যৌন হয়রানি আইনি অভিযোগ ও প্রতিকার আইনি পরামর্শ

Know About Sexual Harassment Laws in India, ভারতে যৌন হয়রানি আইনি অভিযোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। জানুন কিভাবে অভিযোগ করবেন আর এই বিষয়ে ভারতীয় আইন কি বলে।

আমাদের দেশে যৌন হয়রানির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুল-কলেজ,রাস্তাঘাটে কোথাও মেয়েরা, নিরাপদ নয়।

যৌন হয়রানি মহিলাদের সমতা ও মর্যাদার অধিকারের চরম লঙ্ঘন করে সুতরাং, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন (Sexual Harassment Laws) কার্যকর করার পরে, সমস্ত কর্মস্থলের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল যাতে কোনও আক্রান্ত নারী এই কমিটিতে অভিযোগ করতে এবং সহায়তা চাইতে পারেন।

দেশে যে হারে যৌন হয়রানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার প্রতিকার করতে হলে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেশিরভাগ নারীরা এসব নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে চান না, ফলে এসব জঘন্য ব্যক্তিরা পার পেয়ে যায়।

Sexual Harassment Prevention Laws in India
যৌন হয়রানি আইনি অভিযোগ ও প্রতিকার আইনি পরামর্শ

কিন্তু যৌন হয়রানি আইনের অধীনে আক্রান্ত নারী চাইলেই হয়রানির ঘটনা ঘটার তিন মাসের মধ্যে আদালতে বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন। আজ আমরা যৌন হয়রানির মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলচনা করব। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

যৌন হয়রানি: ভারতীয় আইনের অধীনে অভিযোগ ও প্রতিকার

যৌন হয়রানি এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট

কর্মস্থলের আইনী যৌন হয়রানির ধারা ২ (ক) এর অধীনে একজন আক্রান্ত নারীকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে: “কর্মস্থলের ক্ষেত্রে, একজন মহিলা, যে কোনও বয়সের চাকুরীজীবী হোকনা কেন, তিনি যদি অভিযোগ করেন যে কর্মক্ষেত্রে তিনি কারো মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তাহলে উক্ত আইন অনুযায়ী এই যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই আইনটি কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত সমস্ত মহিলাকে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ডাক্তারের সহকারী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করে। মেয়েটির অধিকার রয়েছে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে আদালতে মামলা দায়ের করার।

এ ধরনের ঘটনা সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই ঘটে চলেছে, গার্মেন্টস, হাসপাতাল, অফিস, স্কুল-কলেজ সবখানেই নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আসছে। এটা নিয়ে সবসময় তারা প্রতিবাদও করেন না, কারণ আমাদের সমাজে যারা যৌন হয়রানি করে বা ধর্ষন করে তারা যতটা নিন্দিত তারচেয়ে হাজারগুণ নিন্দিত এবং নির্যাতিত হয় একটি মেয়ে।

মেয়েটাকে সমাজ খারাপ, ধর্ষিতা মেয়ের আখ্যা দিয়ে দেয়। অথচ চিত্রটি হওয়া উচিত ছিল অন্যরকম, ধর্ষিতা বা নির্যাতিতা নয়, নির্যাতন বা ধর্ষনকারীকে সমাজে নিন্দার পাত্র এবং আইনের আওতায় আনা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন কারণেই এগুলো কিছুই ঘটে না।

ভারতের পারিবারিক হিংসার আইন ব্যাবস্থা

ভারতের ডিভোর্সের আইনি পদ্ধতি

ভারতে গর্ভপাত বৈধ নাকি আইনত অপরাধ

বহুবিবাহ কি বৈধ? জানুন বহুবিবাহ আইন

কারা অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন

কোন ধরনের নারীরা অভিযোগ করতে পারবেন এর উত্তরে বলা হয়েছে, এই আইনের ৯ নং ধারা অনুযায়ী যে এই আইনের অধীনে সবাই অভিযোগ দায়ের করার অধিকার রাখে।

যৌন হয়রানি আইনি অভিযোগ ও প্রতিকার আইনি পরামর্শ
যৌন হয়রানি আইনি অভিযোগ ও প্রতিকার আইনি পরামর্শ

নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা আইসিসির কাছে [আন্তর্জাতিক অভিযোগ কমিটি] (১) তে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারেন: একজন যৌন হয়রানির শিকার মহিলা নিজে থেকে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির সদস্যের সহায়তায় মামলা দায়ের করতে পারবেন।

শারীরিক অক্ষমতা, মানসিক অক্ষমতা বা তার মৃত্যুর কারণে যখন কোনও আক্রান্ত মহিলা নিজেই অভিযোগ করতে না পারেন, নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা অভিযোগ করতে পারেন- যৌন হয়রানীতে আক্রান্ত মহিলা তার আইনজীবী কতৃক আদালতে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

এছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিরা যারা ভিকটিমের কাছের মানুষ তারাও চাইলে ভিকটিমের হয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানি (নিষেধ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার) বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ৬ এর বিধি অনুসারে, শারীরিক অক্ষমতা,মানসিক অশান্তি অথবা ভিকটিম যদি অত্যাচারের কারণে নিজে অভিযোগ করতে না পারে, সেখানে পরিবারের সদস্য, আত্নীয়, বন্ধু-সহকর্মীরা ভিক্টিমের হয়ে আদালতে অভিযোগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অভিযোগের স্বপক্ষে সাক্ষী-প্রমাণ বিবেচ্য।

যৌন হয়রানি অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া

আইনটির চতুর্থ অধ্যায়ে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলেও অভিযোগের জন্য কোনও নির্ধারিত প্রক্রিয়া নেই। ঘটনার তারিখ থেকে ৩ মাসের মধ্যে একটি অভিযোগ দায়ের করতে হবে। যদি ঘটনাটি অনেকদিন থেকেই ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকে, বারবার সতর্ক করার পরেও অভিযুক্তরা

একইভাবে যৌন হয়রানি করতেই থাকে, তবে এই জাতীয় ঘটনার শেষ ঘটনার তারিখ থেকে ৩ মাস গণনা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই আদালতে ভিকটিম অথবা ভিকটিমের আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী বা আইনজীবী কতৃক মামলা দায়ের করতে হবে।

পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ
যৌন হয়রানি অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া

উদাহরণস্বরুপ: বলা যেতে পারে- ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কর্মরত একজন মহিলা তার পুরুষ সুপারভাইজারের কাছ থেকে অশ্লীল কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। প্রথম ঘটনাটি ৪ই জানুয়ারী ২০১৯ এ ঘটেছিল, দ্বিতীয় ঘটনাটি ৯ ই ফেব্রুয়ারী ২০১৯ এ ঘটেছিল এবং তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছিল ১০ ই মার্চ ২০১৯ সালে।

এখন যৌন হয়রানির শিকার নারী যদি মনে করে তিনি এই হয়রানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবেন, তাহলে শেষ ঘটনাটি থেকে ৩ মাসের মধ্যে অভিযোগ করতে পারবেন, অর্থাৎ ১০ ই মার্চ ২০১৯ থেকে ১০ জুন ২০১৯ সালের মধ্যে।

প্রাথমিক অবস্থায় অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটির সদস্যদের কাছে অভিযোগটি করা উচিত। অভিযোগটি বিস্তারিত এবং সহজ ভাষায় লেখা উচিত এবং ঘটনার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ যেমন তারিখ, সময়, স্থান, সাক্ষী ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অভিযোগকারী অভিযুক্তকে তার হয়রানি এবং গর্হিত কাজ বন্ধ করতে বলেছিল কিনা।

নাম, পদবী ইত্যাদির মতো অভিযুক্তের বিবরণ অবশ্যই অভিযোগে উল্লেখ করতে হবে। পরিশেষে, অভিযোগকারী অভিযুক্তের কাছ থেকে কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ চান সেটাও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করতে হবে।

আইসিসি আন্তর্জাতিক অভিযোগ কমিটি যখন কোনও অভিযোগ তদন্ত করে, তখন তার ক্ষমতা দেওয়ানি আদালতের সমতুল্য। ক্ষমতা বিভাগ ১১ (৩) এ এই বিষয়ের দেওয়া হয়েছে। আদালতে বিচার চলাকালীন সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে মামলার বাদী-বিবাদী এবং সাক্ষী যেকোন ব্যক্তিকে যেকোন শুনানির দিন সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আদালতে হাজির হতে বলা হয়।

এই তদন্তে জমাকৃত নথি পর্যালোচনা, বিভিন্ন প্রমাণাদি ও আলামত সংগ্রহ, ইত্যাদির মাধ্যমে মামলার সত্যতা এবং অপরাধীর অপরাধ প্রমাণ করা হয়। যদি বাদী চাকরিজীবী হয় তবে ঘটনার ৭ দিনের মধ্যে পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হবে।

যদি বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষই চাকরিজীবী হয় তবে মামলার তদন্ত চলাকালীন তাদের শুনানি এবং সাক্ষ্যগ্রহনের সুযোগ প্রদান করা হবে।

শেষ কথা

যৌন হয়রানি খুবই বিকৃত একটি কাজ যা বিশেষত নারীদের সম্মান-মর্যাদা এবং স্বাভাবিক জীবনকে নষ্ট করে দেয়। কিন্তু সম্মান নষ্টের ভয়ে যদি চুপ করে থাকা হয় তাহলে এসব বখাটে এবং বিকৃতমনাদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই যাবে।

তাই যৌন হয়রানি বন্ধে আওয়াজ তুলুন। তাতে কাজ না হলে ঘটনার ৭ দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যেই পুলিশ অথবা যৌন নির্যাতন বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করুন।

এ ব্যাপারে পুলিশ এবং আদালত সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। তাই দেরী না করে আইনের সহায়তা নিন। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি যৌন হয়রানির প্রতিকারে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

সুপ্রিয় পাঠক এই আইনি পরামর্শ সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানাতে ভুলবেন না। এরপর কোন বিষয় নিয়ে জানতে চান তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। আমরা পরবর্তীতে সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে হাজির হব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top