একটি জনপ্রিয় মসলা। খাবার সুস্বাদু করতে রান্নায় জিরার গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে জিরা শুধু রান্নায়ই নয় বিভিন্ন ওষুধ শিল্পে ও জিরার ব্যবহার রয়েছে। জিরায় রয়েছে আমিষ, ফ্যাট, আশ, শর্করা ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
আজ আমরা আপনাদের সাথে জিরা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই জিরা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন দেখে নিন জিরা চাষের পদ্ধতি বিস্তারিত:
মাটি ও জলবায়ুঃ
জিরা নাতিশীতোষ্ণ ও শুকনা আবহাওয়া পছন্দ করে থাকে। তবে ফল হবার সময় একটু ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার হয়।
জিরা চাষ করার জন্য উর্বর দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ মাটি খুবই উপযোগী। জমি সুনিষ্কাশিত হতে হবে।
রোপনের সময়ঃ
জিরা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফসল তবে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। সাধারনত শীতকালীন ফসল হিসেবে এটি চাষ করা হয়ে থাকে।
নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসে এর বীজ বপন করা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাসে গাছে ফুল আসে ও বীজ হয়।
তাই অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস জিরা বীজ বপন করার সবচেয়ে উপযোগী সময়।
বীজের হার ও বপনঃ
জিরা চাষে বীজ জমিতে ছিটিয়ে ও বপন করা যায় আবার সারি করে মাদায় ও লাগানো যায়। ছিটিয়ে বীজ বপন করা হলে প্রতি হেক্টরে বীজ লাগবে ১২-১৫ কেজি।
আর সারি করে মাদায় লাগালে বীজ লাগবে প্রতি হেক্টরে ৮-১০ কেজি।
এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ২৫×১৫ সেমি। জিরা বপন করার আগে ২-৩ দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে।
বপন করার সময় এক কেজি বীজের সাথে ২ গ্রাম করে প্রোভেক্স মিশিয়ে নিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। তারপর তাতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে নিয়মিত সার দিতে হবে। প্রতি হেক্টরে গোবর সার বা জৈব সার দিতে হবে ১০ টন।
শেষ বার চাষ দেয়ার আগে নাইট্রোজেন দিতে হবে ১০ কেজি, ফসফেট সার দিতে হবে ২০ কেজি। তারপর বীজ বপন করতে হবে।
বীজ বপন করার ৩০ দিন পরে আরো একবার নাইট্রোজেন সার দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর জমিতে হালকা সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমিতে আগাছা জমতে দেয়া যাবে না । নিয়মিত আগাছা দমন করতে হবে।
বীজ বপন করার ২৫-৩০ দিন পর জমিতে অতিরিক্ত চারা থাকলে তা তুলে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে চারার গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। বীজ বপন করার পর জমিতে যদি জো না থাকে তাহলে হালকা সেচ দিতে হবে।
প্রয়োজন পড়লে পরে আরো কয়েকবার সেচ দিতে হবে। মাটি শুকনা রাখা যাবে না। ফুল আসার পর বা জিরা পরিপক্ক হবার সময় মাটি শুকনা থাকলে ফলন ভালো হবে না।
তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যাবার জন্য।
রোগ ও বালাই ব্যবস্থাপনাঃ
জিরা গাছে সাধারনত বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা যায়। তার মধ্যে শুয়োপোকা, জাব পোকা, সাদা গুড়ো পোকা, ধ্বসা রোগ, ঝিমিয়ে পড়া রোগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
জিরার যখন ফুল ফোটার সময় হয় তখন এসব রোগ আক্রমন করা শুরু করে থাকে। তখন বৃষ্টি হলে এ রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে সারা জমিতে। লেদা পোকা গাছের পাতার শীষে আক্রমন করে।
পাতা কালো হয়ে যায় এবং তারপর মরে যায়। এ পোকার আক্রমনে প্রোভেক্স ২০০ নামক ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে হবে।
এটি ৩ গ্রাম পরিমান নিয়ে এক কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে তাহলে এই পোকা আক্রমন করার সম্ভাবনা কম থাকে।
জাব পোকা বা শুয়ো পোকার আক্রমনে গাছের বিশেষ ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। জাব পোকা পূর্ণ বয়স্ক পাতা, কচি কান্ড, ফুল, কুড়ি ও বোটা প্রায় সব জায়গায়ই আক্রমন করে থাকে।
এটি গাছের রস চুষে খেয়ে ফেলে। ফলে গাছ দূর্বল হয়ে যায় ও হলুদ হয়ে পড়ে। এ পোকার আক্রমনে ফুলের কলি ঝরে পড়ে এবং ফল ও ঝরে যায়।
এ জন্য সুমিথিয়ন বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ব্যবহার করতে হবে। এটি এক লিটার জলের সাথে ২০০ গ্রাম করে মিশিয়ে নিয়ে ১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করলে পোকার আক্রমন থেকে বাচা যায়।
ফসল সংগ্রহঃ
জিরা বীজ বপন করার ৮০-১২০ দিনের মধ্যেই জিরা পরিপক্ক হয়। গাছ হলুদ রঙ ধারন করলে, পাতা নেতিয়ে গেলে ও বীজ হালকা ধূসর বাদামি রঙ ধারন করলে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।
প্রতিটি গাছ খুব সাবধানে কাটতে হবে। ফসল পাকা মেঝেতে রেখে শুকাতে হবে। তারপর তা লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাছ থেকে আলগা করে নিতে হবে। তারপর চালুনি দিয়ে চেলে নিয়ে পরিষ্কার বীজ সংগ্রহ করা হয়।
ফলনঃ
উপযু্ক্ত উপায়ে চাষ করতে পারলে প্রতি হেক্টরে ৮০০-১০০০ কেজি করে ফলন পাওয়া সম্ভব ।