হলুদ মসলা জাতীয় ফসল হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। এটি আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্য।
রান্নায় হলুদ ছাড়া রান্না কল্পনা করা যায় না। এছাড়া ও হলুদ বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী কাজে, রঙ এর কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এর অনেক ওষুধিগুন ও আছে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে হলুদ চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই হলুদ চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন হলুদ চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ (Easy Turmeric Cultivation Method in Bangla)
জলবায়ু ও মাটিঃ
হলুদ সাধারনত উষ্ণ এলাকার ফসল। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে হলুদ ভালো জন্মে। রোদ বেশি থাকলে সেখানে হলুদের কন্দ ভালো হয়।
তাপমাত্রা কম থাকলে বা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলে হলুদের বৃদ্ধি কমে যায়। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই হলুদ চাষ করা যায়।
তবে হলুদ চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। তবে হলুদ সাথী ফসল হিসেবে ও চাষ করা যায়। ছায়া যুক্ত স্থানে হলুদ চাষ করা উচিত নয় তাহলে ফলন কম হয়।
মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ থাকলে ফলন ভালো হয়। মাটির অম্ল ৫-৬ হওয়া উচিত।
বীজ শোধনঃ
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নেয়া ভালো। তাহলে হলুদের কন্দ পচা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বীজ শোধন করার আগে এক লিটার জলে ২০ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ডারথেন এম ছত্রাকনাশক গুলে নিতে হবে । তারপর তাতে হলুদের কন্দ ভিজিয়ে রাখতে হবে।
৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর সেগুলো জল থেকে তুলে নিতে হবে এবং বাশের চটার উপর শুকাতে দিতে হবে ছায়ার মধ্যে।
তারপর সেগুলো নিয়ে জমিতে রোপন করতে হবে।
বীজ বপনের সময়ঃ
সাধারনত চৈত্র মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজ বপনঃ
বীজ সারিতে বপন করতে হবে। বীজ বপন করার সময় প্রতিটি বীজ ১৫-২০ গ্রাম ওজনের হতে হবে।
এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি, এক বীজ থেকে আরেক বীজের দূরত্ব হবে ২৫ সেমি। বীজ ৫-৬ সেমি গভীরে রোপন করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে সাধারনত ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়ে থাকে। কন্দ লাগানোর পর ভেলী দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমির উর্বরতা অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে গোবর দিতে হবে ৪-৬ টন, ইউরিয়া দিতে হবে ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১৭০-১৮০ কেজি, এমওপি দিতে হবে ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ১০৫-১২০ কেজি।
জমি তৈরি করার সময় গোবর সার, টিএসপি ও জিপসাম মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
জমিতে কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ করার পর জমির মাটি হালকা ভাবে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে দিতে হবে। সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিতে হবে।
মালচিংঃ
হলুদের কন্দ জমিতে রোপন করার পর জমিতে মালচিং করে দিলে ভালো হয়।
কন্দের উপর ৫-৬ সেমি মোটা করে বিভিন্ন খড়, লতা পাতা ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, একে মালচিং বলে। জমিতে মালচিং করা হলে জমিতে রস থাকে।
তাই মাটি ক্ষয় কম হয়। আর মালচিং প্রয়োগ করার কিছু দিন পর সেটা পচে গিয়ে জমিতে জৈব সার বৃদ্ধি করে।
সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ প্রয়োগ করতে হবে। মাটি যদি শুকনা থাকে তাহলে বীজ বপন করার পরেই জমিতে সেচ দিতে হবে।
তবে জমি বেশি ভেজা রাখা যাবে না তাহলে কন্দ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জমিতে যেন অতিরিক্ত জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য নালা তৈরি করে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হলুদ সাধারনত দীর্ঘমেয়াদের ফসল তাই এর জমি কিছুদিন পর পরই নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করে দিতে হবে।
বীজ বপন করার ৩-৪ দিন পর একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। তারপর আরো তিন থেকে চার বার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
উপরি সার প্রয়োগ করার আগে ও একবার নিড়ানি দিয়ে জমি আগাছ মুক্ত করে দিতে হবে।
এছাড়া উপরি সার দেওয়ার সময় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। এতে ফলন ভালো হয়।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
হলুদ গাছকে রোগ থেকে রক্ষা করতে হলে রোগমুক্ত কন্দ বাছাই করতে হবে। জমি যদি কোন রোগে আক্রান্ত হয় তবে সে জমিতে হলুদ চাষ করা যাবে না।
হলুদ চাষে জমি শুকনা রাখতে হবে। জমিতে কোন রোগ বা পোকা আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপন করার ৯-১০ মাস পর হলুদ গাছের পাতা শুকিয়ে যাওয়ার পর হলুদ সংগ্রহ করা যায়।
জানুয়ারি মাসের শেষ হতে মার্চ মাসের প্রথম পর্যন্ত হলুদ সংগ্রহ করা যেতে পারে। সঠিক সময়ে হলুদ সংগ্রহ করা উচিত।
ফলনঃ
ঠিক উপায়ে চাষ করতে পারলে সাধারনত এক হেক্টর জমি থেকে ২৫-৩০ টন কাচা হলুদ পাওয়া যায়।
প্রতি ১০০ কেজি কাচা হলুদ থেকে ২৫-৩০ কেজি করে শুকনা হলুদ পাওয়া যায়।