মূলা একটি অতি পরিচিত সবজি বিশেষ। সাধারনত এর মূল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়।
আবার সালাদ হিসেবে ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এর আলাদা গন্ধের কারণে তরকারিতে অনেকেই একে পছন্দ করে না। এতে ভিটামিন এ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে মূলা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই মূলা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন মূলা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিতঃ
জমি ও মাটিঃ
মূলা চাষে মাটি সাধারনত উচু, মাঝারি উচু ও মাঝারি নিচু হতে হয়। জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে। জমিতে জল জমে থাকা যাবে না।
সাধারনত দোআঁশ মাটি মূলা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এটেল মাটিতে মূলা চাষ করা যাবে না। তাহলে মূলার ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জমিতে ছাই ও জৈব সার এর পরিমান বেশি থাকতে হবে। তাহলে মূলার ফলন ভালো হয়।
বীজ বপনের সময়ঃ
সাধারনত আশ্বিন মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত মূলার বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
বীজের পরিমানঃ
এক হেক্টর জমিতে সাধারনত ২.৫-৩ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বীজ বপন পদ্ধতি
বীজ বপন করার জন্য জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। বীজ সাধারনত ছিটিয়ে বপন করা যায়।
আবার সারিতে ও বপন করা যায়। তবে সারিতে বপন করলে বীজের যত্ন নেওয়া সুবিধা হয়। সারিতে বপন করার সময় এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ২৫-৩০ সেমি।
সার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। এক শতক জমিতে ইউরিয়া দিতে হবে ১.২-১.৪ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ১-১.২ কেজি, এমওপি দিতে হবে ০.৮৫-১.৪ কেজি, গোবর দিতে হবে ৩২-৪০ কেজি।
জমি তৈরি করার সময় সবটুকু জৈব সার ও টিএসপি সার এবং অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার ২ কিস্তিকে প্রয়োগ করতে হবে।
এক কিস্তি দিতে হবে বীজ বপন করার তৃতীয় সপ্তাহ পর এবং পরের কিস্তি দিতে হবে পঞ্চম সপ্তাহ পরে। মূলা চাষে জমিতে বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে।
এক হেক্টর জমিতে ১০-১৫ কেজি বোরিক এসিড প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর জমিতে জল সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগঃ
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। জমিতে যদি রসের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে সেচ দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর মাটি চটা বেধে থাকলে তা ভেঙে দিতে হবে।
শুকনা মৌসুমে জমিতে ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। এছাড়া ফুল আসার সময় ও ফল বড় হতে শুরু করলে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমানে জল সেচ দিতে হবে। যাতে মাটিতে রসের অভাব না হয়।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য নালা তৈরি করে দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে আগাছা দমন করে দিতে হবে। জমিতে বীজ বপন করার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমির আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
জমিতে সেচ দেয়ার আগেই জমির আগাছা বাছাই করতে হবে। নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনে মাটি আলগা করে দিতে হবে যেন মাটিতে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
জমিতে বীজ বপন করার এক সপ্তাহ পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। প্রতি ৩০ সেমি পর পর একটি করে চারা রাখতে হবে।
চারা বেশি ঘন হয়ে গেলে গাছের বৃদ্ধি বাধা গ্রস্ত হয়ে পড়ে। এতে ফসলের ফলন কমে যাবে এবং ফসলের মান কম উন্নত হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনাঃ
মূলা চাষে সাধারনত জমিতে পাতার বিটল নামক এক ধরনের পোকা আক্রমন করে থাকে। এ পোকা পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা দমনে জমিতে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
এই কীটনাশক জমিতে এক লিটার জলে ৫ শতক হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া করাত মাছি নামে এক ধরনের পোকা আক্রমন করে। বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা ও পাতা খেয়ে থাকে।
বীজ তৈরি করার সময় জাব পোকা ফসলের ক্ষতি করে থাকে। এই পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
এই কীটনাশক ১০ লিটার জলের সাথে ৫ শতক হারে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে। ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া মূলার পাতায় অল্টারনারিয়া ও সাদা দাগ রোগ দেখা যায়।
এসব দমন করতে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। জমিতে বালাইনাশক ব্যবহার করার ৭-১৫ দিন পর্যন্ত ফসল খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হবে না।
তাই জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করার সময় যথেষ্ট সতকর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ফসল সংগ্রহঃ
ফসল পরিপক্ক হবার সাথে সাথেই তা সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। মূলা সাধারনত কচি অবস্থায় ই তুলতে হয়।
কচি অবস্থায় তুললে মূলার স্বাদ ভালো হয় এবং বাজারে ও ভালো চাহিদা পাওয়া যায়।
ফলনঃ
সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে এক হেক্টর জমিতে ৪০-৬০ টন মূলা পাওয়া যায়।