ভারতীয়দের ১১টি মৌলিক কর্তব্য কি কি জেনে নিন | 11 Basic Responsibilities on Indian Citizen

৪২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে মৌলিক দায়িত্ব বা কর্তব্যগুলি ভারতীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতি-নৈতিকতা এবং সাংস্কৃতিক আচরণের কোডের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ১১ টি মৌলিক কর্তব্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

যেগুলো ভারতের নাগরিকদের অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। একটি সুখী সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে নাগরিকদের শিক্ষামূলক ও সম্মানজনক আচরণ ছাড়া দেশ কখনো শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে পারবে না।

11 Basic Responsibilities on Indian Citizen in Bangla
11 Basic Responsibilities on Indian Citizen in Bangla

একটি দেশে বাস করতে হলে কিছু নাগরিক দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক। আজ আমরা ভারতে ১১ টি মৌলিক নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচবা করব।

আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ভারতীয় নাগরিকদের ১১ টি মৌলিক দায়িত্ব :-

মৌলিক দায়িত্বের সংজ্ঞা

মৌলিক দায়িত্ব বা কর্তব্যগুলি বলতে মূলত একটি দেশের সমস্ত নাগরিকের নৈতিক বাধ্যবাধকতা বোঝায়। ভারতে এখন ১১ টি মৌলিক কর্তব্য রয়েছে, যা সংবিধানের চতুর্থ ভাগের এ’-তে উল্লেখ আছে।

নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেমের প্রচার এবং ভারতের ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য এই মৌলিক কর্তব্য পালন অতি আবশ্যক।

মূলত, ভারতের নাগরিকদের মৌলিক দায়িত্বগুলি ভারতীয় সংবিধানের অংশ ছিল না, বাস্তবে, এগুলি ৪২ তম এবং ৮৬ তম সংবিধান সংশোধন আইন দ্বারা পরবর্তীতে যুক্ত করা হয়েছে।

মৌলিক অধিকার এবং কর্তব্যগুলির তালিকা এবং রাজ্যনীতি সম্পর্কিত নীতিগুলি ভারতীয় সংবিধানের একটি অংশ যেখানে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের কি কি দায়িত্ব রয়েছে, সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দেওয়া বাধ্যতামূলক তার উল্লেখ রয়েছে।

এবং একইসাথে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে তার বিস্তৃত বিবরণ রয়েছে। সংবিধানের এই অংশ থেকে ভারতের রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের মধ্যেকার পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা লাভ করা যায়।

যেহেতু ভারতের নাগরিকরা রাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য দেশের প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা, নাগরিক অধিকারপ্রাপ্ত হবেন, তাই তাদেরও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক।

ভারতে নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্য তালিকা


১.সংবিধান মেনে চলা এবং জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান প্রদর্শন করা


২. স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ অনুসরণ করা


৩. ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা রক্ষা করা


৪. দেশকে রক্ষা করা


৫. জাতীয় পরিসেবাগুলো সরবরাহ করা


৬. জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা


৭. প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করুন


৮. বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিকাশে সহায়তা করা


৯. সরকারী সম্পত্তি রক্ষা করুন


১০. শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রাম


১১. দেশের সমস্ত অভিভাবকরা তাদের ৬-১৪ বছর বয়সী বাচ্চাদের অবশ্যই স্কুলে পাঠাবে।

মৌলিক কর্তব্যগুলির প্রয়োজন এবং চালুর সময়

মৌলিক দায়িত্বগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৭৬ সালে, দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পর স্মরণ সিং কমিটি কতৃক এই অন্তর্ভুক্তিকরণ করা হয়েছে যা ইন্দিরা গান্ধী কতৃক গঠিত হয়েছে।

যদি মৌলিক কর্তব্য লঙ্ঘন হয় তবে সংবিধানের ৫১ এ অনুচ্ছেদে এটিকে সংবিধানের অবমাননা হিসাবে গণ্য করা হবে যা জাতীয় সম্মান প্রতিরোধ আইন, ১৯৭১ এর অধীন এ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে ভারতের নাগরিকদের সাংবিধানিক দায়িত্বগুলি ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক কর্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন।

