কোন কোন স্থানে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি? জেনে নিন

সারাবিশ্ব এখন করোনা আতঙ্কে নির্জীব। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদের পক্ষে সতর্কতা মেনে সবসময় বাড়িতে অবস্থান করাটাও আর সম্ভব হয়ে উঠছেনা।


মহামারী সময়ে যদিও অনেকদিন সারাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ছিল বিধায়, এ সময়ে মহামারী এড়ানোর জন্য অনেক উপায় ও পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে।


কিন্তু এর কোনটিই এতটাও কার্যকর নয় যে, তা করোনা থেকে বাচার নিশ্চিত কোন গ্যারান্টি প্রদান করে। তাই জীবন বাচাতে এবং কাজকর্ম চালিয়ে নিতে যেখানেই আমরা যাই না কেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।


লোক সমাগম যেখানেই বেশী সেখানেই সংক্রমণ ঝুঁকিও বেশী। কিন্তু এই ঝুঁকি এড়াতে সব স্থানে যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব যে, কোথায় কোথায় ঝুঁকি বেশী, আর সেখানে আরও বেশী সতর্ক থাকাটা সম্ভব।


আর আজ আমাদের লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কোথায় বেশী সেই স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করা। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।

 

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেসব স্থানে বেশী:

 

১. রাস্তার পাশের খাবারের দোকানেই

সমস্ত ধরনের খাবারের দোকানেই লোকসমাগম অনেক হয়ে থাকে। কিন্তু রাস্তার পাশের খাবারের দোকানগুলোতে সংক্রমণের ঝুঁকি অন্যান্য জায়গার চেয়ে বেশী কারণ, এখানে বাইরের যেকোন মানুষের আনাগোনাই বেশী, যেহেতু দোকানগুলো রাস্তার পাশেই অবস্থিত।


বাইরের ধুলা-বালি এবং ভাসমান জীবাণু সহজেই এসব খাবারে প্রবেশ করতে পারে। তাছাড়া এখানে দুরত্ব বজায় রেখে খাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়।


দোকানকে ঘিরেই খেতে হয়, অথবা একটা বেঞ্চে অনেকে একসাথে বসে খাবার খেয়ে থাকে। কয়েক ইঞ্চি দুরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হয়না।


খাবার খাওয়ার পর গ্লাস, প্লেট এগুলো ঠিকভাবে ধোয়াও এখানে সম্ভব হয়না। তাই সংক্রমণ এড়াতে রাস্তার পাশে বসে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এগুলো কোন অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন নয়, যে এই কাজটি করতেই হবে।


খুব খেতে ইচ্ছা হলে নিজে দাড়িয়ে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার তৈরি করা দেখে, খাবার প্যাক করে বাড়ি এনে খেতে পারেন।

 

২. পার্লার ও সেলুন

মহামারীর সময়ে লকডাউনের কারণে অনেকদিন যাবত সমস্ত সেলুন ও পার্লার বন্ধ ছিল। এগুলো এখন আস্তে আস্তে খোলা শুরু হয়েছে।


মেয়েরা বড় চুল রাখা পছন্দ করলেও ছেলেদের চুল একটু বড় হলেই দেখতে বেমানান লাগে। তাই তাদেরকে সেলুনে যেতেই হয়। কিন্তু বাড়তি যেসব কাজ, যেমন ম্যাসাজ, ফেসিয়াল, ও অন্যান্য রুপচর্চার কাজ এসময়ে বাড়িতেই করুন।


এগুলো পার্লারে বসে করানোয় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কারণ ফেসিয়াল করানোর সময় মুখে মাস্ক পরিধান সম্ভব নয়, আর যিনি ফেসিয়াল করাবেন তার থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব নয়। তাই এগুলো এ সময়ে না করানোই উচিত।

 

৩. শপিং মল ও মার্কেট

শপিং মল ও মার্কেটগুলোতে কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ থাকেনা। এখানে জিনিস কিনতে যাওয়ার সময় একে অন্যের সাথে ধাক্কা লাগা, ভীড়ের মধ্যে হাটা ইত্যাদি সব সমস্যারই সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে।


