শরীরের অন্যান্য সমস্যার মতো গ্যাসের সমস্যা (Gastric Problem) কিন্তু একটা বড় সমস্যা। বিভিন্ন রকম খাবার দাবারের মাধ্যমে আমাদের শরীরে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। তাছাড়া অনিয়মিত জীবনযাপনও গ্যাসের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। সাধারণ সমস্যা মনে করে এই বিষয়টাকে অনেকেই এড়িয়ে চলেন, আর এটাই পরে বড় রকমের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
এর ফলে বাড়তে পারে রোগ এবং বিভিন্ন রকমের দৈহিক সমস্যা। তবে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক রকম পথ থাকলেও দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু বদঅভ্যাস থেকে থাকে, যার কারণে শরীরে গ্যাস এর মাত্রা বিপুল পরিমাণে বাড়তে থাকে।
প্রতিদিনের এমন কোন কাজ আমাদের অজান্তেই শরীরের মধ্যে গ্যাসের মাত্রা বাড়াতে পারে। সেই সব কাজগুলি থেকে বিরত থাকলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, এমন কোন বিষয় গুলি প্রতিদিন আমরা অনিয়মিত করে চলেছি যেগুলোর কারণে শরীরে গ্যাসের মাত্রা বেড়ে চলেছে-
১) সকালে না খাওয়া :
সারারাত পেট খালি থাকার পর সকালে উঠে খাওয়ার অভ্যাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণণ। এইসময় ভারী কিছু খাওয়ার চেষ্টা করুন, অবশ্যই ঘুম থেকে উঠে দু গ্লাস খালি পেটে জল খাওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে দেখবেন অনেকটাই গ্যাস আপনি শরীর থেকে বার করে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
নানান কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য সকালে অনেকেই খাওয়ার কথা ভুলেই যান। আবার অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে সকালে না খাওয়াা। সারারাত খালি পেটে থাকার পর একেবারে দুপুর বেলা খাওয়া এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
কিন্তু শরীরে প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে তার থেকে, বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে শরীরে। তাই এই বিষয়টা যতটা এড়িয়ে চলবেন ততটাই আপনার শরীরের পক্ষে ভালো।
২) খাবার খাওয়ার পর স্নান করা :
প্রথাগতভাবে প্রথম থেকেই চলে আসছে স্নানের পর খাওয়া দাওয়া। অবশ্যই এই নিয়মটা শরীরের পক্ষে ভালো বলেই এতদিন ধরে চলে আসছে।
তবে খাবার গ্রহণের পরপরই স্নান করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। সে ক্ষেত্রে শরীরে গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বিপুল পরিমাণে থাকে।
তাই গরমের সময় অনেকের দিনে দুই থেকে তিনবার স্নান করার অভ্যাস থাকে। সে ক্ষেত্রে স্নান করা টা খাবার আগে করার চেষ্টা করুন। খাবার খাওয়ার পর স্নান করলে গ্যাসের সমস্যা আপনার শরীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
৩) ভরা পেটে ফল খাওয়া :
খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল, কথাটা হয়তো প্রযোজ্য তবে এক মাত্র উপায় হল খাবার খাওয়ার পরপরই ফল খেলে হজমে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা বাড়তে থাকে।
তাই যতটা সম্ভব সকালের ব্রেকফাস্ট করার পর কিছুটা সময় বাদ দিয়ে বেলা ১১ টার দিকে আপনি ফল খেতে পারেন।
অর্থাৎ খালি পেট নয়়, শরীরের শক্তি সঞ্চয় থাকবে অথচ ভরা পেটও নয়, সে ক্ষেত্রে ফল খেলে আপনার শরীরে উপকারে আসার পাশাপাশি গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
৪) অতিরিক্ত ফাস্টফুড :
এখন বাইরে বেরোলে রেস্টুরেন্ট, ছোটখাটো রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, চোখের সামনেই পরে। মুখরোচক তো বটেই তবে শরীরের বারোটা বাজে। এগুলো একটা নিয়ম করে সপ্তাহে একদিন অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
তবে প্রতিনিয়ত এই খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের সমস্যা বাড়াতে পারে অনেক গুণ। কেননা এই খাবারগুলি অস্বাস্থ্যকর ভাবে তৈরি করা হয়।
এক তেলে অনেকগুলি খাবার তৈরি করা হয়। যা আমাদের শরীরের পক্ষে মোটেই উপযুক্ত নয়। তাই অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা আজই ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
ইচ্ছা হলে মাঝেমধ্যে খেতেই পারেন, তবে প্রতিনিয়ত এই খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গ্যাসের সমস্যা কিন্তু দিন দিন বেড়েই চলবে।
৫) রাতের খাবার দেরিতে খাওয়া :
এখন তো লেট নাইট কোন ব্যাপার না, প্রতিনিয়ত বেশি রাত্রে খাওয়া তারপর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমাতে যাওয়ার মত পরিস্থিতি নয় খানিকক্ষণ জেগে থাকার পর, মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে ঘাটাঘাটির পর ঘুম আসে অনেক কষ্টে। এক্ষেত্রে কিন্তু শরীর একেবারেই এর পক্ষে কথা বলে না।
প্রথমত দেরি করে খাওয়া তারপরে সঠিক পরিমাণ পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব সবদিক দিয়ে শরীরে গ্যাস বাড়তে থাকে হু হু করে। তাই এই অভ্যাস থাকলে আপনি চাইলেই পরিবর্তন করতে পারেন।
৬) পর্যাপ্ত পরিমান জল পান না করা :
প্রাপ্তবয়স্ক একটা মানুষের শরীরে প্রতিদিন তিন লিটার জল খুব ভালোভাবে কাজ করে। প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা হয় সেগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণ জলের অভাবে হজমে সমস্যা হয়। তারপরে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে উৎপন্ন হতে থাকে গ্যাস।
গ্যাসের সমস্যা অনেক রকম ভাবে আপনার শরীর এ দেখা দিতে পারে। সেটা কত বড় আকার ধারণ করতে পারে তা ধারণারও বাইরে, মৃত্যু পর্যন্ত গড়াতে পারে গ্যাসের সমস্যা। সরাসরি হার্টে গিয়ে আক্রমণ করতে পারে। তারপরে ঘটতে পারে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা।
৭) পরিমিত শরীরচর্চার অভাব :
আগের দিনের মানুষদের বলতে শোনা যেত, “বসে বসে হজম হয়না খাবার। কাজ করার মাধ্যমে খিদেটাও বেশ চনমনে হয়ে ওঠে”। তার মানে বুঝতেই পারছেন যে, শারীরিক পরিশ্রমের পর অথবা শরীর চর্চার মাধ্যমে হজমে কতটা সুবিধা হয়। যত বেশি আপনি এক জায়গায় বসে শুয়ে থাকবেন, তত আপনার শরীরে গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে। আমাদের শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিশ্রমের পর সুস্থ থাকতে পারে অনায়াসে।
তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন, একেবারে বসে শুয়ে থাকার চেয়ে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলে মন ভালো থাকার পাশাপাশি শরীরটাও থাকবে সুস্থ, আর তাছাড়া গ্যাসের সমস্যা? সেটাও আপনি মেটাতে পারবেন নিজে থেকেই।
শরীরে গ্যাসের সমস্যা অনেক বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে দূরে থাকার জন্য অনিয়মিত জীবনযাপন থেকে সরে আসুন। শরীরের দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেয়াল রেখে, যেগুলিতে গ্যাসের সমস্যা শরীরে বাড়তে পারে, সে গুলি করা থেকে বিরত থাকুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।