ভারতীয় সংবিধান নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং কর্তব্যগুলির তালিকা সরবরাহ করে। এবং প্রত্যেক নাগরিক যাতে এই অধিকারগুলি পায় এবং সকল।রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরবরাহ করা সম্ভব হয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করা।

এই দায়িত্বগুলি নীতিবোধ, নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক আচরণবিধি অনুসারে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে এই দায়িত্বগুলো পালনের মাধ্যমে জনগণ আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য এবং অখণ্ডতা রক্ষা করতে পারে।

শুধু দায়িত্ব পালন নয়, দায়িত্ব অনুসারে নিজেদের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এটি সরকারকে সুশাসন বজায় রাখতে এবং একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।

মৌলিক কর্তব্য আইনত বাধ্যতামূলক না করার কারণ

ভারতে নাগরিকদের ১১ টি মৌলিক দায়িত্ব আইনত বাধ্যতামূলক না করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ সঠিক কারণ, দেশের বেশীরভাগ নাগরিক সংবিধান সম্পর্কে ধারণা রাখেন না।

তারা বেশীরভাগই অশিক্ষিত এবং নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। এজন্য ভারতে নাগরিকদের ১১ টি মৌলিক দায়িত্ব পালন আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়।

এটা করা হলে দেশে বিশৃঙ্ক্ষলা দেখা যেত এবং অনেক নাগরিক হ্যারাজমেন্টের স্বীকার হত। দেশের সচেতন ও শিক্ষিত নাগরিকরা নিজে থেকেই তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করবেন আশা করি।

 

যদিও এই দায়িত্বগুলি আইনত মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়, তবুও সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ কারণ-

ভারতে নাগরিকদের এই ১১ টি মৌলিক দায়িত্ব পালন তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বগুলো পালন না করলে কোন নাগরিক আইনের আওতায় আসবেন না যদিও, কিন্তু দেশদ্রোহী যেকোন কাজের জন্য তারা,আইনের আওতায় আসবেন।

এই মৌলিক দায়িত্বগুলো সম্পর্কে যখন কোন নাগরিক জানতে পারবেন এবং সেগুলো অনুসরণ করবেন তখন তারমধ্যে দেশের প্রতি ভালবাসা ও আনুগত্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

মানুষে মানুষে ভাতৃত্ববোধ, দেশের জনগণকে বিভিন্ন পরিসেবা প্রদান, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সম্মান প্রদর্শন, সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, এই কাজগুলো করার মাধ্যমে শুধু দেশ নয়, নিজের চারপাশ পরিবর্তিত হবে। যখন একজন মানুষ তার নিজের উন্নতি করে তখনই সে তার পরিবার, সমাজ এবং দেশের উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে।

দেশের নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা, ভাতৃত্ববোধ, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ, এগুলো গড়ে উঠলে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। ভারত একটি জনবহুল দেশ।

এখানকার মানুষ শিক্ষিত, কর্মঠ, সংস্কৃতিমনা এবং দেশপ্রেমিক হলে দেশের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতি পাবে। নাগরিকরা সচেতন হলে দেশের পক্ষে যেকোন কাজ এবং বিপর্যয় মোকাবেলা করা সহজ হ য়ে যায়।

আর এই বোধ নাগরিকদের মধ্যে জাগ্রত করতেই মূলত নাগরিকদের ১১টি মৌলিক দায়িত্ব সংবিধান এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেষ কথা

একটি দেশের রাষ্ট্র এবং নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের একটি সেতুবন্ধন রয়েছে। রাষ্ট্র যেমন আমাদেরকে নাগরিক সুবিধা এবং অন্যান্য অধিকার প্রদান করে তেমনি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদেরও রয়েছে দায়িত্ব যা পালন করা একান্ত উচিত।

যদিও মৌলিক দায়িত্ব পালন আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়। তবে তা পালন আমাদের ব্যক্তিজীবনে আনুগত্যশীল, গোছালো, শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিমনা হতে সাহায্য করে। নিজেদের নীতি, নৈতিকতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে নিজেদের মৌলিক নাগরিক দায়িত্ব অবশ্যই পালন করা উচিত।

সুপ্রিয় পাঠক পোস্টটি পড়ে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top