তাই এখানে আসার আগে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরে আসবেন। আর যদি সুযোগ থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় পণ অনলাইন শপ থেকে অর্ডার করে নিতে পারেন। করোনাকালীন সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের পণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেছে।


আপনিও সম্ভব হলে নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার-সদাই থেকে শুরু করে পোশাক, গহনা, আসবাবপত্র,ইলেকট্রনিক্স সবকিছুই অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন। এতে সময় বাচবে আর করোনার ঝুঁকি থেকেও বাচা সম্ভব হবে।

 

৪. সিনেমা হল

যেসব স্থানে জনসমাগম অধিক হয়ে থাকে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের সুযোগ থাকেনা, তারমধ্যে সিনেমা হল অন্যতম। এখানে মুভি শুরু হওয়ার সময়ও সবাই একসাথে হলে ঢুকতে চায়, আর বের হবার সময়ও।


আর হাউজফুল হলে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে৷ তাই মহামারীর সময়ে হলে গিয়ে মুভি বা থিয়েটার দেখা বন্ধ রাখাই উচিত। আর যদি একান্তই যেতে চান, তবে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, এবং সাথে স্যানিটাইজার নিন।


যখন সবাই মুভির শুরুতে হলে প্রবেশ করবে তখন ভীড়ের মধ্যে না গিয়ে একা ভীড় ফাকা হলে হলে প্রবেশ করুন। মুভি শেষ হলেও তাড়াহুড়ো করে সবার সাথে বের না হয়ে সবাই বের হলে তারপর বের হয়ে আসুন।

 

৫. সমাবেশ

সমাবেশ ও মিছিল মিটিঙে দুরত্ব বজায় রেখে চলা একেবারেই অসম্ভব। আর এখানে সবাই কোন বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা করে থাকে বিশেষত রাজনৈতিক সমাবেশে।


মহামারীর এই সময়ে এ ধরনের সমাবেশ, গণ-জমায়েত, মিছিল-মিটিং পরিহার করুন। আগে জীবন বাচাতে হবে, পরে সমাবেশ, মিছিল-মিটিং অনেক পাওয়া যাবে। এটা আমাদের কোন অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন নয়।

৬. আনন্দ ভ্রমন

করোনা মহামারীতে যখন প্রয়োজনীয় অনেক প্রতিষ্ঠান, চাকরির পরীক্ষা বন্ধ তখন কিছু মানুষ ছুটি পেয়ে পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র বা দূরের দর্শনীয় স্থানে ছুটি কাটাতে যাচ্ছে।


এখানে সাগরতীরে হাজারও মানুষ জমায়েত হয়, অন্যান্য দর্শনীয় স্থানেও প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। যেখানে সবাই নিজেদের মত আনন্দ করতেই ব্যস্ত। এখানে কাউকে দেখলে মনেই হবেনা বিশ্বে করোনার মত মহামারী চলছে।


নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে যদি মহামারীর সংক্রমন থেকে বাচাতে চান এ সময়ে সকল ধরনের আনন্দ ভ্রমণ পরিহার করুন। এটা জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়।

 

উপসংহার

আমরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নিজেদের কর্মক্ষেত্র, হসপিটাল, জরুরী সেবা কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হচ্ছি। যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সময়ে আমাদের সেবা দিচ্ছেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।


কিন্তু তাদের এই ত্যাগ স্বীকার ম্লান হয়ে যাবে, যদিনা আমরা নিজেদের বাড়তি সুবিধা ও আনন্দ ফূর্তির জন্য যেসব কিছু আমাদের বাচার জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয় সেখানে নিজেদের সময় ব্যয় করি, এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দি।


এজন্য এই সময়ে নিজের, পরিবারের এবং অন্যদের কথা ভেবে যথাসম্ভব প্রয়োজন মেটানোর বিকল্প রাস্তার কথা ভাবুন। নিজে সুস্থ থাকুন, এবং অন্যদের অনুপ্রেরণা দিন।


আশা করি কোন কোন স্থানে করোনা ঝুঁকি সর্বোচ্চ তা পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top