডারে ১০ থেকে ১২ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থাকে। সেখানে তহশীলদার বসে। সকল ইউনিয়নের ট্যাক্সের জমা রাখা এবং হালনাগাদ তার হাতেই। সিটি এলাকায় কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রিসিপ্ট মালিকানার বড় দলিল।  তবে এ রিসিপ্টই শেষ কথা না। এটার সূত্র ধরে আপনি জমির ইতিহাসও জানতে পারবেন। 

৩. রেজিস্ট্রেশন অফিসের তালিকায় মালিকানার চেইন দলিলঃ 

সকল ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিক্রেতা তিনভাবে জমির মালিক হতে পারে। এগুলো হল – নিজে ক্রয়, কারো দান বা সম্পদের বাটোয়ার। আর এই ৩ টি ক্ষেত্রেই যথাযথ দলিল ও তার রেজিস্ট্রেশন থাকা লাগবেই। বাবার বা ভাই বোনের বাটোয়ারার দলিল না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আপনার উচিত এগুলো এড়িয়ে চলা।

 

বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করে এগুলো নিয়ে অবশ্যই যাচাই করবেন। সকল জমির তথ্য সরকারি রেজিস্ট্রি অফিসে থাকে। একটি জেলার ভিতরে উপজেলা, উপজেলার ভিতরে মৌজা এবং জমির দাগ নাম্বার।

 

একটি মৌজায় একজন মালিকে্র এক বা একাধিক দাগে সকল জমির পরিমানের সনদই হল খতিয়ান। সকল ঝামেলা শেষে জমির মালিককে সরকারীভাবে মালিকানার ব্যাপারে এটা এক ধরনের ডিক্লারেশন সনদ। জমির কেনার আগে এটাও যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।

 

৪. জমির অবস্থান এবং আশেপাশের পরিবেশঃ

জমি কেনার সময় অবশ্যই আশেপাশের পরিবেশেও খেয়াল রাখবেন। আপনার জমিটা যাতে রাস্তার উপরেই হয়। জমির চারদিকে কত দূরত্বের মাঝে বাজার, স্কুল, দোকান, হাসপাতাল, ইত্যাদি আছে, খুব ভাল করে খোঁজ নিবেন।

উঁচু দেখে জমি কিনবেন যাতে বর্ষায় ডুবে না যায়। জমির অবস্থান যাতে কোন কল কারখানার পাশে না হয়, যাচাই করবেন।

জমি কিনতে গিয়ে আমরা প্রায়ই বিভ্রান্ত হই। অথচ এই সামান্য টিপসগুলো মাথা রাখলেই আমরা এগুলো সহজেই এড়াতে পারি। 

এই বিষয়গুলি সবাইকে জানাতে আপনার ফেসবুক থেকে শেয়ার করুন, যাতে করে এমন হাজারো মানুষ এই লেখা পড়ে উপকৃত হবে। আগামীতে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top