2023 বেগুন চাষ কিভাবে করবেন? জেনে নিন বেগুন চাষের পদ্ধতি

বেগুন খুব পরিচিত একটি সবজি। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। সারা বছরই বেগুন চাষ করা যায়। বেগুনের গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি লম্বা হয়। বেগুন পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। 

আমাদের বাংলাভূমি সাইটে নিয়মিত আমরা আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজেনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আপনাদের সাথে বেগুন  চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই বেগুন  চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

চলুন দেখে নেই বেগুন চাষের বিস্তারিতঃ 

মাটি ও জলবায়ুঃ 

বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ থেকে ভারী এটেল মাটি অর্থাৎ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুন চাষ করা যায়। বেগুন সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় ভাল ফলন দিয়ে থাকে। তাপমাত্রা এর কমবেশি হলে বেগুনের ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয়। শীতকালীন জলবায়ু বেগুন চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

চারা তৈরিঃ 

বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা করে তা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। বীজতলা এমন স্থানে তৈরি করতে হবে যেখানে বৃষ্টির জল দাড়াবে না এবং সব সময় আলো বাতাস পায় অর্থাৎ ছায়া মুক্ত হতে হবে।

বীজতলা তৈরির জন্য মাটি গভীর ভাবে চাষ দিতে হবে। বীজতলায় মাটি হতে হবে উব©র। জমিকে ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে। চাষের পর সম্পূর্ণ জমিকে কয়েকটি ছোট ছোট বীজতলায় ভাগ করে নিতে হবে। প্রতিটি বীজতলা দৈর্ঘ্যে ৩-৫ ঘন মিটার, প্রস্থে এক মিটার ও পাশ থেকে ১৫ সেমি ফাকা জায়গা রাখা উচিত।

পাশাপাশি দুটো বীজতলার মধ্যে ৫০-৬০ সেমি ফাকা জায়গা রাখা উচিত। এ ফাকা জায়গা থেকে মাটি নিয়ে বীজতলা উচু করে নিতে হবে। অল্প সংখ্যক চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা হিসেবে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিকের ট্রে অথবা বড় টব ব্যবহার করা যেতে পারে। 

বীজতলাতে বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে বোনা যেতে পারে। সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫ সেমি দিতে হবে। বীজ বোনার পর বীজতলার মাটি হালকা করে চেপে দিতে হবে। বীজতলাতে চারার দূরত্ব ২-৩ সেমি হলে চারার বৃদ্ধি ভালো হয়।

বীজ বোনার পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা ভাবে জল ছিটিয়ে সেচ দিতে হবে। প্রয়োজন হলে শুকনা খড় বা পলিথিন শীট বা বস্তা দিয়ে বীজতলা ঢেকে দেওয়া যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে সকাল ও সন্ধ্যায় হালকাভাবে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। চারা গজানোর পর ২-৩ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া উচিত।

জমি তৈরি ও চারা রোপণঃ 

মাঠের জমি তৈরির জন্য ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। ৩৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণের উপযোগী হয়। এছাড়া  বয়স একটু বেশি হলেও লাগানো যেতে পারে। চারা তোলার সময় যেন শিকড় নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বড় আকারের বেগুনের জাতের ক্ষেত্রে ৯০ সেমি দূরে সারি করে সারিতে ৬০ সেমি ব্যবধানে এবং ছোট জাতের ক্ষেত্রে ৭৫ সেমি সারি করে সারিতে ৫০ সেমি ব্যবধানে চারা লাগানো যেতে পারে। জমিতে লাগানোর পর পরই যাতে চারা শুকিয়ে না যায় সে জন্য সম্ভব হলে বিকালের দিকে চারা লাগানো উচিত।

সার প্রয়োগঃ 

বেগুন মাটি থেকে প্রচুর পরিমানে খাদ্য উপাদান শোষন করে। এজন্য বেগুনের জন্য সার খুবই প্রয়োজনীয়। সারের পরিমান মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে।

বেগুন চাষে প্রথম কিস্তিতে চারা লাগানোর ১০-২৫ দিন পর, দ্বিতীয় কিস্তি ফল ধরা আরম্ভ হলে এবং তৃতীয় কিস্তি ফল তোলার মাঝামাঝি সময়ে দিতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সার প্রয়োগের পর পরেই সেচ দিতে হবে।

সেচ ও জল নিষ্কাশন ব্যবস্থাঃ 

বেগুন গাছে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। বেলে মাটিতে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। তাছাড়া জমিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে বেগুনের জমিতে জল নিষ্কাসনের ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

অন্যান্য পরিচর্যাঃ 

বেগুনের ফলন নির্ভর করে পরিচর্যার উপর। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দিতে হবে। কোন ভাবেই জমিতে আগাছা জমতে দেওয়া যাবে না। আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ 

বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। এছাড়া কাটলে পোকা, জাব পোকা, ছাতরা পোকা, বিছা পোকা, কাটুই পোকা ইত্যাদি পোকা বেগুনের ক্ষতি করে।

ফল সংগ্রহ ও ফলনঃ 

ফল সম্পূর্ন পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে। ফল যখন পূর্ন আকার প্রাপ্ত হয় অথচ বীজ শক্ত হয় না তখন ফল সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। সংগ্রহের সময় ফলের ত্বক উজ্জ্বল ও চকচকে হবে। অধিক পরিপক্ক হলে ফল সবুজাভ হলুদ অথবা তামাটে রং ধারণ করে এবং শাঁস শক্ত ও স্পঞ্জের মত হয়ে যায়।

হাতের আঙুলের চাপ দিয়ে ও ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত কিনা তা নির্ধারণ করা যায়। এক্ষেত্রে দুই আঙুলের সাহায্যে চাপ দিলে যদি বসে যায় এবং আবার যদি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে তবে বুঝতে হবে বেগুন কচি রয়েছে আর চাপ দিলে যদি নরম অনুভূত হয়, অথচ বসবে না তাহলে বুঝতে হবে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে। বেশি কচি অবস্থায় ফল সিকি ভাগ সংগ্রহ করলে ফলের গুণ ভাল থাকে তবে ফলন কম পাওয়া যায়। 

ফলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিপক্ক হওয়ার কাছাকাছি পর্যন্ত ফল খাওয়ার উপযুক্ত থাকে। জাত ভেদে হেক্টর প্রতি ১৭-৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়।

আজ আমরা বেগুন  চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আগামীতে আপনাদের সাথে বেগুন চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন।

এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন। যাতে করে এই লেখা থেকে শিক্ষা নিয়ে বেগুন  চাষ করে অনেকেই আয় করার ব্যবস্থা করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top