কৃষিজমি কেনার জন্য জরুরী আইনী পরামর্শগুলি

কৃষি জমি আমাদের কাছে এক মূল্যবান সম্পদ। রাজ্যের অনেক মানুষই কৃষি জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এক এক প্রকার জমিতে এক এক রকম ফসল হয়ে থাকে। তাই আমরা কিছুটা সঞ্চয় হাতে আসলেই কিছু কৃষি জমি কেনার কথা ভাবি। আর ভাবি যে, কৃষি জমি থাকলে অন্তত ফসল ফলিয়ে খাওয়া যাবে। এসব দিক চিন্তা করেই অনেকেই কৃষি জমি কেনার ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। 

 

কিন্তু সবকিছু বুঝে শুনে জমি না কিনলে অনেক সময় জমি বেহাত হয়ে যায়। টাকা গচ্ছা যাবার পরেও জমি মেলে না। এর মূল কারণ হলো, জমি কেনার সময় ভালো ভাবে এর আইনি দিকগুলি যাচাই করে না দেখা। এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতারক মানুষকে জমি বিক্রি করে হয়রানির মুখে ফেলে। তাই, আমাদের সবার উচিত কৃষি জমি কেনার আগে এর আইনি সকল বিষয় ভালো ভাবে খতিয়ে দেখা। 

 

আমরা এই সাইটে আপনাদের জন্য নিয়মিতভাবে পশ্চিমবঙ্গের জমি সংক্রান্ত নানা গুরুত্বপূর্ন বিষয় তুলে ধরি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে কৃষি জমি কেনার আগে কি কি আইনি বিষয় দেখতে হবে তার বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আমরা দেখার চেষ্টা করবো, কিভাবে কাজ করলে জমি কেনার পর আর কোন আইনি সমস্যায় পড়তে হবে না। আসুন দেখে নি, জমি কেনার আগে কিছু আইনি বিষয়। 

 

কৃষি জমি কেনার আগে কি কি বিষয় দেখে নিতে হবে? 

 

১) সরকারী নিবন্ধিত রেকর্ড বা খতিয়ান কার নামে আছে।খতিয়ানে অন্য কারো নামে থাকলে ঐ জমি কেনা যাবে না। 

 

২) জমি খতিয়ান অনুযায়ী নকশা ঠিক আছে কিনা।জমির খতিয়ানে উল্লেখিত বিবরন নকশার সাথে না মিললে ঐ জমি কেনায় ঝামেলা হতে পারে। 

 

৩) জমির মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, উক্ত দাগে জমির পরিমান জানতে হবে। ঐ মৌজা নাম্বার, খতিয়ান নাম্বার জমির দলিলের সাথে মিলে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। 

 

৪) জমি বিক্রেতা ক্রয়সুত্রে জমির মালিক হয়ে থাকলে তার ক্র্য়দলিল রেকর্ডের সাথে মিলে কিনা দেখে নিতে হবে।

 

৫) জমি বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হয়ে থাকলে সর্বশেষ খতিয়ানে তার যোগসূত্র নিশ্চিত হতে হবে। সর্বশেষ খতিয়ানে পূর্বের মালিকের নাম থাকতে হবে। 

 

৬) উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রেতার শরিকদের সাথে সম্পত্তি ভাগাভাগির বন্টননামা দেখে নিতে হবে।বন্টননামায় বিক্রেতা কতটুকু সম্পত্তির মালিক হবে তা বর্তমান জমির সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। 

 

৭) বিক্রেতার কাছ থেকে সংগৃহিত দলিল, খতিয়ান ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে।অনেক সময় প্রতারক চক্র জাল দলিল বানিয়ে জমি বিক্রি করার চেষ্টা করে থাকে। 

 

৮) উক্ত জমির সর্বশেষ খাজনা দাখিলের রশিদ যাচাই করতে হবে। জমির খাজনা বকেয়া থাকলে আর বকেয়া খাজনা সহ জমি কেনা হলে পুর্ববর্তী সকল খাজনা মেটানোর দায় ক্রেতার। তাই জমি কেনার আগে খাজনা বকেয়া আছে কিনা দেখে নিতে হবে। 

 

৯) জমিটির কোন মামলা আছে কিনা, কখনো নিলাম হয়েছে কিনা তা জেনে নিতে হবে। মামলা চলাকালীন অবস্থায় জমি বিক্রয়যোগ্য নয়। 

 

১০) বিবেচ্য জমিটি সরকারী অধিগ্রহনের জন্য নোটিশকৃত কিনা তা ভূমি অফিস থেকে জেনে নিতে হবে। 

 

১১) বিবেচ্য জমিটি ঋনের দায়ে কোন ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ কিনা জেনে নিতে হবে।  

 

১২) বিক্রেতার নামে জমিটি মিউটেশন করা আছে কিনা। 

 

১৩) জমিটি বিক্রেতার দখলে আছে কিনা জেনে নিতে হবে। দখলে না থাকলে ঐ জমি দখল পেতে অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়।  

এভাবে কৃষি জমি কেনার আগেই সকল কাগজপত্র খুব ভালো ভাবে যাচাই করে নিতে হবে। এতে করে ক্রেতা পরবর্তীতে হয়রানির স্বীকার হবার সম্ভাবনা থাকবে না। সেই সাথে কোন প্রতারক চক্র জমি নিয়ে প্রতারনা করার সুযোগ থাকবে না।

আগামীতে আমরা এই বিষয়ে আরো অনেক বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। পশ্চিমবঙ্গের জমি নিয়ে আরো অনেক বিষয়াদি জানতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলি দেখুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top